দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: কাঁধে একটি ব্যাগ আর হাতে দুটো নিয়ে বাসে ঝুলছিলেন মনিরুল ইসলাম। তার চোখেমুখে উদ্বেগ। জানতে চাইলে বললেন, ‘বাড়িত যায়াম। গাড়ি তো দেখি বন্ধ কইতাছে। এহন চিন্তায় আছি কেমনে যায়াম।’

তার সঙ্গে কথা হচ্ছিল গতকাল রাতে। আজমেরি পরিবহনের একটি বাসে বসে। তার বাড়ি ময়মনসিংহের ত্রিশালে। গাড়ি বন্ধ থাকলে কীভাবে যাবেন, জানতে চাইলে মনিরুল বলেন, ‘আঙ্গর এক লোক আছে মহাখালী। হেয় কইলো একটা ব্যবস্থা নাকি করবো। হের অনো যাই।’

তারপর নিজে থেকেই আবার বললেন, ‘মহাজনে দেরি কইরা দিছে। টেহা দিতে দেরি করছে। নইলে তো কুব্বালা বাইর হইতাম।’

মনিরুল জানান, তিনি যাত্রাবাড়িতে একটি ওয়ার্কশপে কাজ করেন। পাঁচ দিনের ছুটি পেয়েছেন। তাই বাড়ি যাচ্ছেন।

কী কারণে ছুটি দেওয়া হয়েছে? জানতে চাইলে বলেন, ‘করুনা না কী বলে আইতাছে। হের লাইগা।’

মনিরুলের মতো এমন অনেকেই কাল পথে নেমেছিলেন গ্রামের বাড়ি যাবেন বলে। দূরপাল্লার গাড়ি চলাচল কিছুটা সীমিত করে আনা হয়েছিল। তবে একেবারে বন্ধ হয়নি। রাত দশটার দিকেও মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে কিছু বাস ছাড়তে দেখা গেছে। এছাড়া বাসের জন্য পথে পথে মানুষের দীর্ঘ অপেক্ষাও চোখে পড়েছে। যারা গাড়ি পাননি তারা ব্যক্তিগত পর্যায়ে কয়েকজন মিলে গাড়ি ভাড়া করে গ্রামের বাড়ির দিকে রওনা হয়েছেন।

করোনা সংক্রামণ ঠেকাতে ঘরে থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। সেই সুবাদেই সরকারি- বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আগামীকাল থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত লম্বা ছুটিতে যাচ্ছে। অথচ এই ছুটিকে বাড়তি পাওনা ভেবে মানুষ ছুটছে বাড়ির পথে।

গতকাল রাতে যারা বাড়ি ফিরতে পারেননি, তারা আজও ভোর থেকে পথে নেমেছেন। আজও তারা চেষ্টা করছেন বাড়ি ফেরার। ওদিকে সারা দেশের সঙ্গে রেল যোগাযোগ বন্ধ করা হয়েছে গতকাল সন্ধ্যা থেকেই। যে কারণে সড়ক পথে মানুষের চাপ বেড়েছে। ওদিকে নৌপথেও যাতায়াত বন্ধ আছে।

মহাখালী বাস টার্মিনাল, সায়েদাবাদ এবং গাবতলীতে বাস টার্মিনালে সকাল থেকেই ঘরমুখো মানুষের ভিড় ছিল। অনেকে আবার গতকাল রাত থেকেই বাসস্ট্যান্ডে বসে ছিলেন। তারা আর ফিরে যাননি। আবার কেউ কেউ গাড়ি বন্ধ হয়ে গেছে, আর কোনো আশা নেই জেনে হতাশ হয়ে ঘরে ফিরে যাচ্ছেন।

মানুষের এই ঘরে ফেরার মিছিল দেখে নতুন করে শঙ্কার তৈরি হয়েছে। করোনাভাইরাস প্রতিরোধের যে চিন্তা থেকে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল, তা কাজে আসবে না বলেও মত দিচ্ছেন অনেকে। কারণ এই বিপুল মানুষের মধ্যে যদি কারো শরীরে করোনার জীবাণু থাকে তার মাধ্যমে অন্যদের মধ্যে সহজেই তা ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ছুটি ঘোষণার আগে সারা দেশের জন্য পরিবহন যোগাযোগ সীমিত করে আনা প্রয়োজন ছিল। অথবা চাইলে এখনবার মতো বন্ধও করা যেতো। তা না করে আগাম ছুটি ঘোষণার ফলে অনেকে বাড়তি দুদিনের ছুটি নিয়ে বাড়ির পথে রওনা হয়েছেন। এতে দেশের বিভিন্ন এলাকায় করোনা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

পরিবার পরিজন নিয়ে বাড়ি ফিরছেন ওয়াহিদুর রহমান। তিনি একটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেন। করোনার ঝুঁকি মাথায় নিয়ে কেন ঢাকার বাইরে যাচ্ছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘শুনলাম ঢাকায় নাকি সংক্রামণ বেশি। তাই গ্রামে যাচ্ছি।’দীর্ঘ এই মানুষের ভিড়ে যদি কেউ করোনা আক্রান্ত হন, তাহলে তার মাধ্যমেও তো আপনাদের দেহে ছড়াতে পারে? এমন শঙ্কার বিষয়ে বললেন, ‘তা পারে। মাস্ক পরে আছি সবাই। বাড়ি তো খুব দূরে না। টাঙ্গাইল। যেতে বেশি সময় লাগবে না।’

এখন পর্যন্ত দেশে ৩৯ জনের দেহে করোনা সংক্রামণের তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে মারা গেছেন চারজন। ভালো হয়ে বাড়ি ফিরেছেন পাঁচজন।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/২৪মার্চ,২০২০)