দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: প্রতিদিনই বাজারে আসছে নতুন পেঁয়াজ (মুড়িকাটা)। পাশাপাশি বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করে বাজারে ছাড়া হয়েছে নিত্যদিনের এ পণ্যটি। সেই সঙ্গে অব্যাহত আছে সরকারের ন্যায্যমূল্যে বিক্রি। এত কিছুর পরও দাম কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।

সোমবার খুচরা পর্যায়ে নতুন করে দাম না বাড়লেও পাইকারি পর্যায়ে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজে ১০ টাকা বেড়েছে। রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২৩০-২৪০ টাকা, আমদানি করা পেঁয়াজ ১৩০-২১০ টাকা। এছাড়া পাইকারি পর্যায়ে বিক্রি হয়েছে ১২০-২৩০ টাকা। ঢাকার বাইরের চিত্রও প্রায় একই রকম বলে জানিয়েছেন ব্যুরো ও জেলা প্রতিনিধিরা।

জানতে চাইলে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, পেঁয়াজ ইস্যুতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। কোনোভাবেই সরকার পণ্যটির দাম ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতায় আনতে পারেনি। বাজারে এখনও পণ্যটি আকাশচুম্বী দামে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া যেদিন ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করল, ঠিক সেদিন থেকে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে সব ধরনের পেঁয়াজের দাম বাড়িয়েছিল।

সেসব ব্যাবসায়ীকেও চিহ্নিত করা হয়নি। ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। তাই সরকারের উচিত, পণ্যটির সরবরাহ বাড়িয়ে দাম ভোক্তা সহনীয় করা। আর অসাধুদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা। সঙ্গে বাজার মনিটরিং জোরদার করা।

সোমবার একটি কর্মশালায় শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলেন, বিভিন্ন সেক্টরের ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে বাজারকে অশান্ত করে তুলছে। অধিক মুনাফা করার জন্য তারা জনগণকে জিম্মি করে ব্যবসা করতে চায়। তারা দেশকে অচল পরিস্থিতির সৃষ্টি করে অধিক মুনাফা করছে। বড় বড় দেশে এ প্রবণতা নেই। কিন্তু আমাদের দেশে এগুলো এখনও বিদ্যমান। একধরনের অসাধু ব্যবসায়ী এটা করছে।

এদিকে পেঁয়াজের দাম কমাতে রাজধানীর ৫০টি স্থানে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) খোলা ট্রাকে ৪৫ টাকা কেজি দরে পণ্যটি বিক্রি করছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সরকারের বিভিন্ন অধিদফতর বাজার মনিটরিং অব্যাহত রেখেছে।

সোমবার থেকে ঢাকার বাইরে বিভিন্ন অঞ্চলে টিসিবি নতুন করে ৪৫ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করেছে। তবে শেরপুর ও যশোরে টিসিবির পেঁয়াজের মান নিয়ে ক্ষোভ জানায় ভোক্তারা। এছাড়া ফেনীতে টিসিবির বিরুদ্ধে পচা পেঁয়াজ বিক্রি করে প্রতারণা করার অভিযোগ উঠেছে।

সোমবার কারওয়ান বাজার, নয়াবাজার ও রামপুরা কাঁচাবাজারের বিক্রেতারা জানিয়েছেন, এক সপ্তাহ ধরে দেশি পেঁয়াজ একই দামে (২৩০-২৪০ টাকা) বিক্রি হচ্ছে। এদিন মিয়ানমারের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২০০-২১০ টাকা। মিসরের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১৫০-১৬০ টাকা।

এছাড়া চীন থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১৩০ টাকা কেজি দরে। তাছাড়া দেশি নতুন পেঁয়াজ (মুড়িকাটা) বিক্রি হয়েছে ১১০-১২০ টাকা। আর পেঁয়াজপাতা বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১০০ টাকা দরে।

নয়াবাজারে পেঁয়াজ কিনতে আসা মো. খলিল বলেন, পেঁয়াজের দাম কবে কমবে? এই উত্তর কে দেবে? এখনও পণ্যটি কিনতে বেসামাল হয়ে পড়তে হচ্ছে। দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চাহিদা কমানোর পরও পণ্যটির দাম কমছে না। প্রথমদিকে সরকারের বাজার মনিটরিং সংস্থাগুলো তোড়জোড় দেখালেও এখন নেই। বিক্রেতারা যার যা ইচ্ছা মতো বিক্রি করছে। দেখার যেন কেউ নেই।

এদিন রাজধানীর পাইকারি আড়ত শ্যামবাজার ও কারওয়ান বাজারের বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সেখানে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২৩০ টাকা, যা একদিন আগে বিক্রি হয়েছে ২২০ টাকা। কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকা। এছাড়া মিয়ানমার ও পাকিস্তান থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ ১৭০-১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। মিসরের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১২০ টাকা।

