দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: ২৬ মে ২০০৫, ‘ক্রিকেটের মক্কা’ খ্যাত লর্ডসে টেস্ট ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক মুশফিকুর রহিমের। সে থেকে দেখতে দেখতে আজ পূর্ণ হয়ে গেল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটাঙ্গণে মুশফিকের ১৫ বছর। এই সুদীর্ঘ সময়ে মুশফিক হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় আস্থার নাম। নির্ভরতার প্রতীক। বিশেষ এই দিনে মুশফিক খোলাসা করেছেন হাথুরুকে নিয়ে তার সম্পর্কের কথা। জানালেন কতটা উত্তপ্ত ছিল কোচের সাথে টাইগার এই ব্যাটসম্যানের।

হাথুরুকে নিয়ে বলতে গিয়ে শুরুতেই মুশফিকের কথায় উঠে আসলো কোচের সাপোর্ট পাওয়া নিয়ে। কোন ম্যাচ জিতলে যেমন কোচের ক্রেডিট থাকে, তেমনি হারলেও যেন সেই দায় নেয় কোচ। মুশফিকের কথায়, ‘যখন দল পারফর্ম করবে সেটার গুরুদায়িত্ব যেমন অবশ্যই অধিনায়ককে নিতে হবে, কোচকেও ঠিক সেইভাবেই নিতে হবে। এটা পুরো দলেরই একটা ব্যর্থতা। আবার যখন ভালো করবে, আমি কখনই মনে করি না এটা কেবল অধিনায়কের একার হাত। এটা একক কোনো খেলা নয়, যেখানে আপনি একাই খেলবেন আর আপনি একাই জিতিয়ে দেবে। এটা টিম স্পোর্টস, এখানে সবার অবদান থাকে। যারা খেলে না ত্রয়োদশ বা চতুর্দশ খেলোয়াড়, সবার অবদান থাকে।’

তেমনি হাথুরুর সমর্থন নিয়ে মুশফিক বলেন, ‘আমার মনে হয় জয়ের সময় সবাই কৃতিত্বটা নিতে চাই, হারার সময় দায়টা কেউই নিতে চায় না। এটাই হচ্ছে আমাদের বাস্তবতা। সেই জায়গায় আমি কিছুটা আনলাকি ছিলাম যে হাথুরুর কাছ থেকে তেমন সমর্থন আমি কখনই খুব একটা পাইনি। শেন জার্গেনসেনের সময় হয়তো পেয়েছি, তারপরে কোচ বা ম্যানেজম্যান্টের কাছ থেকে আমি সাহায্য পাইনি। বলতে পারেন আমাকে একাই লড়তে হয়েছে স্রোতের বিপরীতে।’

চান্দিকা হাথরুসিংহের সঙ্গে মুশফিকের রসায়নটা ঠিক জমেনি। অনেক জায়গাতেই ছিল মতের অমিল। অনেক কিছুই চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে মুশির উপর। এই ব্যাপারে মুশফিকের মন্তব্য, ‘আমি মনে করি আমি যেভাবে তাকে বোঝাতে চেয়েছি, সেইভাবে তিনি বোঝেননি। কিংবা তার দর্শন হয়তো একটু অন্যরকম ছিল যা আমার কাছে ভিন্ন লাগতো। অনেক সময় ভালো লেগেছে, অনেক সময় ভালো লাগেনি। আমাদের মধ্যে হয়তো একটু দূরত্ব হয়তো ছিল, যেটা স্বাভাবিক। এটা আসলে অস্বীকার করার কিছু নেই। কিন্তু এমন হওয়ার নির্দিষ্ট কারণ আমি বলতে পারব না। কোন ঘটনার কারণে সে আমাকে পছন্দ করতেন না সেটা আমি জানি না।’

হাথুরুর তোষামোদকারী হয়ে থাকতে চাননি মুশফিক, এজন্যই মুশফিকের উপর নেমে এসেছিল অতিরিক্ত চাপ। মুশফিকের কথায়, ‘আমি তাকে সরাসরি অনেক কথা বলতাম, এসব না বলে যদি আমি চুপচাপ থাকতাম বা সে যা বলতো সেগুলোয় হ্যাঁ হ্যাঁ বা জ্বি হুজুর করতাম তাহলে হয়তো তার সাথে আরও ভালো কাজ করতে পারতাম। তবে আমার কাছে এটা কখনও মনে হয়নি। আমার কাছে মনে হয়েছে দল আগে এবং দলের ভালোর জন্য যদি কারও সাথে লড়াই করতে হয় বা কথা বলতে হয়, অবশ্যই আমি সেটা করব। একজনকে আপনি অন্যায়ভাবে নেবেন একজনকে অন্যায়ভাবে বাদ দিয়ে দেবেন, এটা কখনও প্রক্রিয়া হতে পারে না। আমি সব সময় চেষ্টা করেছি ন্যায্য, সৎভাবে কাজ করার। হয়তো এই যাত্রায় অনেক সময় আমি সমর্থন পেয়েছি, অনেক সময় পাইনি। আমি খুবই আনলাকি যে আমি খুব কমই সমর্থন পেয়েছি। খেলোয়াড়দের কাছ থেকেও তখন খুব কম সমর্থন পেয়েছি। যখন ম্যানেজমেন্টের সাথে আপনার ঝামেলা চলবে তখন আপনি চাইবেন না যে একজন খেলোয়াড় আপনাকে সাহায্য করবে না। আমি খুব কমই পেয়েছি সেই সমর্থনটা।’

হাথুরুসিংহের সময়টায় মুশফিককে অনেক কঠিন সময় পার করতে হয়েছে। যা মুশফিক নিয়েছেন চ্যালেঞ্জ হিসেবেই। সেই চ্যালেঞ্জে তিনি পাশে পাননি বোর্ড ম্যানেজম্যান্ট থেকে শুরু করে সতীর্থদেরও। মুশি বলেন, ‘সমর্থন তো পাইই নি, উল্টো অপবাদ পেয়েছি যে, তোমার কারণে এটা হয়েছে, তোমার কারণে ওটা হয়েছে। আমি সব সময়ই স্বীকার করি আমার কারণে হয়েছে, অপবাদ নিতে আমি ভালোবাসি, এটা সমস্যা না। কিন্তু অপবাদ দেওয়ার আগে সবাইকে অন্তত চিন্তা করতে হবে যে এটা ওর একার সিদ্ধান্ত নয়, এটা সম্মিলিত সিদ্ধান্ত। যেটা ম্যাচে অনেক সময় বাস্তবায়ন হয়, অনেক সময় হয় না। দৃঢ়ভাবে আমি বলতে পারি বাংলাদেশের মতো জায়গায় কেউ একা কখনও সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। এই অধিকার কাউকে কখনও দেওয়া হয় না।’

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/২৬মে, ২০২০)