দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’- ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের অবিস্মরণীয় স্লোগান। এই শব্দ যুগলের প্রতি অগাধ ভালোবাসা থেকে বাবা-মা তার নাম রাখেন ইনকিলাব। কিন্তু বাবা-মা হয়ত জানতেন, তাদের এই সন্তান একদিন বিশ্বজয় করবে, যার গুণের দ্যুতি নিভে যাবে না কখনো; তাই ইনকিলাব থেকে পরিবর্তন করে নাম রাখলেন অমিতাভ। বংশ পরম্পরায় অমিতাভের পর শ্রীবাস্তব যোগ হওয়ার কথা। কিন্তু বাবা কবি হরিবংশ নিজের ছদ্মনামের ‘বচ্চন’ শব্দটি জুড়ে দিলেন সন্তানের নামের সঙ্গেও। তখন থেকেই তার নাম অমিতাভ বচ্চন।

১৯৪২ সালের ১১ অক্টোবর জন্ম নেয়া ইনকিলাব বাবা-মার ইচ্ছেতে হয়েছেন অমিতাভ বচ্চন, তবে রূপালি দুনিয়ায় এক অবিস্মরণীয় তারকা হয়ে ওঠার পেছনে তার নিজের একাগ্র চেষ্টাই মূল শক্তি। আজ ভারতীয় তথা বিশ্ব চলচ্চিত্রের অন্যতম মহাতারকা অমিতাভ বচ্চনের জন্মদিন।

অমিতাভ বচ্চনকে নিয়ে লিখতে বসা একটা দুঃসাহসের কাজ। তার পেছনে কারণের অভাব নেই। তবে উল্লেখযোগ্য কারণ হচ্ছে, জানার পরিধি। সত্তরের দশকে শুরু করে আজ অব্দি যেই মানুষের ব্যস্ততাময় কর্মজীবন, বলিউডে ধারাবাহিক দাপুটে বিচরণ, ইন্টারনেট ঘেঁটে তার সম্পর্কে কতটুকুই বা লেখা যায়। তবু সিনে জগতের অন্যতম প্রিয় ব্যক্তিত্ব বলে কথা, ভালোবাসা থেকে দু-চার লাইন লিখলে ক্ষতি কী!

অমিতাভ বচ্চনের চলচ্চিত্র যাত্রা শুরু যখন, তখন আমাদের দেশে গণঅভ্যুত্থান চলছে। হ্যাঁ, সালটা ১৯৬৯। সিনেমার নাম ‘সাত হিন্দুস্তানি’। খোয়াজা আহমেদ আব্বাসের নির্দেশনায় এখানে সাতটি প্রধান চরিত্রের একটিতে অভিনয় করেন অমিতাভ বচ্চন। প্রথম সিনেমায় বাণিজ্যিকভাবে ব্যর্থ। কিন্তু অভিনেতা হিসেবে অমিতাভ দেখালেন যাদু। আর তাই প্রথম সিনেমাতেই পেয়ে গেলেন জাতীয় পুরস্কার। শ্রেষ্ঠ নতুন অভিনেতা হিসেবে বগলদাবা করেন ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।

এককভাবে ব্যবসায়িক সাফল্য পাওয়ার জন্য অমিতাভ বচ্চনকে অপেক্ষা করতে হয় ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত। প্রকাশ মেহরার পরিচালনায় সে বছর ‘জঞ্জীর’ সিনেমায় অভিনয় করেন বচ্চন। যেখানে তার রাফ অ্যান্ড টাফ ইনস্পেক্টর বিজয় খান্নার চরিত্র ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসে। সেই সঙ্গে বক্স অফিসে সাফল্য আর পুরস্কারের মঞ্চে মনোনয়ন। এই সিনেমায় অভিনয়ের মাধ্যমেই অমিতাভ বচ্চন বলিউডের ‘অ্যাংরি ম্যান’ হিসেবে খ্যাতি পেয়ে যান।

বলিউডে বিগ বি’র দাপুটে অবস্থান তৈরি করতে অন্যতম ভূমিকা রাখে ‘দিওয়ার’ সিনেমা। ১৯৭৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত যশ চোপড়া পরিচালিত এই সিনেমা বক্স অফিসে যেমনিভাবে সাফল্য পায়, তেমনি সমালোচক মহলেও ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করে। শুধু তাই নয়, সিনেমাটি ইন্ডিয়া টাইমস মুভিজ-এর ‘বলিউডের অবিস্মরণীয় ২৫ চলচ্চিত্র’ তালিকায় জায়গা করে নেয়।

