দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: বিশ্বে মহামারি করোনাভাইরাস শুরু হওয়ার পর থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশিকর্মীরা ফিরতে শুরু করে। সেই থেকে প্রতিদিনই চাকরি হারিয়ে দেশে ফিরছেন অসংখ্য প্রবাসী। ইতিমধ্যে প্রায় আড়াই লাখের মতো প্রবাসী দেশে ফেরত এসেছেন। এভাবে প্রতিদিন বাংলাদেশিকর্মীরা ফিরতে থাকলে প্রবাসী আয়ে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সাত মাসে ২৯টি দেশ থেকে দুই লাখ ৪৫ হাজার ৭৯০ জন বাংলাদেশি কর্মী দেশে ফেরত এসেছেন। তাদের মধ্যে দুই লাখ ১৭ হাজার ৯৬৩ জন পুরুষ ও ২৭ হাজার ৮২৭ জন নারী কর্মী। তবে চলতি বছরের শুরুর দিকটা হিসাব করলে এই সংখ্যা পৌনে তিন লাখের বেশি ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করেন ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান।

অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার শুরুর দিকে দেশে ফেরত আসা কর্মীদের তথ্য নেয়া হয়নি। তাদের সংখ্যা ধরলে ফেরত আসা কর্মীদের সংখ্যা প্রায় তিন লাখের কাছাকাছি হবে।

গত সাত মাসে সবচেয়ে বেশি কর্মী ফিরেছেন সৌদি আরব থেকে। সেখানে বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করে আউটপাস এবং অনেকে কাজ হারিয়ে দেশে এসেছেন। ফিরে আসা ৬৮ হাজার ৬৪৭ জন কর্মীর মধ্যে নারী ১১ হাজার ৮১০ জন।

সৌদি আরবের পর সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি শ্রমিক ফেরত পাঠায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত। দেশটি থেকে কাজ হারিয়ে ফিরে আসা ৬৪ হাজার ২০৯ জন কর্মীর মধ্যে পাঁচ হাজার ২৯৬ জন নারী শ্রমিক।

কাজ না থাকায় কাতার থেকে ২৫ হাজার ৭০৪ জন শ্রমিককে দেশে ফেরত আসতে হয়। এদের মধ্যে পুরুষ ২৩ হাজার ২২৬ জন এবং নারী দুই হাজার ৪৭৯ জন।

আরব উপদ্বীপের দক্ষিণ-পূর্ব কোণায় অবস্থিত রাষ্ট্র ওমান থেকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে ১৪ হাজার ৬৬৯ জনকে। তাদের মধ্যে নারী এক হাজার ৯৩২ জন।

মালদ্বীপে কর্মহীন হয়ে পড়েন বিদেশি কর্মীদের অনেকেই। সেখান থেকে ১২ হাজার ৬৮৯ জন বাংলাদেশি কর্মীকে দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। এদের মধ্যে পুরুষ ১২ হাজার ৫৬২ জন এবং নারী ১২৭ জন।

অন্যদিকে কুয়েত থেকে ২৪৪ জন নারী শ্রমিকসহ ফিরে এসেছেন ১১ হাজার ২৯৬ জন।

ইরাক থেকে ফেরত আসা নয় হাজার ৭৮৯ জনের মধ্যে ৬০ জন নারী।

কাজ না থাকায় মালয়েশিয়া থেকে ফিরতে হয়েছে ১১ হাজার ৫৭১ জন শ্রমিককে। যাদের মধ্যে পুরুষ ১১ হাজার ৮৪ জন এবং নারী ৪৮৭ জন।

তুরস্ক থেকে ৬৭৯ জন নারী কর্মীসহ ফিরে এসেছেন নয় হাজার ১৮৪ জন। লেবানন থেকে ছয় হাজার ৮৬৯ জন, নারী দুই হাজার ৩৩৩ জন।

কাজের চুক্তি শেষ হওয়ার পর মেয়াদ না বাড়িয়ে সিঙ্গাপুর থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে চার হাজার ৬৭৭ জনকে। যাদের মধ্যে চার হাজার ৬১৮ পুরুষ এবং ৫৯ জন নারী শ্রমিক।

চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় জর্ডান থেকে ফিরেছেন দুই হাজার ২০৪ জন। যাদের মধ্যে পুরুষ ৪০৮ জন এবং নারী ১৭ হাজার ৯৬ জন।

বাহরাইন থেকে দেশে ফিরেছেন এক হাজার ৫৮৮ জন। এসব শ্রমিক দেশটি থেকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করে আউটপাশ নিয়ে দেশে আসেন।

কাজের মেয়াদ শেষ হওয়ায় শ্রীলঙ্কা থেকে ৫৪৮ জন, মরিশাস থেকে ৪৫২ জন, লিবিয়া থেকে ৪৫৫ জন এবং ভিয়েতনাম থেকে ১২১ জন ফেরত এসেছে।

কাজ না থাকায় দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ২২০ জন, কম্বোডিয়া থেকে ১০৬ জন, থাইল্যান্ড থেকে ৮৯ জন, দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ৭১ জন এবং মিয়ানমার থেকে ৩৯ জন দেশে ফিরে আসেন।

রাশিয়া থেকে ফিরেছেন ১০০ জন, নেপাল থেকে ৫৫ জন, যুক্তরাজ্য থেকে ফিরেছেন ১৩৪ জন, হংকং থেকে ১৬ জন।

বাংলাদেশি শ্রমিকদের দেশে ফেরত আসাদের মধ্যে গত ৬ জুলাই ইতালি থেকে করোনা সন্দেহে দেশে ফেরত পাঠানো ১৫১ জনও তালিকায় রয়েছে। এছাড়া আইএম জাপান চুক্তির মাধ্যমে তিন বছরের মেয়াদ শেষে জাপান থেকে ছুটিতে দেশে এসেছেন আটজন কর্মী। এবং অন্যান্য দেশ থেকে ফেরত এসেছে ১২৮ জন।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/০২নভেম্বর , ২০২০)