দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: লকডাউনে হাসপাতাল থেকে ফেরার পথে বা কর্মস্থলে যাওয়ার সময় একের পর হেনস্থার ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে চিকিৎসকরা।  অন্তত পাঁচ জন চিকিৎসকের পরিচয় পাওয়ার পরও পুলিশ তাদের সঙ্গে অন্যায্য আচরণ আর জরিমানার ঘটনায় প্রতিকার চেয়ে সরকারকে চিঠিও দেয়া হয়েছে।

চিকিৎসকদের বিভিন্ন সংগঠন যোগাযোগ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গেও। নেতারা বলছেন, মহামারির এই সময়ে তারা কর্মবিরতির মতো কঠোর কর্মসূচিতে যেতে চান না। তবে এভাবে চলতে থাকলে প্রতীকী বিরতির কথাও ভাবা হচ্ছে।

গত ১৪ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের জন্য কঠোর বিধিনিষেধ দেয়া হলেও সেটি আরও এক সপ্তাহ বাড়ানো হয়েছে।

এই সময়ে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হওয়া নিষেধ। অনুমোদিত ব্যক্তি ছাড়া বাকিদের বাইরে গেলে নিতে হচ্ছে মুভমেন্ট পাস। তবে চিকিৎসকদের ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য নয়। তারা অনুমোদিত ব্যক্তিদের মধ্যেই পড়েন।

গত ছয় দিনে অন্তত পাঁচ জন চিকিৎসক হয়রানিতে পড়েছেন খোদ ঢাকা শহরে। পরিচয়পত্র দেখানোর পরেও একজনকে জরিমানা করা হয়েছে। একজনের গাড়িতে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের স্টিকার, গায়ে অ্যাপ্রোন থাকার পরেও পরিচয়পত্র দেখাতে জেদাজেদির এক পর্যায়ে আপত্তিকর মন্তব্য করার অভিযোগ উঠেছে।

এর মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর চিকিৎসকদেরকে পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখতে বলেছে। তবে চিকিৎসকদের সংগঠন বিএমএ বলছে, সিংহভাগ চিকিৎসকেরই কোনো পরিচয়পত্র নেই। সেখানে কীভাবে তারা এটা সঙ্গে রাখবে।

চিকিৎসকদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন-বিএমএ মহাসচিব ইহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল বলেন, ‘চিকিৎসকদের হয়রনি বন্ধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তুর ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, এভাবে চিকিৎসক হয়রানি চলতে থাকলে আমার ঠিকভাবে কাজ করতে পারব না, চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হবে। এখনও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি এটা দুঃখজনক।’

পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা পালন করা কঠিন উল্লেখ করে এই চিকিৎসক নেতা বলেন, ‘অধিদপ্তরের জানা উচিত দেশের ৮০ শতাংশ চিকিৎসকের কাছে কোনো ডাক্তরি পরিচয়পত্র নেই।’

প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, ‘শুনেছি অনেক চিকিৎসক নাকি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে রাস্তায় বাধাপ্রাপ্ত হয়েছেন। তাদের কাছে নাকি মুভমেন্ট পাস চাওয়া হয়েছে। কেউ কেউ আবার নাকি মামলার শিকারও হয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘পরিচয় দেয়ার পরও তার সঙ্গে এটা করা উচিত হয়নি; যেহেতু তিনি জরুরি পরিষেবায় নিয়োজিতদের মধ্যে পড়েন। আশা করি, এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। পরিস্থিতি এভাবে চলতে পারে না। চিকিৎসকরা কারো সঙ্গে প্রতিহিংসা চাই না। এর একটি সুষ্ঠু সমাধান হওয়া উচিত।

চিকিৎসকদের সংগঠন বাংলাদেশ ডক্টরস ফাউন্ডেশন, বিডিএফ এর প্রধান সমন্বয়ক নিরুপম দাশ বলেন, ‘আমাদের এই সংগঠনের পক্ষ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। অতি উৎসাহী পুলিশ সদস্যরা এই কাজগুলো করছেন। এতে স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হওয়ার বড় ধরনের ঝুঁকি রয়েছে।’

চিকসকদের আরেক সংগঠন ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেফটি, রাইটস অ্যান্ড রেস্পন্সিবিলিটিজ, এফডিএসআর এর মহাসচিব শেখ আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘নির্দেশনায় বলা আছে, চিকিৎকরা মুভমেন্ট পাসের আওতামুক্ত থাকবেন। তারপরও কিছু পুলিশ কর্মকর্তা এ কাজটি করেছেন। আমরা এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমরা আশা করবো, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, এ ব্যাপারে দ্রুতই ব্যবস্থা নেবেন। পুলিশের নির্দেশনা উপেক্ষা করে যারা এ রকম হয়রানি করছে, আমরা তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।’

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/১৯ এপ্রিল, ২০২১)