দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: কোভিড-১৯ নিয়ে সবাই আতঙ্কিত।  বাংলাদেশের বিজ্ঞানী ড. বিজন শীলের সার্স নিয়ে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা অনেক বেশি শুধু নয়, তার নামটিও সার্সের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। কারণ, সার্সের কুইক টেস্টের আবিষ্কারক ড. বিজন শীল। তার নামেই এই টেস্টটি প্যাটেন্ট করানো। এটাই চীনসহ দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় সার্স রোগ টেস্টে ব্যবহার হয়। ড. বিজন শীল ইতোমধ্যে বাংলাদেশেও একটি পরিচিত নাম। তিনি কোভিড-১৯ বা করোনার কুইক টেস্ট পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন। প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে তাকে সার্বিক সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন।

ড. বিজন শীলের বিস্তারিত পরিচয় আমি কয়েক সপ্তাহ আগে একটি লেখায় উল্লেখ করেছি। তাই এখানে আর বেশি কিছু লিখতে চাই না। শুধুমাত্র নতুন পাঠকদের জন্যে বলি, তিনি ব্ল্যাকবেঙ্গল প্রজাতির ছাগলের সংক্রামক রোগের ভ্যাকসিন আবিষ্কার করেন ৯০ এর দশকে। এর পরে ২০০২-এ ডেঙ্গুর কুইক টেস্ট পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। যা সিঙ্গাপুরে তার নামে প্যাটেন্ট করানো হয়। ২০০৩ সালে সার্সের কুইক টেস্ট পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। এটাও সিঙ্গাপুরে তার নামে প্যাটেন্ট করানো। তাছাড়া সিঙ্গাপুরসহ দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় ওই সময়ে সার্স প্রতিরোধে যে ক’জন বড় ভূমিকা রেখেছেন ড. বিজন শীল তাদের একজন। সার্স প্রতিরোধের পুরো সময়টি তিনি সিঙ্গাপুর সরকারের একজন বিজ্ঞানী হিসেবে কাজ করেছেন।

এখানে উল্লেখ করা দরকার, ড. বিজন শীলই প্রথম ‘হাইপার ইমিউন থেরাপি’ বা রক্তরস থেরাপি দিয়ে করোনা আক্রান্ত রোগীকে সুস্থ করা সম্ভব বলে জানান। তিনি ১২ ফেব্রুয়ারি এটি প্রকাশ করেন। আর আমেরিকা ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে সেটা ব্যবহার শুরু করে। এ থেরাপি এখন অনেক দেশ ব্যবহার করছে করোনা রোগীর চিকিৎসায়। আমাদেরও এ বিষয়ে প্রস্তুতি নেওয়া দরকার। সেজন্য প্রয়োজন প্রচুর টেস্ট করানো। এর ভেতর যাদের করোনা পজিটিভ পাওয়া যাবে, অথচ তাদের করোনার কোনও লক্ষণ দেখা যায়নি- এদের রক্তরস বা প্লাজমা করোনা আক্রান্ত রোগীর শরীরে দিতে হবে। তাতে করোনা আক্রান্ত রোগী সুস্থ হবে। এ লেখা যখন লিখছি এ সময়ের মধ্যে ইরান সব থেকে বেশি এই পদ্ধতি ব্যবহার করে রোগী সুস্থ করেছে।

তবে ড. বিজন শীলের মতে সব থেকে ভালো হলো, করোনাকে অঙ্কুরে বিনাশ করা। কেউ যাতে করোনায় ভয়াবহভাবে আক্রান্ত না হন, সহজে সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন- তার জন্যে ড. বিজন শীলের সঙ্গে আলাপ করে যে পরামর্শগুলো পেয়েছি, মনে করি এগুলো এ মুহূর্তে সবার পালন করা উচিত।

ড. বিজন শীল জানান, যেকোনও ধরনের গলা খুশ খুশ বা কাশি দেখা দিলেই আর অপেক্ষা করা উচিত হবে না। ওটা করোনা না করোনা নয়, এ নিয়ে চিন্তা করার কোনও দরকার নেই। বরং ওই মুহূর্ত থেকে যে কাজটি করতে হবে, তা হলো আদা (জিঞ্জার) ও লবঙ্গ (ক্লোব) একসঙ্গে পিষে সেটাকে গরম পানিতে সিদ্ধ করে তার সঙ্গে কিছুটা চা দিয়ে ওটা এক কাপ মতো নিয়ে গারগল করে খেতে হবে। দিনে অন্তত তিন-চার বার এক কাপ করে এটা খেতে হবে। এরফলে গলার ভেতরের কোষগুলোতে রক্ত সঞ্চালন বাড়বে। এতে কোষগুলো শক্তিশালী হবে। কোষগুলোর ইমিউনিটি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়বে। অধিকাংশক্ষেত্রে কোষগুলো সমর্থ হবে কোভিড-১৯ ভাইরাস যদি আক্রমণ করে, তাকে প্রতিরোধ করতে।

