দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: সীমান্তে ভারতের বিএসএফের হাতে নিরস্ত্র বাংলাদেশি হত্যা বেড়ে যাওয়ায় ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনকে নোট ভারবাল দিয়ে উদ্বেগ ও প্রতিবাদ জানিয়েছিলো বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গত ৭ জুলাই এ প্রতিবাদ জানানো হয়। 

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই নিয়ে এবছর দুইবার ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনকে নোট ভারবাল দিয়ে সীমান্ত হত্যার প্রতিবাদ জানালো।

কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, এ বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সীমান্তে ভারতের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স-বিএসএফ ও ভারতীয় নাগরিকদের হাতে ২৫ জন নিরস্ত্র বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। গত বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সীমান্তে নিহত হন ১৮ জন বাংলাদেশি।

এ বছরের জানুয়ারিতেই নিহত হয়েছেন ১০ জন বাংলাদেশি। এর প্রতিবাদ ও উদ্বেগ জানিয়ে এ বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনকে নোট ভারবাল দেয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

৭ জুলাই ভারতীয় হাইকমিশনে পাঠানো নোট ভারবালে খুব স্পষ্ট করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, এক. ৪৯ তম বিজিবি ও বিএসএফ'এর মহাপরিচালক পর্যায়ের বর্ডার কোর্ডিনেশন কনফারেন্স বা সীমান্ত সমন্বয় সম্মেলন থেকে 'জয়েন্ট রেকর্ড অব ডিসকাসন ' গৃহীত হয়। বিএসএফের হাতে অব্যাহত সীমান্ত হত্যার ঘটনা এই 'জয়েন্ট রেকর্ড অব ডিসকাসন ' এর লঙ্ঘন। দুই. দুই দেশ ২০১১ সালে 'সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা-২০১১' প্রণয়ন করে। অব্যাহত সীমান্ত হত্যা এই যৌথ পরিকল্পনারও লঙ্ঘন। তিন. ১৯৭৫ সালে দুই দেশ ' সীমান্ত কর্তৃপক্ষের যৌথ ভারত-বাংলাদেশ গাইড লাইনস, ১৯৭৫' গ্রহণ করে। অব্যাহত সীমান্ত হত্যা এই যৌথ গাইড লাইনস'এরও লঙ্ঘন।

গত ১৮ আগস্ট থেকে ১৯ আগস্ট দুই দিনের ঝটিকা সফরে ঢাকায় আসেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধণ শ্রিংলা। এসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন তিনি। এছাড়া পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন শ্রিংলা। বৈঠকটির ফলাফল তুলে ধরে ১৯ আগস্ট একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এতে বলা হয়, ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধণ শ্রিলার সঙ্গে বৈঠকে সীমান্ত হত্যা বেড়ে যাওয়ায় গভীর উদ্বেগ জানান বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। তিনি জানান, এবছরের প্রথম ছয় মাসে বিএসএফ ও ভারতীয় নাগরিকদের দ্বারা সীমান্ত হত্যা বেড়ে গেছে। এটি সীমান্ত হত্যা বন্ধে দুই দেশের মধ্যে যেসব দ্বিপক্ষীয় চুক্তি রয়েছে তার লঙঘন বলে শ্রিংলাকে জানান পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। এসময় বিএসএফ'কে সর্বোচ্চ সংযত হওয়ার আহবান জানান মোমেন। জবাবে ভারতীয় পক্ষ আশ্বস্ত করে বলেন, বিষয়টি সংবেদনশীলতার সঙ্গে দেখবে ভারত এবং সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ -বিজিবি ও বিএসএফ'এর মহাপরিচালক পর্যায়ের বৈঠকে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে।জানা গেছে, আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর বিজিবি ও বিএসএফ'এর মহাপরিচালক পর্যায়ের বৈঠকটি ঢাকায় হওয়ার কথা রয়েছে।

তবে, শ্রিংলার ঢাকা সফরের বিস্তারিত তুলে ধরে ২৬ আগস্ট ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি বিবৃতি দেয়। এই বিবৃতিতে সীমান্ত হত্যা নিয়ে আলোচনার বিষয়টি স্পষ্ট করে নেই। এতে বলা হয়েছে, নিরাপত্তা নিয়ে দুই দেশের সহযোগিতার কথা, বিশেষ করে সীমান্তে বেড়া ও আন্ত:সীমান্ত অপরাধ দমনে যৌথ প্রচেষ্টার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। অনলাইন নিউজপোর্টাল দ্য ঢাকা ডিপ্লোম্যাটের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা গেছে।

(দ্য রিপোর্ট/ টিআইএম/৩ সেপ্টেম্বর.২০২০)