কক্সবাজার প্রতিনিধি: আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের সঙ্গে সাপ্তাহিক ছুটি যুক্ত হওয়ায় টানা তিন দিনের ছুটিতে এবার কয়েক লাখ পর্যটক ছুটে এসেছেন কক্সবাজারে। এখানকার হোটেল-মোটেল, বাসা-বাড়ি, বিপণিবিতান, রেস্তোরাঁ, সৈকত কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই নেই। করোনা সংক্রমণের মধ্যে লাখো মানুষের এই ভিড়ে নেই স্বাস্থ্যবিধির কোনো বালাই।

টানা তিন দিনের ছুটি উপলক্ষে ১৫ দিন আগেই অগ্রিম বুকিং হয়ে পূর্ণ হয়ে যায় হোটেল-মোটেল-কটেজ ও গেস্ট হাউজগুলো। ফলে রাতে হোটেল-মোটেলে রুম না পেয়ে শহরের বিভিন্ন এলাকার ফুটপাতে অবস্থান নিয়েছেন কয়েক হাজার পর্যটক।

আগে থেকে হোটেল ঠিক না করে বেড়াতে আসায় কক্সবাজারে থাকার জায়গা পাচ্ছেন না পর্যটকেরা। হোটেল-মোটেল-কটেজে জায়গা না পেয়ে হাজারো পর্যটক সৈকতের বালুচরে পায়চারি করে অথবা বিভিন্ন স্থানে রাত কাটাচ্ছেন।

হোটেল মালিকদের সংগঠন ফেডারেশন অব ট্যুরিজম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার-শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির সঙ্গে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ছুটি যুক্ত হওয়ায় এবার রেকর্ডসংখ্যক পর্যটক কক্সবাজারে বেড়াতে এসেছেন। তবে এখন একটি কক্ষে গাদাগাদি করে অতিরিক্ত পর্যটক থাকার সুযোগ নেই। স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাপল বেড ও টুইন বেডে সর্বোচ্চ দুজন অবস্থান করতে পারছেন। কিন্তু সেটাও মানা হচ্ছে না।

জানা গেছে, এই মুহূর্তে লক্ষাধিক পর্যটক রুম পেয়েছেন। অর্ধ-লক্ষাধিক পর্যটক স্বজনের বাসাবাড়িতে অবস্থান নিয়েছেন। আরও কয়েক হাজার পর্যটক রুম না পেয়ে হতাশ। শুক্রবার ও শনিবার রাত আনুমানিক পৌনে ১১টায় সরেজমিনে দেখা যায়, হোটেল মোটেল জোনের সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে আছে গ্রুপভিত্তিক আগত দেড় শতাধিক পর্যটক। তারা সকাল থেকে হোটেল-মোটেলে চেষ্টা করেও রুম পাননি। এখন ভরসা শুধুই ফুটপাত। এরকম বিভিন্ন পয়েন্টে লক্ষাধিক পর্যটক সড়কের পাশে অবস্থান করছেন।

বরিশাল থেকে আসা জহির উদ্দিন বলেন, ছুটি পেয়ে খুশি হয়ে বন্ধু-বান্ধব মিলে বেড়াতে এলাম। কিন্তু রুম না পাওয়ায় পুরো ভ্রমণের আনন্দই মাটি।

রুম না পেয়ে ফুটপাতে বসে থাকা রুবেল বলেন, ছুটি পেয়ে আমরা বন্ধুরা গ্রুপ করে কক্সবাজার বেড়াতে এসেছি। কিন্তু রাতে ওই আনন্দ মাটি করে দিলো হোটেল রুম। রুম না পেয়ে ২৫ বন্ধুসহ এখন রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছি।

শহরের সুগন্ধা-সাংস্কৃতিক কেন্দ্র মোড়েও হোটেলের অপেক্ষায় বসে থাকতে দেখা গেছে শতাধিক পর্যটককে। এর মধ্যে নারী ও শিশুদের দুর্ভোগ চরমে।

আগের দিন হোটেলে কক্ষ না পেয়ে বিপুলসংখ্যক মানুষকে সঙ্গে আনা বাস, বিভিন্ন পরিবহন সংস্থার টিকিট কাউন্টার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, খাবারের রেস্তোরাঁ, সৈকতের বালুচরে বসার চেয়ার, হোটেলের অভ্যর্থনাকক্ষ এবং স্থানীয় লোকজনের বাসাবাড়িতে থেকে সময় পার করতে হয়েছে। ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত লোকজনের এই সমাগম লেগে থাকবে বলে ধারণা হোটেলমালিকদের।

হোটেল মালিকেরা বলেন, শহরের ৪০ থেকে ৫০টি উন্নতমানের হোটেল-মোটেলের অধিকাংশ কক্ষ দেড় বছর ধরে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের কর্মরত বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তাদের দখলে থাকায় বিপুলসংখ্যক পর্যটক সমস্যায় পড়েছেন। ভবিষ্যতেও এ সংকট থাকতে পারে। এ ক্ষেত্রে অগ্রিম হোটেলকক্ষ বুকিং দিয়েই ভ্রমণে আসা উচিত।

পর্যটকেরা অভিযোগ করেন, কয়েক হাজার পর্যটক বাসে কিংবা সৈকতে পায়চারি করে রাত পার করলেও তাদের গোসল ও পয়নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নিয়ে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। বিশেষ করে নারী ও শিশুদের এই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বেশি। সৈকতের লাবণী ও সুগন্ধা পয়েন্ট ছাড়া শহরের অন্য কোথাও শৌচাগার কিংবা চেঞ্জিং রুম নেই।

হোটেল মালিকরা জানান, লকডাউন-পরবর্তী সময়ে ছুটির সুযোগে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনের ফাঁকে আগে থেকেই ৯০ ভাগ পর্যটক সেন্টমার্টিনের হোটেল এবং কটেজে বুকিং দিয়েছেন।

এমনকি হোটেল-কটেজ পরিপূর্ণ হলে হাজারো পর্যটক সৈকতের বালিয়াড়িতে রাত কাটিয়েছেন বলে জানা গেছে। অনেকেই আবার সেন্টমার্টিনে রুম না পেয়ে ঘর ভাড়া করে নিয়েছেন।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মামুনুর রশীদ জানান, পর্যটক হয়রানি বন্ধে হোটেল-মোটেল ও রেস্তোরাঁয় মূল্য তালিকা টানানোর নির্দেশনা পালন হচ্ছে কি না তদারকি চলছে নিয়মিত। সৈকতের লাবণী, সুগন্ধা, কলাতলীসহ ১১টি পয়েন্টে স্থাপন করা হয়েছে তথ্য কেন্দ্র (ইনবক্স)।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তায় সব সময় সতর্কাবস্থায় রয়েছে পুলিশ। পর্যটকদের অনাকাঙ্ক্ষিত হয়রানির শিকার রোধে পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে এবং ছদ্মবেশে নারী-পুরুষ পুলিশ সদস্যরা সৈকতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের পুলিশ সুপার মো. জিল্লুর রহমান বলেন, পর্যটক নিরাপত্তায় সৈকত এলাকায় পোশাকধারী পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। সাদা পোষাকধারী পুলিশও পর্যটকদের নিরাপত্তায় কাজ করছে।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১)