দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: বিশিষ্ট শিল্পপতি এবং ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) লতিফুর রহমান আর নেই। আজ তিনি কুমিল্লায় তাঁর পৈত্রিক বাড়ীতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। প্রকৃতির কি নির্মম পরিহাস! চার বছর আগে একই দিনে মারা গিয়েছিলেন তাঁর নাতি ফারাজ আইয়াজ হোসেন। নানা-নাতির মৃত্যু তারিখটা ক্যালেন্ডারের তারিখে বেঁধে রইল একই সুতোয়। চার বছর আগে আইয়াজের মৃত্যু প্রচণ্ড ধাক্কা দেয় লতিফুর রহমানকে। এছাড়াও এই পরিবারের সঙ্গে ঘটেছে একাধিক মর্মান্তিক ঘটনা।

ফারাজ আইয়াজ হোসেন ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমান ও শাহনাজ রহমানের নাতি। সিমিন হোসেন ও ওয়াকার হোসেন দম্পতির ছেলে ফারাজ যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টার ইমোরি ইউনিভার্সিটির ছাত্র ছিলেন। ঢাকার স্যার জন উইলসন স্কুলে পড়াশোনায় হাতেখড়ির পর আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে পড়াশোনা করেন ফারাজ। এখানে গ্র্যাজুয়েশনের পর পড়তে যান ইমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ে। তবে ২০১৬ সালে গ্রীষ্মের ছুটিতে দেশে আসেন ফাইয়াজ। পহেলা জুলাই দুই বন্ধুকে নিয়ে যান গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে।

এই দিনে একদল জঙ্গি গুলশান-২ এর ৭৯ নম্বর সড়কের হলি আর্টিজান বেকারিতে ঢুকে ১৭ জন বিদেশিসহ ২০ জনকে হত্যা করে। পরদিন সকালে কমান্ডো অভিযান চালিয়ে ওই রেস্তোরাঁর নিয়ন্ত্রণ নেয় নিরাপত্তা বাহিনী। নিহতদের মধ্যে ছিল ৩ বাংলাদেশি। সেই ৩ বাংলাদেশির মধ্যে একজন ছিলেন ফারাজ আইয়াজ হোসেন। তবে মৃত্যুর আগ মুহুর্ত পর্যন্ত ২০ বছরের এই তরুণ দাঁড়িয়েছিলেন তাঁর দুই বন্ধু অবিন্তা কবির ও তারিশি জৈনের জীবনের পক্ষে। নিজে বাঁচেননি, তাঁদেরও বাঁচাতে পারেননি। কিন্তু বাঁচিয়েছিলেন সাহস, বন্ধুত্ব আর মানবিকতা।

হলি আর্টিজেন ঘটনায় বিপদে বন্ধুদের ছেড়ে না যাওয়ার অনন্য স্বীকৃতি হিসেবে ফারাজ হোসেনকে মাদার তেরেসা পুরস্কারে (মরণোত্তর) ভূষিত করা হয়। ভারতের মুম্বাইতে এক অনুষ্ঠানে পুরস্কারটি গ্রহণ করেন তাঁর মা সিমিন হোসেন ও বড় ভাই যারেফ আয়াত হোসেন। এছাড়া বেসরকারি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয় ফারাজ আইয়াজ হোসেনের নামে শিক্ষাবৃত্তি চালুর ঘোষণা দিয়েছে। একজন শিক্ষার্থী স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে তাতে বিনা বেতনে পড়তে পারবেন।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/০১ জুলাই, ২০২০)