দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: ২০১৬ সালে বিএফডিসিতে কোরবানি দেওয়ার রীতি শুরু করেন চিত্রনায়িকা পরীমনি। প্রথম বছর একটি দিয়ে কোরবানি শুরু হলেও পরের বছরগুলোতে যথাক্রমে দুটি, তিনটি ও চারটি করে গরু কোরবানি দেন এ নায়িকা।

২০১৭ সাল থেকে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিও একই উদ্যোগ নেয়। পরী ও সমিতির এই যৌথ কোরবানি কালচারের উদ্দেশ্য, অসচ্ছল ও কম আয়ের শিল্পীদের মাঝে মাংস বিতরণ করা।

তবে চলতি বছর করোনার কারণ দেখিয়ে শিল্পী সমিতি পিছু হটলেও পরীমনি অনড় রয়েছেন তার সিদ্ধান্তে। তিনি এবার এফডিসিতেই দিচ্ছেন কোরবানি। এবার তিনি দেবেন ৫টি গরু। কারণ এটি পঞ্চম বর্ষ। পরীমনি বলেন, ‌‘মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে কোরবানি নিয়ে এবার একটু বেশি সতর্কতা অবলম্বন করতে হচ্ছে। পুরোপুরি স্বাস্থ্যবিধি মেনেই এ বছর ৫টি গরু কোরবানি দেবো। করোনার কারণে কোরবানি বন্ধ রাখার মানে নেই।’

২০১৬ সাল থেকে পরীমনির হাত ধরে এফডিসিতে কোরবানি দেওয়াটা রীতিতে পরিণত হয়েছে। যার মধ্যদিয়ে এই নায়িকা এফডিসিকেন্দ্রিক অসহায় মানুষদের কাছে অসম্ভব প্রিয়। কারণ, পরীর এসব সামাজিক উদ্যোগ বরাবরই থাকে সমিতি ও রাজনীতিমুক্ত।

পরীমনির মতো নায়িকা নিপুনও এবার এফডিসিতে কোরবানি দেবেন। নিপুণ বলেন বলেন, ‘বর্তমানে চলচ্চিত্রে কাজ কমে যাওয়া ও করোনায় বিপদে পড়েছেন বেশিরভাগ সহশিল্পী, যাদের কোরবানি দেওয়ার মতো সামর্থ্য নেই বললেই চলে। এসব শিল্পীর জন্য এবার কোরবানির আয়োজন করছি।’নিজের যুক্ত হওয়ার আরও একটি কারণ বললেন তিনি। তার ভাষ্য, ‘চলতি বছর এফডিসিতে কোরবানি কম হচ্ছে। যে কারণে আমাদের মধ্যে যারা নিম্ন আয়ের শিল্পী রয়েছেন, তাদের অনেকেই ঈদের দিন কোরবানি দিতে পারবেন না। তাদের কথা ভেবেই আমি প্রথমবারের মতো এফডিসিতে কোরবানি দিচ্ছি।’

এবার নিপুণ এফডিসি ছাড়াও ঢাকা ও গ্রামে মোট ৫টি গরু ও ৪টি ছাগল কোরবানি দেবেন। তারমধ্যে তিনটি গ্রামের বাড়িতে আর একটি করে ঢাকা ও এফডিসিতে দেওয়া হবে।

তিনি জানালেন, গ্রামের বাড়িতেও গরিবদের মাঝে বেশি মাংস দেওয়ার জন্য বড় পরিসরে কোরবানি দিচ্ছেন।

সম্প্রতি এফডিসির প্রায় ৬০০ কলাকুশলীকে ঈদ উপহার দিয়েছেন নিপুণ। এর আগে তিন শতাধিক শিল্পীকে নিত্যপণ্য দেন তিনি।

২০১৬ সাল থেকে পরীমনির হাত ধরে এফডিসিতে কোরবানি দেওয়াটা রীতিতে পরিণত হয়েছে। কিন্তু স্বচ্ছল নায়কদের সেক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে খুব দেখা যায়নি। শাকিব খান, নায়ক রাজ রাজ্জাকের পরিবার, শিল্পপতি নায়ক আলমগীর, সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক, সোহেল রানা, ফেরদৌস, রিয়াজদের মতো স্বচ্ছল নায়কদের এক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে দেখা যায়নি। মিশা সওদাগর, ওমর সানী, মৌসুমী, পূর্ণিমা, পপি, আরেফিন শুভদের মতো তারকারাও এগিয়ে আসেননি। অনন্ত জলিলের এফডিসিতে কোরবানি দেওয়া প্রত্যাশিতই ছিলো। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে সেই রেওয়াজ তিনি শুরু করেননি। মিশা সওদাগর যদিও শিল্পী সমিতির সভাপতি হিসাবে কিছুটা দায়িত্ব পালন করেন।

সিনেমার মানুষদের মধ্যে যেমন অস্বচ্ছল রয়েছে তেমনি আছে স্বচ্ছলও। কিন্তু উদ্যোগ নিতে খুব একটা দেখা যায় না। তাদের ভাষ্য, সবাইকে জানিয়ে আমরা দান করি না। অনেকে বলছেন, দেখিয়ে হলেও দানটা করেন। গরীব অস্বচ্ছল শিল্পী কলাকুশলীরা দেখবে না আপনি দান করে মানুষকে দেখাচ্ছেন না কি করছেন। তাদের পাশে দাড়ানোটাই তাদের প্রত্যাশা।

অন্যদিকে সাম্প্রতিক সময়ে নানা কারণে তোপের মুখে থাকা শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান বললেন, ‘কসাইরা বিভিন্ন জায়গায় কাজ করবে। তাই তাদের নিয়ে কোরবানির আয়োজন করাটা অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়া বাড়ি বাড়ি গিয়ে মাংস পৌঁছে দেওয়াটাও কঠিন হবে। তাই এবার আমরা সমিতির পক্ষ থেকে কোনও কোরবানি দিচ্ছি না। তবে অসচ্ছল শিল্পীরা যেন মাংস কিনতে পারেন, এ জন্য নগদ অর্থ দিয়েছি।’

অন্যদিকে নাট্যাঙ্গনের মানুষদের এমন সম্মিলিত আয়োজনের কথা শোনা যায়নি। অনেকেই ব্যক্তিগতভাবে কোরবানি দিয়ে তাদের যাকে মনে হবে তার কাছে মাংস পৌঁছে দেবেন বলে জানান। তবে মমসহ বেশ কয়েকজন তারকা অভিনয়শিল্পীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে করোনার সময় কোরবানি দেওয়ার মতো সিদ্ধান্ত নেননি। তারা তাদের নির্ধারিত অর্থটা গরীব কিংবা অস্বচ্ছল মানুষদের মাঝে দান করবেন। সেক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে কাজ করা মানুষদের প্রাধান্য দেওয়া হবে। যদিও ইসলামে কোরবানি না দিয়ে অর্থ দানের কোন নিয়ম নেই।

সবচেয়ে বড় কথা- এফডিসি কিংবা নাট্যপাড়া হোক, স্বচ্ছল শিল্পীরা এগিয়ে আসলে অস্বচ্ছলদের আর দুর্দশা থাকে না। উৎসবের দিনগুলো আরো রঙিন হতে পারে। বছরের পর বছর ধরে সেরকম উদ্যোগ খুবই কম দেখা যায়। হয়তো ব্যক্তিগতভাবে দুয়েকজন এগিয়ে আসেন, সেটাও নিয়মিত নয়। যোগ বিয়োগ করলে তাই এখানে স্বার্থপরের সংখ্যাই বেশি।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/০১আগস্ট, ২০২০)