দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের প্রতি আসরেই দেখা যায় এমন চিত্র। টুর্নামেন্ট যতোই শেষের দিকে যেতে থাকে, ততই জমতে থাকে মাঠের খেলা। ব্যতিক্রম নয় এবারের বঙ্গবন্ধু বিপিএলেও। আসরের শেষদিকে এসে যেনো মাঠের খেলা আরো উত্তেজনাপূর্ণ করে তুলেছে অংশগ্রহণকারী দলগুলো।

যার সবশেষ উদাহরণ রাউন্ড রবিন লিগের শেষ ম্যাচটি। যেখানে ঢাকা প্লাটুনের বিপক্ষে রীতিমতো বিপিএল ইতিহাসের রেকর্ড গড়েই জয় তুলে নিয়েছে খুলনা টাইগার্স। আগে ব্যাট করে ঢাকা প্লাটুন দাঁড় করিয়েছিল ২০৫ রানের বিশাল সংগ্রহ। কিন্তু এত বড় লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে একদমই ভড়কায়নি খুলনা। জয়ের বন্দরে পৌঁছে গিয়েছে ১১ বল হাতে রেখেই।

খুলনার এমন সহজ জয়ের মূল কৃতিত্ব বাঁহাতি ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্তর। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে নিজের প্রথম সেঞ্চুরিতে দলকে ৮ উইকেটের দুর্দান্ত এক জয় এনে দিয়েছেন শান্ত। বিপিএল ইতিহাসে বাংলাদেশিদের মধ্যে পঞ্চম এবং চলতি আসরে সবমিলিয়ে মাত্র তৃতীয় সেঞ্চুরি এটি।

শান্তর ৫৭ বলে ১১৫ রানের অপরাজিত ইনিংসে ভর করে টুর্নামেন্টের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড গড়লো খুলনা। এর আগে বিপিএলে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ডটি ছিলো সিলেট রয়্যালসের দখলে। ২০১৩ সালের আসরে রংপুর রাইডার্সের করা ১৯৭ রানের জবাবে ৬ উইকেটে জয় পেয়েছিল সিলেট। সেই রেকর্ড এবার নিজেদের করে নিলো খুলনা।

এ জয়ের সুবাদে প্রথম পর্বের ১২ ম্যাচ শেষে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে থেকেই প্লে-অফে নাম লেখালো খুলনা। তাদের সমান ১৬ পয়েন্ট রয়েছে রাজশাহী রয়্যালস ও চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সেরও। তবে নেট রানরেটের কারণে দ্বিতীয়তে রাজশাহী এবং চট্টগ্রাম রয়েছে তৃতীয়তে। আর ১৪ পয়েন্ট পাওয়া ঢাকা শেষ চারে গেলো চতুর্থ অবস্থানে থেকেই।

আজকের ম্যাচের প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরির খুব কাছে গিয়েও ৯১ রানে আউট হয়েছিলেন মুমিনুল হক। মেহেদি হাসান খেলেন ৩৬ বলে ৬৮ রানের অপরাজিত ইনিংস। যার সুবাদে ঢাকা পায় ২০৫ রানের বড় সংগ্রহ। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে এত বড় সংগ্রহকেও মামুলি করে তুলেছেন শান্ত-মিরাজরা। চলতি আসরে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত সংগ্রহের ইনিংসটি খেলে স্বাভাবিকভাবেই ম্যাচসেরার পুরষ্কারও জিতেছেন শান্ত।

রান তাড়া করতে নেমে নিজেদের ইনিংসের শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক খেলতে শুরু করেন খুলনার ওপেনার মেহেদি হাসান মিরাজ। যতক্ষণ মিরাজ ব্যাট করেছেন, তখন খানিক রয়েসয়েই খেলেন শান্ত। সপ্তম ওভারে দলীয় ৭০ রানে আউট হওয়ার আগে মাত্র ২৫ বলে ৭ চার ও ১ ছয়ের মারে ৪৫ রান করে যান মিরাজ।

