প্রবাসী প্রতিবেদক, দ্য রিপোর্ট , আটলান্টা, উত্তর আমেরিকা থেকে : সুদূর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে জর্জিয়া বিএনপির কাউন্সিল। জর্জিয়ার রাজধানী আটলান্টায় ৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত এই কাউন্সিলকে ঘিরে যেমন রয়েছে আনন্দ উৎসব মুখর পরিবেশ, তেমনি রয়েছে উত্তেজনা ও বিভক্তি । 

বিএনপির এই কাউন্সিলকে ঘিরে দেখা দিয়েছে বিভক্তি। বর্তমান সভাপতি নাহিদুল খান সাহেল ছাড়া অন্য কোনো প্রার্থী এই পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করায় তার পুনরায় নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত। তবে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ রহমান আজাদ কাউন্সিল বর্জন করায় দেখা দিয়েছে বিভক্তি। তিনি এই কাউন্সিলকে একাংশের কাউন্সিল বলে দাবি করে তা বর্জন করেছেন। একই সঙ্গেমোহাম্মদ রহমান আজাদের সমর্থকরা পৃথক কমিটি করার ঘোষনা দিয়েছেন।

১০৫ কাউন্সিলরের ভোট প্রদানের মাধ্যমে গঠিত হবে নতুন কমিটি। কাউন্সিলে অংশগ্রহণের জন্য লণ্ডন থেকে আটলান্টা পৌঁছাবেন বিএনপির সহ আন্তজার্তিক বিষয়ক সম্পাদক ও উত্তর আমেরকিার সাংগঠনিকের দায়িত্বপ্রাপ্ত আনোয়ার হোসেন খোকন।

২০১৪ সালের এপ্রিলে অনুষ্ঠিত কাউন্সিলে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন শাকুর মিন্টু ও সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন মোহাম্মদ রহমান আজাদ।সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ রহমান আজাদের বাড়িতে২০১৫ সালের ২২ ডিসেম্বর এক ঘরোয়া সভায় আমন্ত্রিত হয়ে আসেন বিএনপির আন্তজার্তিক বিষয়ক সম্পাদক এহসানুল হক মিলন। ঘরোয়া ওই বৈঠক থেকেকমিটির সভাপতি শাকুর মিন্টুকে সভাপতির দায়িত্ব থেকে সরিয়ে প্রধান উপদেষ্টা করা হয়। আর সভাপতি হিসেবে মনোনিত হন নাহিদুল খান সাহেল।

সাহেলের সভাপতিত্বের মেয়াদের চার বছর পূর্তিতে আবার অনুষ্ঠিতব্য এই কাউন্সিলকে ঘিরে বিভক্তি দেখা দেওয়ার অনেক নেতা কর্মিই হতাশ।

এ বছর ২৩ অক্টোবর অনুষ্ঠিত নির্বাহী কমিটির সভা থেকে এ কাউন্সিলের দিন ধার্য় করা হয়। এই কাউন্সিলদের ভোট গ্রহণের জন্য গঠিত নির্বাচন কমিশনারের প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন জর্জিয়া বিএনপির প্রধান উপদেষ্টা ও সাবেক সভাপতি আলহাজ্ব শাকুর মিন্টু। মনোনয়ন পত্র দাখিলের শেষ দিন ছিলো ২৯ নভেম্বর। এদিনের মধ্যে সভাপতি পদে মনোনয়নপত্র জমা দেন নাহিদুল খান সাহেল। সাধারণ সম্পাদক পদে মনোনয়নপত্র জমা দেন সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্বপালনরত মো. মামুন শরীফ। তবে মনোনয়নপত্র জমা দেননি বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ রহমান আজাদ। বর্তমান সভাপতির স্বৈরতান্ত্রিক আচরণের প্রতিবাদে মনোনয়ন জমা দেননি বলে দাবি করেন রহমান আজাদ।