যাদের গলা খুশ খুশ করে না বা কোনও কাশি দেখা দেয়নি, তারাও এটা নিয়মিত দিনে দুইবার অন্তত দু’কাপ খাবেন। তাতে তাদেরও ইমিউনিটি বাড়বে। এর পাশাপাশি যাদের জোগাড় করা সম্ভব, বিশেষ করে যারা গ্রামে আছেন- তারা এখন নিমপাতা পাবেন। ড. বিজন শীলের পরামর্শ হলো, ওই নিমপাতা একটু পানি দিয়ে পিষতে হবে। পেষার ফলে যে সবুজ রঙের রসটি বের হবে সেটার সঙ্গে গরম পানি মিশিয়ে তা গারগেল করে খেতে হবে। এর ফলে গলার কোষগুলোয় রক্ত সঞ্চালন বাড়বে, ইমিউনিটি বাড়বে। যা অনেক বেশি সমর্থ হবে করোনা বা কোভিড-১৯ ভাইরাসকে পরাজিত করতে।

ইতোমধ্যে আমরা বিভিন্ন ডাক্তারদের আলোচনার মাধ্যমে জেনেছি করোনা আমাদের গলা থেকে ফুসফুসে গিয়ে আক্রমণ করে। এক পর্যায়ে ফুসফুসে পানি জমে যায়। তখন রোগী মৃত্যুর মুখে চলে যায়। ড. বিজন শীল বলেন, করোনার এই যে তিনটি পর্যায় অর্থাৎ প্রথমে গলায় আক্রমণ করা। অর্থাৎ গলায় খুশ খুশ কাশি হবে। এর পরে এটা আমাদের ফুসফুসের ব্রঙ্ক অ্যালভিয়োলিতে চলে যায়। ব্রঙ্ক অ্যালভিয়োলিতে যাওয়া দ্বিতীয় স্টেজ। তৃতীয় বা শেষ স্টেজ হচ্ছে ব্রঙ্ক অ্যালভিয়োলিতে পানি জমানো। ড. বিজন শীলের পরামর্শ হলো, করোনাকে প্রথম স্টেজেই অর্থাৎ গলা খুশ খুশ অবস্থাতে দমন করতে হবে। আর সেজন্য তিনি মনে করেন তার ওই আদা, লবঙ্গ এবং চা থেরাপি আর নিমপাতা থেরাপি অনেক কার্যকর হবে।

এর পাশাপাশি তিনি ইমিউনিটি বাড়ানোর জন্যে প্রতিদিন একগ্রাম পরিমাণ ভিটামিন সি খাবার পরামর্শ দেন। এই ভিটামিন সি’র সঙ্গে অবশ্যই কিছুটা পরিমাণ জিঙ্ক থাকতে হবে। যতদূর খোঁজ নিয়ে জেনেছি, বাজারে এ মুহূর্তে ভিটামিন সি ওইভাবে পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ, প্রধানমন্ত্রীও তার ৩২টি সাবধানতার ভেতর এই ভিটামিন সি খাবার পরামর্শ দিয়েছেন। এ কারণে বাজারে যা ভিটামিন সি ছিল তার প্রায় সবই এখন বিক্রি হয়ে গেছে।

ড. বিজন শীল বলছেন, এই ভিটামিন সি’র সঙ্গে জিঙ্ক থাকতে হবে। কারণ, ভাইরাসের ‘আর ডি ডি’কে ব্লক করে দিতে সমর্থ হয় জিঙ্ক। যার ফলে ওই ভাইরাস সহজে রোগীকে আক্রান্ত করতে পারে না। খোঁজ নিয়ে যা জেনেছি, তাতে দেখতে পাই এই মুহূর্তে গণস্বাস্থ্য একটি ভিটামিন সি তৈরি করছে, যার সঙ্গে তারা জিঙ্ক দিচ্ছে। আমাদের স্কয়ার, বেক্সিফার্মা, ইনসেপ্টা, অপসোনিন এমনি অনেক বড় বড় ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানি রয়েছে। এ মুহূর্তে সরকারের উচিত হবে দ্রুততম সময়ে তারা যেন জিঙ্ক সমৃদ্ধ ভিটামিন সি উৎপাদন করে তার ব্যবস্থা নেওয়া, পাশাপাশি তারা যেন ন্যায্যদাম রাখে সেটিও পর্যবেক্ষণে রাখা। কারণ দুর্যোগে বাড়তি মুনাফা করার চেষ্টা যাতে কেউ না করে, সেটাও নিশ্চিত করতে হবে। বাজারে যাতে এগুলো সঠিকমূল্যে বিক্রি হয়, বিক্রেতারা বেশি দাম না নেন সেটা নিশ্চিত করতে হবে সরকারকে।

