কুমিল্লা প্রতিনিধি: কুমিল্লার লালমাই উপজেলার পেরুল এলাকায় ১৩ বছর বয়সী কিশোরীকে বিয়ে করেছেন ৬৫ বছরের এক বৃদ্ধ। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে প্রতিবাদের ঝড়।

ঘটনার প্রেক্ষিতে উক্ত বর ও কনেকে বৃহস্পতিবার (১৪ মে) সন্ধ্যায় আটক করেছে পুলিশ। এমন অভিযোগ করেছেন কনের মা।

কুমিল্লা লালমাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে কনে মরিয়মের মা লিখিত অভিযোগটি করেন। পরে অভিযোগটি লালমাই থানা ইনচার্জের কাছে পাঠানো হয়।

পুলিশ বলছে বর-কনেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার পশ্চিম পেরুল গ্রামের ইমাম হোসেন ঢাকায় চাকরি করায় গ্রামে বসবাস করা তার পরিবারের দেখাশোনা করতেন পেরুল দীঘির-পাড়ার রিকশা চালক সামছুল হক।

ইমামের ২য় কন্যা মরিয়ম (১৩) স্থানীয় পেরুল উচ্চ বিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী।

সামছুল হক নিজের রিকশায় তাকে নিয়মিত স্কুলে আনা নেওয়া করতেন। কাজের কারণে মাঝে মধ্যে তিনি ওই বাড়িতে রাত্রিযাপনও করেছেন।

এ নিয়ে স্থানীয়রা আপত্তি করলে তিনি প্রাপ্ত বয়স হলে ওই মেয়ের সাথে নিজের ছেলে মনিরের বিয়ে হওয়ার কথা এলাকায় প্রচার করেন। কিন্তু গত রোববার (১০ মে) সামছুল হক সবাইকে হতবাক করে ১৩ বছরের মেয়েকে নিয়ে উধাও হয়ে যান। পরে স্থানীয়দের প্রতিবাদের পরিপ্রেক্ষিতে ১১ মে পেরুল দক্ষিণ ইউপি চেয়ারম্যান লোক-মারফত সামছুল হক ও ছাত্রীকে ইউপি কার্যালয়ে হাজির করে বিস্তারিত জানতে চান।

ওই সময় সামছুল হক ছাত্রীর প্রাথমিক শিক্ষা সনদ, জন্ম-নিবন্ধন সনদ ও বিয়ের কাবিননামা উপস্থাপন করেন।

প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার সনদ ও জন্ম-নিবন্ধনে মরিয়মের জন্মতারিখ উল্লেখ রয়েছে ০২/০২/২০০২ইং। কাবিননামায় দেখা যায়, গত ১০ মে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন ৭নং ওয়ার্ড এর নিকাহ রেজিস্টার মুজিবুর রহমান সরকারের কার্যালয়ে ৫ লক্ষ টাকা মোহরানায় বই নং ৫৪, পৃষ্ঠা নং ২৮ ও ক্রমিক নং ৪৪০-এ তাদের বিয়ে রেজিস্ট্রি হয়। কাবিননামায় সামছুল হকের জন্মতারিখ ০৩/০১/১৯৫৫ ইং উল্লেখ রয়েছে।

২০০৮ সালে জন্ম-নিবন্ধনের সময় পরিবারের পক্ষে মেয়ের বয়স বাড়িয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে সামছুল হকের বিরুদ্ধে। নতুন দম্পতি হরিশ্চর এলাকায় বাসা ভাড়া করে থাকছেন বলে জানা গেছে।

তাদের এই অসম বয়সের প্রেম, বিয়ে নিয়ে এলাকায় ও ফেসবুকে নানা আলোচনা চলছে। কেউ বলছেন, কি আছে এই বৃদ্ধের মধ্যে। কেউ বলছেন, প্রেমের মরা জলে ডোবে না!

পেরুল দক্ষিণ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান ডালিম বলেন, জন্ম-সনদে বয়স বাড়িয়ে ও প্রলোভন দেখিয়ে ৬৫ বছরের এক বৃদ্ধ ১৩ বছরের কিশোরীকে পালিয়ে বিয়ে করেছেন। এটা শিশু নির্যাতনের অপরাধ। মেয়েটির জীবন রক্ষায় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে প্রশাসনের দৃষ্টি কামনা করছি।

পেরুল দক্ষিণ ইউপি চেয়ারম্যান এজিএম শফিকুর রহমান বলেন, বিষয়টি জানতে পেরে আমি উভয়কে আমার অফিসে ডাকি। বর ৬৫ বছরের বৃদ্ধ। কনের ১৮ বছর হয়নি। তবে তাদের উপস্থাপিত জন্ম-নিবন্ধন ও শিক্ষা সনদ অনুযায়ী কনে প্রাপ্ত বয়স্ক। কনেকে বারবার অনুরোধ করলেও সে পরিবারের কাছে ফিরে যেতে রাজি হয়নি।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/১৫মে, ২০২০)