দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: কিশোরীকে দল বেঁধে ধর্ষণের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লাইভে এসে ধর্ষকরা জানান দেয়- ‘হ্যালো ফ্রেন্ডস, আমরা আগামীকাল হয়তো জেলে থাকতে পারি। না হয় বাড়ির আশপাশে থাকতে পারব না। আমি আর শরীফ দুজনের একজনকে বিয়ে করতে হবে হয়তো!’

গত ১৫ জানুয়ারি গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার নয়নপুর এলাকায় বন্ধুর জন্মদিনের অনুষ্ঠানে এনার্জি ড্রিংকসের সঙ্গে নেশাজাতীয় দ্রব্য মিশিয়ে কিশোরীকে অজ্ঞান করে পালাক্রমে ধর্ষণ করে চার বন্ধু।

কিশোরীকে দল বেঁধে ধর্ষণের পর ওই চার বন্ধু একটি সেলুনে বসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও আপলোড করে। ভিডিওতে তাদের উল্লাস করতে দেখা যায়।

এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ধর্ষকদের উল্লাসের ভিডিও দেখে উদ্বেগ জানিয়ে গাজীপুর বারের আইনজীবী আসাদুল্লাহ বাদল বলেন, সামাজিক অবক্ষয়ের বড় একটি চিত্র এখানে ফুটে উঠেছে।

তিনি বলেন, এখানে ধর্ষকরা দুই ধরনের অপরাধ করেছে। দল বেঁধে ধর্ষণের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও ছড়িয়ে দেয়া এক ধরনের অপরাধ। ফেসবুকে ভিডিও প্রচারের জন্য ধর্ষকদের বিরুদ্ধে আলাদা মামলা করা যেত। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তা করা হয়নি। এজন্য অভিভাবকসহ স্বজনদের আরো সচেতন হওয়া জরুরি।

এদিকে ছেলে সুজনকে আটকের খবরে বাবা লিটন মিয়া বিভিন্ন ধরনের হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন মামলার বাদী কিশোরীর মা।

তিনি বলেন, ঘটনার পরপরই মামলা না করতে আমাদের বাধা দেয়া হয়েছিল। এখন মামলার আসামি আটকের পরও আমাদের হুমকি দিচ্ছে। বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করেছি।

এ বিষয়ে শ্রীপুর থানা পুলিশের উপপরিদর্শক নাজমুল সাকিব বলেন, হুমকির বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। কিশোরীর পরিবারকে নিরাপত্তা দিতে আমরা কাজ করছি।

এর আগে শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) রাতে গাজীপুর মহানগরীর রাজবাড়ী ও ময়মনসিংহের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে এ ঘটনায় জড়িত চারজনকে আটক করে র‌্যাব-১।

শনিবার (২৫ জানুয়ারি) সকালে র‌্যাব-১ পোড়াবাড়ী ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল মামুন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান।

আটকরা হলো, কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর থানার নৈয়পুরা গ্রামের সোহরাব উদ্দিনের ছেলে মামলার এজাহারভুক্ত আসামি শরীফ হোসেন, ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ থানার উজান চন্দ্রপাড়া গ্রামের লিটন মিয়ার ছেলে ইমরান হাসান সুজন, শ্রীপুর উপজেলার নয়নপুর গ্রামের সাবাজ উদ্দিন মোল্লার ছেলে শরিফ উদ্দিন মোল্লা ও ধর্ষণের পরিকল্পনাকারী ১৬ বছর বয়সী এক যুবক।

আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে র‍্যাবের কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ১৫ জানুয়ারি বিকালে ওই চার বন্ধু জন্মদিনের কথা বলে নয়নপুর এলাকার একটি বাসায় ওই কিশোরীকে ডেকে নিয়ে যায় ও জন্মদিনের কেক কেটে সবাই মিলে আনন্দ উল্লাস করে।

জন্মদিন অনুষ্ঠানের একপর্যায়ে আসামিরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে এনার্জি ড্রিংকসের সঙ্গে নেশাজাতীয় দ্রব্য মিশিয়ে পান করিয়ে কিশোরীকে অজ্ঞান করে। পরে কিশোরীর হাত, পা ও মুখ বেঁধে পালাক্রমে ধর্ষণ করে তারা। মামলার ২নং আসামি ইমরান হাসান সুজন তার মোবাইল ফোনে ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করে। পরে ফেসবুকে ভিডিও আপলোড করে দল বেঁধে ধর্ষণের কথা স্বীকার করে আসামিরা।

বিষয়টি কিশোরীর পরিবার অন্যদের কাছে প্রকাশ করতে গেলে ধর্ষণকারীরা ভয়ভীতি ও বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেয়। এ অবস্থায় ১৬ জানুয়ারি কিশোরীর মা বাদী হয়ে শ্রীপুর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। পরে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/জানুয়ারি ২৬,২০২০)