দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: ভারতীয় বাংলা সংগীতের রিয়্যালিটি শো `সারেগামাপা ২০২০`-এর চূড়ান্ত পর্বে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন অর্কদীপ মিশ্র। দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছেন নীহারিকা এবং তৃতীয় হয়েছেন বিদীপ্তা। কিন্তু চ্যাম্পিয়ন হিসাবে অর্কদীপকে পছন্দ করছে না নেটিজেনদের একটা বড় অংশ। এরই মধ্যে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছেন অনুষ্ঠান সারেগামাপা এবং এর বিচারকরাও। এমন পরিস্থিতিতে লাইভে এসে এমন কটাক্ষের জবাব দিয়েছেন অর্কদীপ।

ফেসবুক লাইভে অর্ক বলেন, `অনেক শুভেচ্ছা পেয়েছি। সবাইকে ধন্যবাদ জানানো দরকার ছিল, কিন্তু সেটা হয়ে ওঠেনি। কারণ, আমার দুটো হাত, একটা ফোন, এ জন্য আমি দুঃখিত। যদিও যে কজনকে পারা যায় আমি চেষ্টা করেছি রিপ্লাই দিতে।`

প্রতিযোগিতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, `এবারের প্রতিযোগিতাটা কেবল একটা অনুষ্ঠান ছিল না, এটা ছিল একটা যুদ্ধ। যখন সব মানুষ প্রাণের ভয়ে ঘরবন্দী ছিল, সে রকম একটা সময়ে দাঁড়িয়ে আমরা এ অনুষ্ঠান শুরু করেছিলাম। এত বড় একটা রিয়েলিটি শোকে সাত-আট মাস টেনে নিয়ে আসার পর একটা রেজাল্ট পেয়েছি। সেই রেজাল্টে কেউ খুশি, কেউ অখুশি, সেটাই স্বাভাবিক। এ নিয়ে আমার কোনো মত নেই। অনেকে দেখছি আমার পক্ষে বলছেন, সেটা আমার ভালো লাগছে। যারা আমার বিপক্ষে বলছেন, সেটাও আমার ভালো লাগছে। শিল্পীর সার্থকতা সেখানেই, যখন তাঁর কর্ম আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে ওঠে। সেই আলোচনা সব সময় একজনের পক্ষেই যাবে, শুভকামনায় ফোন ভরে উঠবে, ব্যাপারটা সে রকম নয়। যাঁরা আলোচনা-সমালোচনা করছেন সবার জন্য ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, শুভেচ্ছা। এই জন্য যে আপনারা কাউকে না কাউকে সাপোর্ট করছেন, আলটিমেটলি সারেগামাপাকেই সাপোর্ট করছেন। আপনারা অনুষ্ঠানটি দেখেছেন বলেই আমাদের অস্তিত্ব টিকে রয়েছে।`

মানুষের কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য প্রসঙ্গে অর্কদীপ বলেন, `মানুষের হাতে এখন ফোন, ইন্টারনেট। এখন মানুষ শচীন টেন্ডুলকারকেও ছাড়ে না। জাদেজা একটা রান নিতে ভুল করলে তাঁর ফ্যামিলিকেও হেনস্তা করা হয়। তাