দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসায় এবার নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ভারত। নতুন এই চিকিৎসা পদ্ধতির নাম প্লাজমা থেরাপি। যুক্তরাষ্ট্রে বেশ কিছু দিন ধরেই এই পদ্ধতি রোগীদের ওপর প্রয়োগ করা হচ্ছে। সম্প্রতি এই বিষয়ে মার্কিন একটি জার্নালেও প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। তাতে দাবি করা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে এই পদ্ধতি প্রয়োগে বেশ সুফল পাওয়া যাচ্ছে। এবার সেই পথেই হাঁটতে চলেছে ভারতও। হিন্দুস্তান টাইমস'র এক প্রতিবেদনে বিষয়টি জানা গেছে।

প্লাজমা থেরাপি পদ্ধতিতে কোভিড-১৯ থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা কোনও রোগীর রক্তের প্লাজমা আক্রান্তের দেহে ইনজেক্ট করা হয়। ফলে ওই রোগীর দেহেও অ্যান্টিবডি গড়ে ওঠে, যা করোনা প্রতিরোধে সহায়তা করে। এই পদ্ধতির ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল খুব তাড়াতাড়িই করতে চাইছেন ভারতীয় চিকিৎসকরা।

করোনায় আক্রান্তদের ওপর প্লাজমা থেরাপি প্রয়োগ করার সিদ্ধান্ত অনেক দিন আগেই নিয়েছে মার্কিন ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ)। করোনাভাইরাসের প্রাণঘাতী ভাইরাল স্ট্রেন সার্স-কভ-২-কে জব্দ করার মতো কোনও টিকা বা ওষুধ এখনও বাজারে আসেনি। তাই বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে এই প্লাজমা থেরাপিকেই হাতিয়ার করতে চাইছে বিশ্বের অনেক দেশই। এই পথে প্রথম আলো দেখিয়েছেন ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ডের চিফ কোয়ালিটি অফিসার ফাহিম ইউনুস। তিনি দাবি করেছেন, প্লাজমা থেরাপিতে ইতোমধ্যে পাঁচ জন সংকটজনক রোগীকে সারিয়ে তোলা সম্ভব হয়েছে।

এই থেরাপি প্রয়োগের ক্ষেত্রে অনেক নিয়ম মেনে চলতে হয়। দাতা ও গ্রহীতার রক্তের গ্রুপ, রক্তের আরও কয়েকটি পরীক্ষার প্রয়োজন হয়। আক্রান্ত ব্যক্তি সুস্থ হয়ে ওঠার পরেও তাকে ৭-১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে রেখে পর্যবেক্ষণ করতে হয়। সংক্রমণ সম্পূর্ণ সেরে গেছে নিশ্চিত হলেই তার প্লাজমা নেওয়া হয় থেরাপির জন্য।

ইতোমধ্যে প্লাজমা থেরাপি নিয়ে একটি নির্দেশিকার খসড়া তৈরি করছে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ। খসড়া তৈরি হয়ে গেলেই তা পাঠানো হবে ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল অব ইন্ডিয়ার কাছে।

চেন্নাইয়ের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব এপিডেমিওলজির পরিচালক ডা. মনোজ মুরেখার বলেন, ‘আর দুই একদিনের মধ্যে খসড়া তৈরি হয়ে যাবে। যেহেতু এটি নতুন পদ্ধতি, তাই ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল করা বাধ্যতামূলক। তাই নিয়ম অনুযায়ী ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ খসড়া তৈরি করেই ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল অব ইন্ডিয়ার কাছে পাঠাবে। সেখান থেকে অনুমতি মিললেই ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হবে।’

বিজ্ঞানীদের দাবি, দাতার রক্তরসে যদি শক্তিশালী অ্যান্টিবডি তৈরি হয় তাহলে আক্রান্তের সংক্রমণ ৩-৭ দিনে সারতে পারে। একজন দাতার প্লাজমা থেকে কম করে দু’জন রোগীর চিকিৎসা হতে পারে।

সংক্রামক রোগে প্লাজমা থেরাপি চিকিৎসা পদ্ধতি নতুন নয়। ১৯১৮ সালে ইনফ্লুয়েঞ্জা ফ্লু বা স্প্যানিশ ফ্লু মহামারির সময়েও এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়েছিল। বিজ্ঞানীরা বলছেন, শরীরে সংক্রামক জীবাণু ঢুকলে তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে এই রক্তরস বা প্লাজমা। কোভিড-১৯ সংক্রমণ সারিয়ে সুস্থ হয়ে উঠেছেন যে ব্যক্তি তার রক্তরস ভাইরাস-প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি তৈরিতে সক্ষম হয়েছে। অর্থাৎ সার্স-কভ-২ ভাইরাল স্ট্রেনকে আটকাতে যে ধরনের অ্যান্টিবডি দরকার সেটা তৈরি হয়েছে রক্তরসে। কাজেই সেই সুস্থ হয়ে ওঠা ব্যক্তির রক্তরস যদি প্রয়োগ করা যায় (ব্লাড প্লাজমা ট্রান্সফিউশন) আক্রান্তের শরীরে, তাহলে সেই অ্যান্টিবডিকে হাতিয়ার করেই রোগীর দেহকোষ লড়াই চালিয়ে যাবে ভাইরাসের বিরুদ্ধে।

জনস হপকিন্স ব্লুমবার্গ স্কুল অব পাবলিক হেলথের মলিকিউলার বায়োলজির প্রধান আরতুরো ক্যাসাডাভেল বলেন, প্লাজমা থেরাপিতে সংক্রমণ সারানোর উপায় আছে। সেরে ওঠা ব্যক্তিরা যদি প্লাজমা দান করতে এগিয়ে আসেন, তাহলে বাঁচানো যাবে বহু মানুষকে। নিউ ইয়র্কের মাউন্ট সিনাই হাসপাতাল, ইউনিভার্সিটির অব গ্লাসগোতে প্লাজমা থেরাপির ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছে।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/১০এপ্রিল,২০২০)