উদ্বোধনী জুটিতে দ্রুত ৭০ রান পাওয়ার পর দ্বিতীয় উইকেটে রাইলি রুশোকে পেয়ে যেন আরও তেতে ওঠেন শান্ত। ঢাকার প্রত্যেক বোলারকে তুলোধুনো করতে শুরু করেন একের পর এক। শাদাব খান, হাসান মাহমুদ ও থিসারা পেরেরারা রীতিমতো অসহায় হয়ে পড়েন শান্তর ব্যাটিংয়ের সামনে।

প্রথম ১৩ বলে মাত্র ১৫ রান করা শান্ত ব্যক্তিগত ফিফটি তুলে নেন ২৭ বলে। বিপিএল ক্যারিয়ারে এটি তার মাত্র দ্বিতীয় ফিফটি। এর আগে বিপিএলে নিজের অভিষেক ম্যাচেই ৫৪ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছিলেন শান্ত। তবে দ্বিতীয় ফিফটিকে খানিক পরেই সেঞ্চুরিতে রূপ দেন এ বাঁহাতি ওপেনার।

প্রথম ৫০ করতে ২৭ বল খেললেও পরেরটি করতে মাত্র ২৪ বল লাগে শান্তর। ৫১ বলে ৭ চার ও ৬ ছয়ের মারে তুলে নেন টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি। এরপরেও থামেননি তিনি। রাইলি রুশো ১৭ বলে ২৩ রান করে আউট হলেও অধিনায়ক মুশফিককে সঙ্গে দলকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়েন শান্ত।

শেষপর্যন্ত ৮ চার ও ৭ ছয়ের মারে মাত্র ৫৭ বলে ১১৫ রান করে অপরাজিত থাকেন শান্ত। মুশফিক খেলেন ৩ চারের মারে ১০ বলে ১৮ রানের কার্যকরী ইনিংস।

এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নামা ঢাকার শুরুটা ছিল ধীরগতিতে। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে এসে তামিম ইকবাল (১) যখন রবি ফ্রাইলিংকের শিকার হলেন ঢাকার তখন ১ রানে ১ উইকেট। এরপর দলীয় ১৩ রানের মাথায় দ্বিতীয় উইকেটও হারিয়ে বসে দলটি। এবার ফ্রাইলিংকের বলে সাজঘরে এনামুল হক বিজয় (১০)।

চার নম্বরে নেমে চালিয়ে খেলছিলেন জাকের আলি। ৭ বলেই ১টি করে চার-ছক্কায় ১৪ রানে পৌঁছে যাওয়া এই ব্যাটসম্যান শফিউল ইসলামকে তুলে মারতে গিয়ে হন ফিরতি ক্যাচ।

পরের সময়টা শুধুই মুমিনুল আর মেহেদীর। চতুর্থ উইকেটে ১৩.২ ওভারে সাড়ে ১১ রানরেটে ১৫৩ রানের বিধ্বংসী এক জুটি গড়েছেন এই যুগল। শেষ পর্যন্ত এই জুটিটা ভাঙে ১৯তম ওভারে মুমিনুল ফ্রাইলিংকের শিকার হলে।

ধীরগতিতে শুরু করা মুমিনুল ৪১ বলে হাফসেঞ্চুরি পূরণ করার পরই আগ্রাসী রূপ নিয়েছেন। পৌঁছে গিয়েছিলেন সেঞ্চুরির দ্বারপ্রান্তে। হয়নি। ৫৯ বলে ৭ চার আর ৪ ছক্কায় বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যানের চোখ ধাঁধানো ইনিংসটি থামে ৯১ রানে। এটিই বিপিএলে তার সর্বোচ্চ সংগ্রহ। এর আগে ২০১৬ সালের বিপিএলে করা ৬৪ রানই ছিল এতদিন মুমিনুলের সেরা ইনিংস।

মুমিনুল ফেরার পরও তাণ্ডব চালিয়েই গেছেন ৩১ বলে ফিফটি তুলে নেয়া মেহেদী হাসান। এবারের বিপিএলে ব্যাটিং অর্ডারে প্রমোশন পেয়ে সবাইকে চমকে দেয়া এই ব্যাটসম্যান শেষ পর্যন্ত ৩৬ বলে ৩ বাউন্ডারি আর ৫ ছক্কায় অপরাজিত থাকেন ৬৮ রানে।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/জানুয়ারি ১২,২০২০)