দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: ওয়ানডে ক্যারিয়ারে এখনও পর্যন্ত ৪৩টি সেঞ্চুরি করেছেন ভারতের অধিনায়ক বিরাট কোহলি, এর মধ্যে ২৬টিই ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে অর্থাৎ রান তাড়া করতে নেমে। এই ২৬ সেঞ্চুরির মধ্যে ২২টিতেই জিতেছে তার দল।

যা প্রমাণ করে ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে অর্থাৎ রান তাড়া করার চাপে একটু বেশিই ভালো খেলেন কোহলি। যার সাক্ষ্য দেয় তার সকল পরিসংখ্যান। এমনিতে ক্যারিয়ার গড় ৫৯ হলেও, ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে তার ৬৮। আর যদি হিসেব করা হয় জয়ী ম্যাচে, তাহলে তার গড় হয়ে ৯৬!

বিশ্বের অনেক খেলোয়াড়দের জন্য যে কাজটি বেশ কঠিন, সেটিই খুব আরামে করে যান তিনি। যে কারণে ওয়ানডে ক্রিকেটে রান তাড়ায় সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যানও মনে করা হয় ভারতের অধিনায়ককে। কিন্তু কীভাবে সম্ভব চাপের মুখে এত ভালো খেলা? নিজেকে গোছানোর প্রক্রিয়াটাই বা কী?

সোমবার রাতে ফেসবুক লাইভে কোহলিকে এ প্রশ্নই করেছিলেন তামিম ইকবাল। উত্তর দিতে গিয়ে শুরুতে খানিক রসিকতাই করেছেন কোহলি। জানিয়েছেন মুশফিকুর রহীমও মাঝেমাঝে তার কাজ করে দেন। শুধু মুশফিক নন, তিনি বোঝাতে চেয়েছেন উইকেটরক্ষকরা যে পেছন থেকে নানান কথা বলেন, সেগুলোই কাজ করে টনিকের মতো।

কোহলির ভাষ্য, ‘(রান তাড়া করার সময়) মেন্টাল প্রসেস যথেষ্ঠ স্বাভাবিক থাকে। কখনও কখনও, মুশফিকরাও (উইকেটরক্ষক) এক্ষেত্রে সহায়তা করে, স্ট্যাম্পের পেছন থেকে কিছু একটা বলে, তাতে আমি আরও অনুপ্রাণিত হয়ে উঠি।’

শুরুতে মজা করলেও তামিমকে নিজের প্রক্রিয়াটাও জানিয়েছেন কোহলি। মূলত ছোটবেলা থেকেই রান তাড়া করে জয়ের কথা ভাবতে ভাল লাগত তার। যেটিকে তিনি অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছেন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এসে।

তিনি বলেন, ‘তরুণদের সঙ্গে কথা বলার সময় একটা কথা প্রায়ই বলি। আত্মবিশ্বাসটা থাকতে হবে যে, এটা আমি করতে পারব। ছেলেবেলায় যখন টিভিতে ম্যাচ দেখতাম, অনেক সময় ভারত হারত রান তাড়ায়। তখন রাতে বিছানায় যাওয়ার সময় আমার মনে হতো যে, আমি হলে এই ম্যাচ জিতিয়ে দিতাম।’

‘সত্যিই, অমন স্বপ্নই দেখতাম! এখন যখন ওই পরিস্থিতিটা আসে, আমার ভেতরের সেই তাড়নাটা জেগে ওঠে। আমি জেতাতে পারি, সেই অনুভূতিটা কাজ করতে শুরু করে।’

দ্বিতীয় ইনিংসে রান তাড়ার বিষয়টিকে কখনওই বাড়তি বোঝা বা চাপ হিসেবে দেখেন না তিনি। বরং চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে সেটিকে উপভোগই করেন কোহলি। আর এ কারণেই দেখা যায় ২৮০-৩০০ রান তাড়ার ম্যাচে শিস বাজাতে বাজাতে দলকে নিয়ে যান জয়ের বন্দরে।

কোহলির মতে, ‘রান তাড়া এমন একটি ব্যাপার, যেখানে জানা থাকে লক্ষ্য কত এবং সেটি অর্জন করতে কী কী প্রয়োজন। আমার মতে, এটির চেয়ে স্পষ্ট চিত্র আর কিছু নেই। অন্যরা সেই পরিস্থিতি কিভাবে দেখবে, সেটা তাদের ব্যাপার। আমি এই পরিস্থিতিকে কখনও চাপ হিসেবে দেখি না, সুযোগ হিসেবে নেই যে জেতাতে হবে। আমরা জেতার জন্যই যাই, দলের জয়ই সবচেয়ে জরুরি। আর এখানেই সুযোগ যে আমি অপরাজিত থাকতে পারি।’

ম্যাচ জেতানোর টার্গেট যত বড়ই হোক, সেগুলোকে ছোট ছোট করে ভাগ করে নেন কোহলি, ‘৩৭০-৩৮০ রান লক্ষ্য হলেও আমার কখনও মনে হয় না যে করা সম্ভব নয়। ২০১২ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হোবার্টের একটি ম্যাচের কথা মনে পড়ে। জয়ের জন্য ৩২১ ছিল লক্ষ্য, ফাইনালে কোয়ালিফাই করার জন্য আমাদের ৪০ ওভারে করতে হতো সেটা।’

‘মাঝ বিরতিতে সুরেশ রায়না ও অন্য কারও সঙ্গে আমি আলোচনা করছিলাম যে, এই খেলাকে আমরা ২০ ওভারের দুটি ইনিংস হিসেবে নিতে পারি। ৪০ ওভারের কথা ভাবলে অনেক কঠিন মনে হয়, সেটা দেখারই দরকার নেই। দুটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ হিসেবে নেব।’

‘তো এরকম পথ আছে অনেক। পরিস্থিতি বিচার করে খেলতে হবে। পরিস্থিতিকে বিচার করার সামর্থ্য যতটা, সেটিই ঠিক করে দেবে ব্যাটিং কেমন হবে। আমার জন্য এটা সহজাতভাবেই আসে। কখনও কখনও প্রস্তুতির প্রয়োজন হয়। তবে বেশিরভাগ সময় সহজাতভাবেই আসে।’

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/১৯মে, ২০২০)