দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: করোনা সংক্রমণরোধে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর আগামী ৩১ মে থেকে সীমিত পরিসরে গণপরিবহন চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বলা হয়েছে, স্বল্প যাত্রী নিয়ে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাস, লঞ্চ ও রেল চলাচল করবে। এজন্য এর আগে জাতীয় কমিটির মাধ্যমে স্বাস্থ্যবিধি প্রণয়ন করা হয়েছে। তবে দেশের গণপরিবহন ও গণ-মানুষ স্বাস্থ্যবিধি কতটা মেনে চলতে পারবে তা নিয়েই শঙ্কা প্রকাশ করেছেন খোদ পরিবহন মালিকরা। তবে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী পরিবহন পরিচালনা করতে প্রস্তুত রয়েছেন বলে জানিয়েছেন তারা।

গত ২৮ মার্চ দেশের করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সহযোগিতার জন্য ৮ জন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞকে দায়িত্ব দেয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। তাদের দেশের বিভিন্ন বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে গৃহীত কার্যক্রম পর্যালোচনা ও সেবা বৃদ্ধি এবং কার্যকর করার জন্য পরামর্শ দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়। করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে জাতীয় পর্যায়ে প্রস্তুতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সঙ্গে সমন্বয় করতেও বলা হয়েছে। এরই মধ্যে কমিটি বেশ কিছু কারিগরি নির্দেশনা তৈরি করেছে।

কমিটির নির্দেশনা অনুযায়ী সড়কপথে যাত্রী পরিবহনের বিষয়ে যেসব নির্দেশনা রয়েছে তা হচ্ছে- যাত্রীবাহী পরিবহন স্টেশনের জন্য জরুরি পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। নিরাপত্তা এবং জীবাণুমুক্তকরণ পদ্ধতি মানসম্মত করতে হবে। সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর করোনা নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে। মাস্ক, গ্লাভস ও জীবাণুনাশক মজুত থাকতে হবে। কর্মীদের স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ ও স্বাস্থ্য বিষয়ক অবস্থা নথিভুক্ত করতে হবে। যারা অসুস্থতা অনুভব করবে তাদের সঠিক সময়ে চিকিৎসা দিতে হবে। এছাড়া বাস স্টেশনে আগত যাত্রীদের তাপমাত্রা মাপার জন্য স্টেশনে ইনফ্রারেড থার্মোমিটার রাখতে হবে। যথাযথ শর্তাবলী মেনে একটি জরুরি এলাকা চিহ্নিত করতে হবে। যেসব যাত্রীর শরীরের তাপমাত্রা ৩৭.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি থাকবে তাদের ওই জরুরি এলাকায় অস্থায়ী কোয়ারেন্টিনে রাখতে হবে এবং প্রয়োজন মতো চিকিৎসা সেবা দিতে হবে।

নির্দেশনায় আরও বলা হয়, বায়ু চলাচল পদ্ধতি যেন স্বাভাবিক থাকে তা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। যথাযথ তাপমাত্রায় বায়ু চলাচলের জন্য বাসের জানালা খুলে দিতে হবে। চলাচলের স্থানগুলো পরিষ্কার এবং জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে। টয়লেটগুলোতে তরল সাবান থাকতে হবে। সম্ভব হলে হ্যান্ড স্যানিটাইজার এবং হাত জীবাণুনাশক যন্ত্র স্থাপন করা যেতে পারে। যাত্রীদের অপেক্ষা করার স্থান, বাস কম্পার্টমেন্ট ও অন্যান্য এলাকা পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।

এছাড়া প্রতিবার বাস ছেড়ে যাওয়ার আগে সিট এবং বাসের মেঝে জীবাণুমুক্ত করতে হবে। জনগণের জন্য ব্যবহার্য জিনিসপত্রগুলো পরিষ্কার এবং জীবাণুমুক্ত করতে হবে। সিট কভারগুলোকে প্রতিনিয়ত ধোয়া, পরিষ্কার এবং জীবাণুমুক্ত করতে হবে। যাত্রীদের অপেক্ষা করার স্থানে মাস্ক, গ্লাভস ও জীবাণুমুক্তকরণ দ্রব্যাদির পর্যাপ্ত মজুত থাকতে হবে। সব বাসে হাতে-ধরা থার্মোমিটার থাকতে হবে। যথাযথ স্থানে একটি জরুরি এলাকা স্থাপন করতে হবে। যেখানে সন্দেহজনক উপসর্গ আছে এমন যাত্রীদের অস্থায়ী কোয়ারেন্টিনে রাখা যাবে। যাত্রী এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যক্তিগত সুরক্ষার ক্ষেত্রে জোর দিতে হবে।

