দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: বদলে গেছে বাংলা বর্ষপঞ্জি। নতুন সংশোধিত বর্ষপঞ্জিতে পয়লা ফাল্গুন অর্থাৎ বসন্তের প্রথম দিনেই হচ্ছে ভালোবাসা দিবস। ইংরেজি বর্ষপঞ্জির ১৪ ফেব্রুয়ারি দিনটিকে ভালোবাসা দিবস হিসেবে পালন করা হয় সারা বিশ্বে, আর বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী বসন্তের প্রথম দিন অর্থাৎ পয়লা ফাল্গুন ছিল ১৩ ফেব্রুয়ারি।

কিন্তু বাংলা বর্ষপঞ্জি সংশোধনের পর একই দিনে পড়ছে বসন্ত উৎসব আর ভালোবাসা দিবস। শুধু এই দিন নয়, ১৯৭১ সালের কয়েকটি ঐতিহাসিক দিনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তৈরি করা হয়েছে নতুন বাংলা বর্ষপঞ্জি। যার ফলে ইংরেজি দিন ঠিক থাকলেও কিছুটা এদিক সেদিক হয়েছে বাংলা মাসের তারিখ। নতুন এই বর্ষপঞ্জিতে জাতীয় দিবসের বাংলা তারিখ এখন থেকে একই থাকবে প্রতিবছর।

গত বছরের ২৮ অক্টোবর মন্ত্রিপরিষদের সভায় ২০২০ সালের সরকারি ছুটির তালিকার অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর ৩০ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ছুটির তালিকা প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসসহ কয়েকটি জাতীয় দিবসের বাংলা তারিখে পরিবর্তন এসেছে।

বাংলা একাডেমি সূত্রে জানা যায়, বাংলা বর্ষপঞ্জি সংস্কারের কাজ প্রথম শুরু হয়েছিল ভারতে ১৯৫২ সালে। স্বনামধন্য জ্যোতির্বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহাকে প্রধান করে ভারতের সরকার একটি পঞ্জিকা সংস্কার কমিটি করেছিল। তার আগে কেবল চান্দ্র হিসাব ধরে বাংলা বর্ষপঞ্জি করা হতো। মেঘনাদ সাহার ওই কমিটি জ্যোতির্বিজ্ঞানের আলোকে বাংলা বর্ষপঞ্জি সংস্কারের সুপারিশ করেন এবং তা গৃহীত হয়। পরে ১৯৫৬ সালে ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ বর্ষপঞ্জি সংস্কারের কিছু সুপারিশ সরকারের কাছে করেন। নতুন বর্ষপঞ্জি তারই আলোকে করা হয়েছে।

বাংলা বর্ষপঞ্জি সংশোধনের কাজ করেছে বাংলা একাডেমির গবেষণা, সংকলন এবং অভিধান ও বিশ্বকোষ বিভাগ। এই বিভাগের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সংশোধিত বর্ষপঞ্জিতে বৈশাখ থেকে আশ্বিন পর্যন্ত প্রথম ছয় মাস ৩১ দিন, কার্তিক থেকে মাঘ মাস ৩০ দিন এবং ফাল্গুন মাস ২৯ দিন ধরে গণনা করা হবে। তবে গ্রেগরীয় পঞ্জিকার অধিবর্ষে (লিপ ইয়ার) ফাল্গুন মাস ২৯ দিনের পরিবর্তে ৩০ দিন গণনা করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তাই সেভাবেই সাজানো হয়েছে নতুন বাংলা বর্ষপঞ্জি।

বাংলা একাডেমি জানায়, বাংলাদেশের ঐতিহাসিক দিনগুলো, যেমন- ২১ ফেব্রুয়ারি, ২৬ মার্চ, ১৬ ডিসেম্বরসহ নজরুল জন্মজয়ন্তী ও রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীর বাংলা তারিখ সংশোধন করা হয়েছে। পঞ্জিকার এই সংশোধনের ফলে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস একুশে ফেব্রুয়ারির প্রতিসঙ্গী বাংলা তারিখ হবে ৮ ফাল্গুন, যা ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতেও ছিল ৮ ফাল্গুন। স্বাধীনতা দিবস ২৬ মার্চের প্রতিসঙ্গী তারিখ হবে ১২ চৈত্র, যা ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসেও বাংলা তারিখ ছিল ১২ চৈত্র। একইভাবে নজরুল জন্মজয়ন্তী ২৫ মে’র প্রতিসঙ্গী তারিখ ছিল ১১ জ্যৈষ্ঠ ও বিজয় দিবস ১৬ ডিসেম্বরের প্রতিসঙ্গী বাংলা তারিখ ছিল পহেলা পৌষ। এসব দিবসে বাংলা ও ইংরেজি তারিখের মিল রেখে সংশোধন করা হয়েছে বাংলা বর্ষপঞ্জি। বাংলা একাডেমির সংশোধিত এই বর্ষপঞ্জিকা অনুসারে আগের মতোই ১৪ এপ্রিল থেকেই বাংলা বর্ষ গণনা শুরু হবে। অর্থাৎ ১৪ এপ্রিল পয়লা বৈশাখ ঠিক থাকছে।

বাংলা একাডেমি সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালে বাংলা বর্ষপঞ্জি সংশোধন করতে কমিটি গঠন করে বাংলা একাডেমি। সংশোধিত বর্ষপঞ্জি ২০১৭ সাল থেকে চালু করার জন্য সুপারিশ করে ওই বছরই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। সংশোধনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির দিন বাংলা ফাল্গুন মাসের ৮ তারিখ ছিল। কিন্তু চলমান বাংলা বর্ষপঞ্জিতে ৯ তারিখ পালন করা হচ্ছিল। একইভাবে বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস, রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী, নজরুল জন্মজয়ন্তী ইংরেজি তারিখের সঙ্গে প্রতিসঙ্গী বাংলা তারিখ ঠিক ছিল না। এ বিষয়টি ঠিক করতেই বাংলা বর্ষপঞ্জি সংশোধন করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলা একাডেমির গবেষণা,সংকলন এবং অভিধান ও বিশ্বকোষ বিভাগের পরিচালক মোবারক হোসেন বলেন, আমাদের জাতীয় দিবসগুলো, যেমন- ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ, ১৬ ডিসেম্বর দিনটিতে বাংলা যে তারিখ ছিল, সেই তারিখে স্থির করার জন্য বাংলা বর্ষপঞ্জিতে এই সংশোধন আনা হয়েছে। এর পাশাপাশি রবীন্দ্রজয়ন্তী, নজরুলজয়ন্তীর দিনগুলোকেও একটি জায়গায় স্থির করা হয়েছে। এই দিনগুলোকে ঠিক রাখার জন্যই মূলত বর্ষপঞ্জি সংস্কার করা হয়েছে। গত বছরের ক্যালেন্ডারে দ্বিতীয় ছয় মাসে এই পরিবর্তনগুলো এসেছিল। ওই সংস্কারের ফলেই আমরা এই জায়গায় যেতে পেরেছি। এখন থেকে প্রতিবছরই ৮ ফাল্গুন হবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহীদ দিবস। সেই হিসাব করেই আমাদের যারা ছিল সবাই মিলে বর্ষপঞ্জি সংস্কার করেছেন।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/ফেব্রুয়ারি ১০,২০২০)