চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: নিজ মাদ্রাসার পাশেই চিরনিদ্রায় শায়িত হয়েছেন দেশের কওমি অঙ্গনের শীর্ষ আলেম আল্লামা শাহ আহমদ শফী। এর আগে শনিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দুপুর ২টায় হাটহাজারী মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে তার জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন আল্লামা শাহ আহমদ শফীর বড় ছেলে মাওলানা মোহাম্মদ ইউসুফ।

জানাজার আগে দেয়া বক্তব্যে মাওলানা মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, বাবা আমাদের এতিম করে চলে গেছেন। আমার বাবার জন্য সবাই দোয়া করবেন। বাবা দীর্ঘ ৮০ বছর হাটহাজারী মাদ্রাসার খেদমত করেছেন। এই দীর্ঘ সময়ে তিনি কাউকে কষ্ট দিয়ে থাকলে ক্ষমা করে দেবেন।

তিনি দীর্ঘ ৩৪ বছর মাদ্রাসার মহা-পরিচালক ছিলেন। এর আগে শিক্ষা জীবন থেকে শুরু করে পুরো বয়সের ৮০ বছরই কেটেছে এই হাটহাজারী মাদ্রাসাকে ঘিরে। মৃত্যুর মাধ্যমে দীর্ঘ ১০৩ বছরের বর্ণাঢ্য জীবনের সমাপ্তি হলো। তার মৃত‌্যুর পর মাদ্রাসার পাশেই কবরস্থানে শায়িত হলেন দেশের কওমী অঙ্গনের শীর্ষ আলেম হেফাজতে ইসলামের আমির, দেশের আলোচিত ইসলামী ব্যক্তিত্ব আল্লামা শাহ আহমদ শফী।

শনিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বেলা ৩টায় আল্লামা শফীকে মাদ্রাসা সংলগ্ন কবরস্থানে চির নিদ্রায় শায়িত করা হয়। এর আগে বেলা সোয়া ২টায় লাখ লাখ ভক্ত অনুরাগীর অংশগ্রহণে আল্লামা শফীর নামাজের জানাজা সম্পন্ন হয়। জানাজার নামাজে ইমামতি করেন আল্লামা শফীর বড় পুত্র মাওলানা মোহাম্মদ ইউসুপ।

আল্লামা শাহ আহদম শফী ১৯১৬ সালে চট্টগ্রাম জেলার রাঙ্গুনিয়া উপজেলার সরফভাটা ইউনিয়নের পাখিয়ারটিলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম বরকম আলী এবং মায়ের নাম মেহেরুন্নেছা বেগম। আল্লামা শাহ আহদম শফী দুই ছেলে ও তিন মেয়ের জনক। বড় ছেলে মাওলানা মোহাম্মদ ইউসুফ পাখিয়ারটিলা কওমি মাদ্রাসার পরিচালক। ছোট ছেলে আনাস মাদানী হাটহাজারী মাদ্রাসার শিক্ষা সচিবের দায়িত্বে ছিলেন।

রাঙ্গুনিয়ার সরফভাটায় নিজ গ্রামের মাদ্রাসায় শিক্ষাজীবন শুরু হয় আল্লামা শফীর। এরপর পটিয়ার আল জামিয়াতুল আরাবিয়া মাদ্রাসায় (পটিয়া জিরি মাদ্রাসা) পড়াশোনা করেন তিনি। পরে তিনি হাটহাজারীর দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসা এবং ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসায় উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন।

১৯৮৬ সালে আল্লামা শফী হাটহাজারী দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম মাদ্রাসার মহা-পরিচালক (মুহতামিম) হিসেবে দায়িত্ব নেন। গত বৃহস্পতিবার রাতে পদত্যাগের আগ পর্যন্ত টানা ৩৪ বছর তিনি এই হাটহাজারী মাদ্রাসার মহা-পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। একই সঙ্গে আল্লামা শফী সারা দেশের কওমি মাদ্রাসা সমূহের নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন।

কওমি মাদ্রাসাগুলোর শীর্ষ সংগঠন আল হাইয়াতুল উলিয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া, বেফাকুল মাদারিসের চেয়ারম্যান ছিলেন আল্লামা শাহ আহমদ শফী। তিনি ২০১০ সালে হেফাজতে ইসলাম নামে একটি ধর্মীয় সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। যে সংগঠনের আমির হিসেবে আমৃত্যু দায়িত্ব পালন করে গেছেন।

স্মরণকালের সবচেয়ে বড় এই জানাজায় স্থানীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদসহ বিভিন্ন দলের রাজনীতিক, সরকারি কর্মকর্তা, আলেমসহ দেশের নানা প্রান্ত থেকে কয়েকলাখ ধর্মপ্রাণ মানুষ অংশ নেন।

শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকার আসগর আলী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন হেফাজতে ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা ও আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী। রাত ১১টার দিকে গেন্ডারিয়ার আসগর আলী হাসপাতাল থেকে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী মাদ্রাসা জামিয়া আরাবিয়া ইমদাদুল উলুম ফরিদাবাদে আল্লামা শফীর মরদেহ নিয়ে যায়া হয়।

সেখানে গোসল এবং কাফন শেষে ভক্ত অনুসারীদের তার মরদেহ দেখার সুযোগ দেওয়া হয়। মধ্যরাতে তার মরদেহ বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসার উদ্দেশে রওনা দেয়। শনিবার সকালে সাড়ে ৯টার দিকে র্যা পিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র‌্যাবের পাহারায় হাটহাজারী মাদ্রাসায় এসে পৌঁছায় আল্লামা শফীর মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স। এরপর তার মরদেহ ভক্ত ও অনুসারীদের দেখার জন্য হাটহাজারী মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে রাখা হয়।

আল্লামা শফীর মৃত্যুর সংবাদ শুনে দেশের নানা প্রান্ত থেকে শুক্রবার রাত থেকেই তার ভক্ত অনুসারীরা তাকে শেষবারের মতো দেখতে এবং তার জানাজায় অংশ নিতে হাটহাজারী আসতে শুরু করেন। শনিবার সকালে হাটহাজারীতে মানুষের ঢল নামে। চট্টগ্রাম-হাটহাজারী সড়কে মানুষের চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের।

একপর্যায়ে হাটহাজারী বাস স্ট্যান্ড থেকে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। হাটহাজারী থেকে অক্সিজেন পর্যন্ত যানবাহনের চাপ কয়েকগুন বেড়ে যায়। অনেকে তীব্র রোদের মধ্যে দীর্ঘপথ পায়ে হেঁটে জানাজায় অংশ নেন।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/১৯সেপ্টেম্বর, ২০২০)