নির্দেশনায় যাত্রীদের অনলাইনে টিকিট কেনারও পরামর্শ দেওয়া হয়। সারিবদ্ধভাবে ওঠা এবং নেমে যাওয়ার সময়ে যাত্রীদের পরস্পর থেকে এক মিটারেরও বেশি দূরত্ব বজায় রাখতে হবে এবং ভিড় এড়িয়ে চলতে হবে। যাত্রীদের স্বাস্থ্য সচেতন করার জন্য রেডিও, ভিডিও ও পোস্টারের মাধ্যমে সচেতনতামূলক বক্তব্য প্রদান করতে হবে।

কিন্তু এসব নির্দেশনা পালনের সক্ষমতা এখনেও পরিবহন সেক্টরের হয়নি বলে জানিয়েছেন পরিবহন মালিকরা। তাছাড়া সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন বাস টার্মিনালগুলোতেও কতটা সেই নির্দেশনা পূরণ করা হবে তা নিয়েও শঙ্কা রয়েছে তাদের। এছাড়া করোনা মোকাবিলায় সাধারণ মানুষের মধ্যে এখনও সচেতনতা তৈরি হয়নি।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির মহাসচিব ও ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্ল্যাহ বলেন, পুরো বিষয়টি নিয়ে এখনও সরকারের কারও সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়নি। তবে আশা করি খুব দ্রুত হবে। আমরা সেখানে সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা করবো।

তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য আমাদের এখনও পুরোপুরি ক্ষমতা তৈরি হয়নি। দেশের মানুষও সচেতন না। এ অবস্থায় স্বাস্থ্যবিধি কতটা মানা যাবে, তা নিয়ে আমরা শঙ্কিত। তবে সরকার যেসব নির্দেশনা দিয়েছে সেটা পালন করার জন্য আমরা অবশ্যই চেষ্টা করবো।

এই পরিবহন মালিক নেতা আরও বলেন, স্বাস্থ্যবিধিতে যেখানে পাশাপাশি দুই সিটের মধ্যে একটি সিটে যাত্রী বসানোর কথা বলা হয়েছে সেখানে বাসের ধারণ ক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী নেওয়া হবে। সেক্ষেত্রে পরিবহন মালিকরা কীভাবে খরচ পোষাবেন? এ অবস্থায় সরকারকে ভাড়া পুনরায় নির্ধারণের বিষয়টিও দেখতে হবে। তা না হলে পরিবহন চালানো সম্ভব হবে না। কেউ তো লোকসান দিয়ে পরিবহন চালাবে না।

নগরীর বাস টার্মিনালগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি পালনের বিষয়ে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে সে বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মহা-ব্যবস্থাপক (পরিবহন) নিতাই চন্দ্র সেন (যুগ্মসচিব) বলেন, করোনা শনাক্তের শুরুর দিকে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে ডিটিসিএ একটা মিটিং করেছে। সেখানে কীভাবে পরিবহন পরিচালনা করতে হবে তার বিস্তারিত বলে দেওয়া হয়েছে। এখানে মূল কাজগুলো পরিবহন মালিকদেরকেই করতে হবে। আমরা শুধু এনফোর্সমেন্টটাই নিশ্চিত করবো।

তিনি আরও বলেন, এরপরেও পরিবহন চালুর বিষয়ে একটা সিদ্ধান্তের কথা গণমাধ্যম থেকে জানতে পেরেছি। এখনো প্রজ্ঞাপন পাইনি। তবে আমরা এরই মধ্যে সড়ক, উন্মুক্তস্থানসহ টার্মিনালগুলোতে জীবাণুনাশক ছিটিয়েছি। এ কার্যক্রম অব্যাহত আছে। সিটি করপোরেশনের প্রতি যেসব নির্দেশনা আছে সেগুলো যথাযথভাবে পূরণ করা হবে বলে জানান তিনি।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/২৮মে, ২০২০)