সভাপতি নাহিদুল খান সাহেল দ্য রিপোর্টকে গতকাল জানান, সর্বসম্মতি সিদ্ধান্তে গঠিত নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে এই ভোট গ্রহণ হবে। মনোনয়ন পত্র দাখিলের শেষ দিনে সভাপতি পদে আমি বাদে অন্য কেউ প্রার্থীতা দেন নি। একই ভাবে সাধারণ সম্পাদক পদে একমাত্র মনোনয়ন জমা দিয়েছেন মামুন শরীফ। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে কোনো প্রার্থী না থাকায় একপেশে কাউন্সিল হয়ে যাচ্ছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সব কিছুই বিএনপির গঠনতন্ত্রের নিয়ম মেনে হচ্ছে। কেউ যদি না আসে তবে তো কিছু করার নেই। তারপরও আমরা আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি রহমান আজাদকে কোনো ভাবে এই কমিটিতে রাখা যায় কিনা। আমার ইচ্ছা আমেরিকার মতো গণতান্ত্রিক দেশে বিএনপির কমিটি হবে শতভাগ গণতান্ত্রিক। শেখ হাসিনা যেভাবে অগণতান্ত্রিক পথে ক্ষমতায় এসেছেন বিএনপি তার প্রতিবাদ করেছে। আমেরিকায় গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া কমিটি গঠন করে আমরা তার জবাব দিবো। বর্তমান সাধারণ সম্পাদক রহমান আজাদ কেন মনোনয়ন পত্র জমা দেন নি জানতে চাইলে তিনি দ্য রিপোর্টকে বলেন,হয়তো তিনি আন কনটেস্টে নির্বাচিত হতে চেয়েছিলেন।

এদিকে এই কাউন্সিলকে জর্জিয়া বিএনপির একাংশের কাউন্সিল বলে অভিহিত করে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ রহমান আজাদ গতকাল রাতে দ্য রিপোর্টকে বলেন, এটা সভাপতির মনগড়া কমিটি। এটা জর্জিয়া বিএনপির একাংশের কমিটি। যে ১০৫ জনকে ভোটার বানানো হয়েছে সেখানে আমার কোনো স্বাক্ষর নেই। শুধুমাত্র সভাপতির স্বাক্ষরিত কাউন্সিলরদের নিয়ে এই কমিটি করার উদ্যেগ নেওয়া হয়েছে। সেটাও করা হয়েছে কাউন্সিলের জন্য গঠিত নির্বাচন কমিশন গঠনের পরে। আমার অগোচরে,যা গঠনতন্ত্র পরিপন্থী। নির্বাচন কমিশনারকে প্রভাবিত করে এই ভোটার করা হয়েছে, যেখানে আওয়ামী লীগের অনেক কর্মী রয়েছেন। এছাড়া এমন কিছু ব্যক্তি রয়েছেন যাদের কারণে আটলান্টা বিএনপির ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। এ সবের প্রতিবাদ করায় সভাপতি সাহেল সাহেব নিজের অনুগ্রহভাজন ১০/১২ জনকে নিয়ে পকেট কমিটি করার উদ্যোগ নিয়েছেন। শেখ হাসিনা যেমনে আগের রাতে ভোট কেটে নিয়ে ক্ষমতায় এসেছেন নাহিদুল খান সাহেল সাহেবও তেমনি বিএনপির এই কাউন্সিলকে রাতের আঁধারে কব্জা করে নিতে চাইছেন। এটা আমরা হতে দেবো না।

বিএনপির সিনিয়র সদস্য মোহন জব্বার দ্য রিপোর্টকে বলেন, বর্তমান সভাপতি নাহিদুল খান সাহেল জর্জিয়া বিএনপির সভাপতি হওয়ার আগে বিএনপির কোনো কমিটিতে ছিলেন না। নির্বাচিত সভাপতি শাকুর মিন্টুকে প্রলোভন দেখিয়ে২০১৫ সালের ডিসেম্বরেপ্রধান উপদেষ্টা করা হয়। পরিবর্তেজর্জিয়া বিএনপিরসভাপতি হন নাহিদুল খান সাহেল। এখন সেই অনির্বাচিত সভাপতি সাহেল নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক আজাদকে বাদ দিয়ে কমিটি করার উদ্যেগ নিয়েছেন। এখন আজাদের সমর্থকরা যদি পাল্টা কমিটি গঠন করেন তবে যে বিভক্তি তৈরি হবে তা সহজে দূর হবে না। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বিএনপি। এর দায় সাহেল সাহেবকেই বহন করতে হবে।

(দ্য রিপোর্ট/ টিআইএম/ ৬ ডিসেম্বর,২০১৯)