যুদ্ধকালীন প্রয়োজনের মতো জরুরি ভিত্তিতে এই জিঙ্ক সমৃদ্ধ ভিটামিন সি প্রস্তুত করে বাজারে দেওয়া প্রয়োজন। আবার এই ভিটামিন সি দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠী যাতে বিনামূল্যে বা কমমূল্যে পায় তারও ব্যবস্থা নিতে হবে।

অন্যদিকে ড. বিজন শীল আরও বলেন, অস্ট্রেলিয়া তাদের দেশের নাগরিকদের ইমিউনিটি বাড়ানোর জন্যে জিঙ্ক ইনজেকশন দিচ্ছে। তার মতে এই ইনজেকশন কার্যকর হবে। বিল গেটসও বলেছেন এটা কার্যকরি। তাই সরকারের উচিত হবে, আমাদের বড় বড় ওষুধ কোম্পানিগুলোকে বলা তারা যেন দ্রুত এই ইনজেকশন তৈরিতে চলে যায়।

এর পাশাপাশি ড. বিজন শীল মার্চ মাস থেকে তার ফেসবুক ও আমার ফেসবুকের মাধ্যমে একটি বিষয় সাবধান করে আসছেন, তা হলো টয়লেট পরিষ্কার রাখা। কারণ, কমোড, প্যান এবং বেসিন থেকে কফ, থুতু, প্রস্রাব ও পায়খানার মাধ্যমে করোনা বা কোভিড-১৯ ছড়ায় বেশি। রোগীর কফ ও থুতুর মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়ায়।

এছাড়া এই ভাইরাস যেমন শরীরের অ্যালভিয়োলিতে চলে যায়, তেমনি অন্ত্রনালিতেও যায়। আর অন্ত্রনালিতে গেলে তখন রোগীর ডায়রিয়া হয়। তখন মলের সঙ্গে এ ভাইরাস যায়। এ কারণেই এগুলো পরিষ্কার রাখা জরুরি। প্রত্যেকে বাড়িতে সব সময়ই এটা পরিষ্কার রাখে। কিন্তু সমস্যা হলো অফিস ও পাবলিক প্লেসগুলো নিয়ে। আমাদের দেশের সরকারি ও বেসরকারি অধিকাংশ অফিসে টয়লেট প্রয়োজনীয় পরিষ্কার করা হয় না। এগুলো এখন ঘণ্টায় ঘণ্টায় পরিষ্কারের ব্যবস্থা করানো দরকার। লকডাউনের মধ্যে যে সমস্ত জরুরি অফিস ও মিডিয়ার অফিস চলছে, তাদের এগুলো পরিষ্কার রাখতে হবে।

ড. বিজন শীল যে সব থেরাপির পরামর্শ দিচ্ছেন, তা সবই ভেষজ পদ্ধতির। এছাড়া তিনি দুই প্রকারের ভিটামিন খেতে বলছেন। এতে শরীরে ক্ষতি হওয়ার কোনও কারণ নেই। তাই এ বিষয়ে যেহেতু তিনি বিশেষজ্ঞ তার পরামর্শ আমাদের এখন থেকে মানা উচিত। কারণ, আমাদের করোনা রোগী প্রতিদিন বাড়ছে। পাশাপাশি আমরা এটাও জানি, যেখানে ইউরোপ আমেরিকার চিকিৎসা ব্যবস্থা পরাজিত হয়েছে- সেখানে আমাদের হাসপাতাল বা চিকিৎসা ব্যবস্থা দিয়ে মোকাবিলা করার কোনও সুযোগ নেই। বরং এসব পূর্ব সাবধানতার মাধ্যমে আগেই নিজেকে রক্ষার পথে আমাদের চলা উচিত।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/১৬এপ্রিল,২০২০)