দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: 'মোদের গরব, মোদের আশা, আ মরি বাংলা ভাষা।'

এই কবিতা ও গানের সঙ্গে যাঁর নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে, যাঁর গান ভাষা আন্দোলন ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে প্রেরণার অন্যতম উৎস হিসেবে কাজ করেছে, তিনি হলেন প্রখ্যাত গীতিকার, সুরকার ও কবি অতুলপ্রসাদ সেন। ব্যক্তিজীবনের দুঃখ-বেদনা তাঁর গানের প্রধান রসায়ন।

দেশপ্রেম, ভক্তি, মনঃকষ্ট এবং প্রেম তাঁর লেখা গান ও কবিতায় অতি সরলভাবে মিশে আছে। তাঁর রচিত বেশির ভাগ গানই করুণ রসে আচ্ছাদিত। ব্যক্তিজীবনে তিনি একজন আইনজীবী হলেও সংগীত ও সাহিত্যের প্রতি ছিল তাঁর অফুরন্ত ভালোবাসা।

অতুলপ্রসাদ সেন ১৮৯০ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। পরে ১৮৯৪ সালে লন্ডন থেকে ব্যারিস্টারি পাস করে কলকাতায় আইন ব্যবসা শুরু করলে সেখানে তিনি শ্রেষ্ঠ আইনজীবী হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। বাংলা গান রচনায় তাঁর ছিল অসাধারণ পাণ্ডিত্য।

বাউল, কীর্তন, ঠুমরি, রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলগীতির সমন্বয়ে তিনি এক স্বতন্ত্র সংগীত সাধনা করেছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য গান 'ওগো নিঠুর দরদি', 'কি আর চাহিব বলো', 'একি খেলিছ অনুক্ষণ', 'সবারে বাসরে ভালো', 'একা মোর গানের তরী', 'কে আবার বাঁজায় বাঁশি', 'ওঠ গো ভারত লক্ষ্মী' ইত্যাদি। তাঁর গানের সুর-ভাব ও কথা আধুনিক বাংলা গানকে করেছে সমৃদ্ধ। তাঁর রচিত গানগুলো অতুলপ্রসাদের গান বা অতুলী গান হিসেবে খ্যাত। তিনি মোট ২০৬টি গান রচনা করেন।

'প্রবাসী (বর্তমান নিখিল-ভারত) বঙ্গ সাহিত্য সম্মিলন' প্রতিষ্ঠার তিনি অন্যতম সংগঠক ছিলেন। রাজনীতিতে তিনি সরাসরি সম্পৃক্ত না থাকলেও প্রথমে কংগ্রেসের সমর্থক ছিলেন, পরে লিবারেলপন্থী হন। তিনি এত গানপাগল মানুষ ছিলেন যে প্রতি সন্ধ্যায় তাঁর বাংলোতে গানের আসর বসত। সেই আসরে গান শোনাতে আসতেন আহম্মদ খলিফা খাঁ, বরকত আলী খাঁ ও আব্দুল করিমের মতো বিখ্যাত ওস্তাদরা।

অতুলপ্রসাদ সেন সারা জীবন সংগীত ও সাহিত্য সাধনা নিয়ে নিজেকে ব্যস্ত রেখেছিলেন। তিনি ১৮৭১ সালের ২০ অক্টোবর ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর বাবার আদি নিবাস ছিল ফরিদপুর জেলার মগর গ্রামে। ১৯৩৪ সালের ২৬ আগস্ট তিনি মারা যান।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/২০ অক্টোবর, ২০২০)