দ্য রিপোর্ট  ডেস্ক, একাধারে দক্ষ পর্বতারোহী এবং মার্শাল আর্টে পটু- এমন যোদ্ধাদের সন্ধানে নেমেছে চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি। খোঁজ চলছে প্রশিক্ষকেরও। সেই উদ্দেশ্যে প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে জোরেশোরে। চীনের সামরিক বাহিনীর মুখপত্র ‘চায়না ন্যাশনাল ডিফেন্স নিউজ’  এ তথ্য প্রকাশ করেছে। গালওয়ান ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় ভারতীয় সেনার মুখোমুখি মোতায়েনের জন্য ইতিমধ্যেই লালফৌজের পাঁচটি নতুন মিলিশিয়া ডিভিশন গড়া হয়েছে। তাতে রয়েছেন চীনের বিভিন্ন মার্শাল আর্ট ক্লাবের ছাত্র-শিক্ষক এবং ২০০৮ সালের বেজিং অলিম্পিক্সের সময় এভারেস্ট শীর্ষে অলিম্পিক টর্চ নিয়ে যাওয়া পর্বতারোহীদের রিলে টিমের সদস্যেরা।

চীনা সেনাবাহিনীর ওই মুখপত্র সংবাদপত্রে অবশ্য গালওয়ান প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ১৫ জুন মিলিশিয়া ডিভিশনগুলি তিব্বতের রাজধানী লাসায় পৌঁছেছে। তাতে পর্বতারোহী এবং মিক্সড মার্শাল আর্টে দক্ষ লড়াকুরা রয়েছেন বলেও জানানো হয়েছে। সে দেশের সরকারি চ্যানেল ‘চায়না সেন্ট্রাল টেলিভিশন’ নয়া মিলিশিয়া ডিভিশনগুলির লাসায় উপস্থিতির ফুটেজও সম্প্রচার করেছে। সেই একটি খবরে বলা হয়েছে, লাদাখের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় (এলএসি) টহলদারির দায়িত্বপ্রাপ্ত চীনা সেনাদের কুংফু ও তাইকোন্ডোর প্রশিক্ষণ দিতে লাসায় গিয়েছেন এনবো ফাইট ক্লাবের জনা কুড়ি ‘মার্শাল আর্ট ট্রেনার’। এনবো ক্লাবেই রয়েছেন ‘আলটিমেট ফাইটিং চ্যাম্পিয়নশিপ’-এ অংশ নেওয়া বেশ কয়েকজন পরিচিত মিক্সড মার্শাল আর্ট ফাইটার।

ভারত ও চীনের স্বাক্ষরিত ১৯৯৬ এবং ২০০৬ সালের সীমান্ত প্রোটোকল অনুযায়ী সীমান্তের দু’কিলোমিটারের মধ্যে আগ্নেয়াস্ত্র, বিস্ফোরক এবং রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার ‘কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ’। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে একাধিক বার এলএসি’তে পাথর, রড, লাঠি নিয়ে মুখোমুখি সংঘর্ষে জড়িয়েছে দু’দেশের সেনা। গত ১৫ জুন গালওয়ানের পেট্রোলিং পয়েন্ট ১৪-তে কাঁটাতার ও পেরেক বসানো লাঠি নিয়ে ভারতীয় সেনাদের আক্রমণ করেছিল চীনা বাহিনী। কর্নেল সন্তোষ বাবু-সহ ২০ ভারতীয় সেনার মৃত্যু হয়। ভারতীয় সেনার হামলায় চীনা ফৌজের কম্যান্ডিং অফিসার-সহ কয়েকজনের মৃত্যুর খবরের কথাও মেনে নিয়েছে বেজিং। একটি মার্কিন রিপোর্টের দাবি, নিহত চিন সেনার সংখ্যা অন্তত ৩৫।

সামরিক বিশেষজ্ঞদের মতে অদূর ভবিষ্যতে লাদাখের পাশাপাশি সিকিম এবং অরুণাচলের এলএসি’ও এমন রক্তক্ষয়ী ‘হ্যান্ড টু হ্যান্ড কমব্যাটে’র সাক্ষী হতে পারে। আর তার আঁচ পেয়েই লাসাকে কেন্দ্র করে প্রস্তুতি শুরু করেছে চীন। উদ্দেশ্য স্পষ্ট, লাঠি কিংবা রডের মতো ‘অসামরিক অস্ত্রে’র লড়াইয়ে ভারতীয় সেনাকে ঘায়েল করা। অধিকৃত তিব্বতের রাজধানী থেকে প্রায় ১,৩০০ কিলোমিটার দূরে পূর্ব লাদাখের অবস্থান। উঁচু পাহাড়ে ঘেরা দুর্গম ‘সঙ্ঘাতের ক্ষেত্রগুলি’-তে দ্রুত পৌঁছনোর জন্যই ডাক পড়ছে পর্বতারোহীদের। চিনা সেনার সংবাদপত্র অবশ্য বলছে, ‘তিব্বত সীমান্তের সুরক্ষা নিশ্চিত করতেই এই উদ্যোগ।’ কিন্তু ড্রাগনের এই ‘আত্মরক্ষার তত্ত্ব’ মানতে নারাজ ভারতীয় সামরিক বিশেষজ্ঞদের অনেকেই।

সুত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা( দ্য রিপোর্ট / টিআইএম/২৮ জুন ২০২০)