দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: অতীতে নারীকর্মী সৌদি আরব যাওয়ার পর তিন মাস পর্যন্ত দায় বহন করতো রিক্রুটিং এজেন্সি। এখন থেকে নারীকর্মীরা যতদিন সৌদি আরব থাকবেন, তার দায়-দায়িত্ব সৌদি ও বাংলাদেশের রিক্রুটিং এজেন্সিকে নিতে হবে বলে জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব সেলিম রেজা। সম্প্রতি সৌদি আরবের সঙ্গে জয়েন্ট টেকনিক্যাল কমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানান তিনি।

গত ২৭ নভেম্বর সৌদি আরবের রিয়াদে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং সৌদির শ্রম ও সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে তৃতীয় জয়েন্ট টেকনিক্যাল কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়।

বাংলাদেশের পক্ষে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সেলিম রেজা এবং সৌদির পক্ষে শ্রম ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি অ্যাসিস্টেন্ট মন্ত্রী জাবের আব্দুর রহমান আল মাহমুদ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। সৌদি প্রতিনিধি দলে শ্রম মন্ত্রণালয় ছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও শ্রম সংশ্লিষ্ট কয়েকটি সংস্থার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলে রিয়াদে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

জয়েন্ট টেকনিক্যাল কমিটির সভায় নেওয়া আরও সিদ্ধান্তের মধ্যে আছে নারীকর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিতে এ সংক্রান্ত আইটি প্ল্যাটফর্ম মোসানেদে কর্মীর বিস্তারিত ঠিকানা, সৌদি ও বাংলাদেশ রিক্রুটিং এজেন্সি এবং নিয়োগকর্তার পূর্ণ যোগাযোগের ঠিকানা, নারীকর্মীর নিয়োগকর্তা পরিবর্তন সংক্রান্ত তথ্যাদি, নারীকর্মীর আগমনের তারিখ এবং নিয়োগকর্তার কাছে হস্তান্তরের তারিখ, প্রত্যাবর্তনকারী গৃহকর্মীর ‘এক্সিট’ সংক্রান্ত তথ্যাদি সন্নিবেশিত করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

ইতোমধ্যে নিয়োগকর্তা পরিবর্তন, নতুন চুক্তি নবায়ন ও এক্সিট সংক্রান্ত তথ্যাদি ছাড়া অন্যান্য তথ্যাদি হালনাগাদ করা হয়েছে এবং অবশিষ্ট তথ্যাদি হালনাগাদের কাজ চলমান রয়েছে বলে জানান সচিব। এছাড়া সৌদি কর্তৃপক্ষ মোসানেদ সিস্টেমে বাংলাদেশ দূতাবাসের একটি ‘অ্যাপ্রুভাল উইন্ডো’ স্থাপনের বিষয়টি বিবেচনা করবে।

মন্ত্রণালয় আরও জানায়, যেসব নারীকর্মী কাজ ছেড়ে পলাতক রয়েছেন, তাদের পুলিশ কোনোভাবেই নিয়োগকর্তার কাছে হস্তান্তর করবে না। নারীকর্মী যতদিন কর্মরত থাকবেন, ততদিন তার দায়-দায়িত্ব বাংলাদেশ ও সৌদি রিক্রুটিং এজেন্সি বহন করবে।

যেসব নারীকর্মী প্রত্যাবর্তনের অপেক্ষায় আছেন, তারা প্রত্যাবর্তন না করা পর্যন্ত তাদের আবাসন ও অন্যান্য দায়িত্ব রিক্রুটিং এজেন্সি বহন করবে। নারীকর্মীরা কর্মকাল পূর্ণ করলে তাদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তনের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট এজেন্সি বহন করবে এবং এ বিষয়ে বাংলাদেশ দূতাবাস ও সৌদি শ্রম মন্ত্রণালয়কে অবহিত করবে। যদি নারীকর্মী মেয়াদ শেষে কাজ করতে চান তাহলে অবশ্যই চুক্তি নবায়ন করতে হবে এবং এ নবায়ন বাংলাদেশ দূতাবাস কর্তৃক অনুমোদিত হতে হবে। চুক্তি নবায়নের পর সংশ্লিষ্ট এজেন্সি এ সংক্রান্ত তথ্যাদি মোসানেদে আপলোড করবে।

এছাড়া, কোনও বিপদগ্রস্ত নারীকর্মীর সুরক্ষার বিষয়ে গুরুতর অভিযোগ উঠলে সৌদি ডিপার্টমেন্ট অব প্রোটেকশন অ্যান্ড সাপোর্ট দ্রুত ব্যবস্থা নেবে। সংশ্লিষ্ট শ্রম কল্যাণ উইং বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে আনবেন।

বৈঠকে বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগের বিষয়ে সৌদি আরবের সঙ্গে একটি সাধারণ চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়টি আলোচিত হয়। সৌদি কর্তৃপক্ষ জানায়, এ বিষয়টি এখনও পরীক্ষাধীন রয়েছে এবং আগামী জয়েন্ট টেকনিক্যাল কমিটির সভায় এ বিষয়ে আলোচনা হবে।

আদালতে মামলা করার পদ্ধতি আরও সহজ করার বিষয়ে দু’পক্ষ একমত হয়। এ বিষয়ে সৌদি কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট দূতাবাসগুলোকে শিগগিরই জানাবে। সব কর্মী যাতে চুক্তির কপি পেতে পারেন, এ লক্ষ্যে সৌদি কর্তৃপক্ষ উদ্যোগ গ্রহণ করবে। সৌদি আরবে কর্মরত বাংলাদেশি কর্মীদের বিদ্যমান স্বাস্থ্য বীমা পর্যাপ্ত নয়। অসুস্থ কর্মীদের চিকিৎসা নিশ্চিতের লক্ষ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে স্বাস্থ্য বীমা করার জন্য সৌদি কর্তৃপক্ষ কোম্পানি/নিয়োগকর্তাদের বাধ্য করার উদ্যোগ গ্রহণ করবে বলেও মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/ডিসেম্বর ০২,২০১৯)