কারওয়ান বাজারের পাইকারি পেঁয়াজ আড়তদার মো. আসরাফ বলেন, বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে। তবুও চাহিদা অনুযায়ী পাওয়া যাচ্ছে না। আর পাওয়া গেলেও বেশি দরে আনতে হচ্ছে। এছাড়া বাজারে দেশি পেঁয়াজ শেষের দিকে। যে কারণে পাইকারিতে দাম বাড়ছে।

তিনি আরও বলেন, এটা ঠিক, দেশে এখন পেঁয়াজের সংকট রয়েছে। তবে এই সংকটকে কেন্দ্র করে যারা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করেছে, তারা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে গেছে।

নড়াইল প্রতিনিধি জানান, নড়াইলে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৪৫ টাকা মূল্যে বিক্রি শুরু করেছে টিসিবি। নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি মুর্তজা সোমবার নড়াইল জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরে খোলা ট্রাকে এ পেঁয়াজ বিক্রির উদ্বোধন করেন। প্রতিদিন এক টন পেঁয়াজ বিক্রি করা হবে। আর একজন ভোক্তা এক কেজি করে পেঁয়াজ কিনতে পারবেন।

শেরপুর প্রতিনিধি জানান, দুইদিন ধরে টিসিবি শেরপুরে খোলাবাজারে ৪৫ টাকা দরে পেঁয়াজ বিক্রি করছে। শেরপুর ডিসি উদ্যানে বিক্রির সময় এই দুইদিন ধরে সব শ্রেণির ক্রেতা পেঁয়াজ কেনার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়েন।

এ সময় পেঁয়াজ ক্রেতাদের সামলাতে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারী, পুলিশ ও টিসিবির লোকজনকে হিমশিম খেতে হয়েছে। তবে হুড়াহুড়ি করে পেঁয়াজ কেনার পর পচা পাওয়ায় ক্রেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এছাড়া খোলাবাজারে দুই হাজার কেজি করে পেঁয়াজ বিক্রি করবে বলে টিসিবির ডিলার জানিয়েছেন। আর একজন ক্রেতার কাছে ৪৫ টাকা দরে দুই কেজি করে পেঁয়াজ বিক্রি করা হচ্ছে।

চুনারুঘাট (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, হবিগঞ্জের চুনারুঘাট সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় পেঁয়াজ চোরাইভাবে দেশে প্রবেশ করলেও সুবিধা পাচ্ছেন না ক্রেতারা। ক্রেতারা পেঁয়াজ ক্রয় করছেন ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়। এ অবস্থায় চুনারুঘাটে পেঁয়াজের দাম এখনও আকাশচুম্বী। ফলে ক্রেতারা দিশেহারা হয়ে পড়ছেন। অথচ প্রতিদিন ভারতীয় পেঁয়াজ সীমান্তের ৪টি ঘাট দিয়ে দেশে প্রবেশ করছে। সেখান থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হচ্ছে এসব পেঁয়াজ।

যশোর ব্যুরো জানায়, যশোরে ৪৫ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করেছে টিসিবি। সোমবার যশোর দড়াটানা ভৈরব চত্বরে ট্রাকে করে পেঁয়াজ বিক্রি করা হয়। প্রথমদিনেই ৪৫ টাকায় পেঁয়াজ কিনতে ক্রেতাদের দীর্ঘ লাইন পড়ে যায়। পেঁয়াজ কিনতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়েছে ভোক্তাদের। তবে সাশ্রয়ী মূল্যে এই পেঁয়াজের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ক্রেতারা।

ফেনী প্রতিনিধি জানান, ফেনীতে খোলাবাজারে ন্যায্যমূল্যে পেঁয়াজ বিক্রির নামে প্রতারণা করার অভিযোগ করেছেন ভোক্তারা। সোমবার দুপুর থেকে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান টিসিবির পেঁয়াজ কেনার জন্য ফেনী শহীদ মিনার ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে ক্রেতাদের ঢল নামে।

২ থেকে ৩ ঘণ্টা রোদের মধ্যে লাইনে দাঁড়িয়ে এক কেজি পেঁয়াজ কিনতে পারছেন ক্রেতারা। ক্রেতাদের অভিযোগ, এক কেজি পেঁয়াজের অর্ধেকই আবার নষ্ট ও পচা। সেখানে টিসিবির পেঁয়াজ কেনা রোকসানা আক্তার ও সুক্কুল আলী নামে দুই ক্রেতা জানান, তাদের এক কেজি পেঁয়াজের মধ্যে বড় সাইজের ৪/৫টি করে পেঁয়াজই পচা দেওয়া হয়েছে।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/ডিসেম্বর ০৩,২০১৯)