একই বছর অমিতাভ বচ্চন হয়ে যান ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ পুরুষ। কারণ এই বছরেই মুক্তি পেয়েছিল ‘শোলে’। ভারতের সর্বকালের সবচেয়ে বেশি ব্যবসাফল সিনেমা হিসেবে বিবেচিত হয় এটি। যেখানে অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন ধর্মেন্দ্র, হেমা মালিনী, সঞ্জীব কুমার, জয়া ভাদুড়ি, ও আমজাদ খানের মতো তারকারা। এখনও ভারতীয় সিনেমার বিলবোর্ড হয়ে আছে ‘শোলে’।

সিনে দুনিয়ার স্বাভাবিক সূত্রমতে অমিতাভ বচ্চনের কেরিয়ার সত্তরের দশকেই নুয়ে পড়ার কথা। কারণ এই জগতে কোনো তারকার দাপট এক দশকের গণ্ডিতেই ঘুরপাক খায়। কিন্তু না, অমিতাভ বচ্চন যে গণ্ডির বাইরের তারকা। যাকে কোনো সীমারেখায় আটকানো যায় না। তাইতো আশি, নব্বই কিংবা ২০০০ হাজার পরবর্তী সময়ে এসেও সমানভাবে নিজের দাপট ধরে রেখেছেন অমিতাভ বচ্চন। দীর্ঘ এই কেরিয়ারে তার সাফল্যের ধারাবাহিকতা দেখলে রীতিমত চমকে যেতে হয়। যেমন- এই বছর মুক্তি পাওয়া ‘বদলা’ কিংবা গত বছরের ‘১০২ নট আউট’, গড়ে প্রতি বছরই তার ঝুলিতে যোগ হয় ব্লকবাস্টার হিট সিনেমা! কেরিয়ারের ৫০ বছর পেরিয়েও কোনো অভিনেতা ব্লকবাস্টার হিট সিনেমা উপহার দিতে পারেন, এটা হয়ত পৃথিবীতে কেবল অমিতাভ বচ্চনই পারেন।

অভিনয় জগতে অমিতাভ বচ্চনের গুণগান করে শেষ করা যাবে না। তাই একটু অন্য প্রসঙ্গ টানি। কণ্ঠস্বরের জন্য বিগ বি সবার কাছে আলাদাভাবে পরিচিত। তার ভরাট কণ্ঠে মুগ্ধ হননি এমন দর্শক খুঁজে পাওয়া কঠিন। এই কণ্ঠস্বর দিয়েই অমিতাভ বচ্চন গিনেজ বুক রেকর্ডে জায়গা করে নিয়েছেন। অথচ মজার ব্যাপার হচ্ছে, সিনেমায় অভিনয়ের আগে অল ইন্ডিয়া রেডিওতে ঘোষকের চাকরির জন্য আবেদন করেছিলেন অমিতাভ বচ্চন। কিন্তু সেই চাকরি তিনি পাননি!

অমিতাভ বচ্চনকে বলিউডের মেগাস্টার কিংবা শাহেনশাহ নামে অভিহিত করা হয়। সর্বকালের সেরা তারকা হিসেবেও তার নামটিই প্রথমে আসে। কারণ তিনি এমন অভিনেতা, যিনি বক্স অফিসে যেমন সাফল্যের জোয়ার এনেছেন, তেমনি পুরস্কারের মঞ্চেও হয়েছেন বিজয়ী। চারবার ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, ১৫বার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার, ভারতীয় চলচ্চিত্রে সবচেয়ে সম্মানজনক পুস্কার দাদাসাহেব ফালকে অ্যাওয়ার্ড, পদ্মশ্রী, পদ্মভূষণ, পদ্মবিভূষণ-সহ অসংখ্য দেশী ও আন্তর্জাতিক সম্মাননা পেয়েছেন অমিতাভ বচ্চন।

ক্যালেন্ডার বলছে, আজ ৭৭-এ পা রেখেছেন অমিতাভ বচ্চন। বয়সটা অন্য সবার জন্য বিশ্রামের। কিন্তু অমিতাভ তো এমন আলো, যেটা নিভে যায় না। তাই এই বয়সে এসেও নিয়মিত অভিনয় করে যাচ্ছেন তিনি। ছড়িয়ে যাচ্ছেন অভিনয়ের দ্যুতি। এখনও তার হাতে রয়েছে ৭টি সিনেমার কাজ। ‘ব্রহ্মাস্ত্র’, ‘চেহরে’, ‘গুলাবো সিতাবো’, ‘বাটারফ্লাই’ ও ‘ঝান্ড’ এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য।

‘১০২ নট আউট’ সিনেমায় অমিতাভ বচ্চন যেই অসাধারণ বার্তা দিয়েছিলেন, সেটা নিজের মধ্যে ধারণ করে তিনিও ছাড়িয়ে যান সেঞ্চুরির গণ্ডি। আর তখনো থাকুন চিরচেনা সতেজ, প্রাণচঞ্চল। জন্মদিনে তাকে ঘিরে এটাই প্রত্যাশা।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/১১ অক্টোবর, ২০২০)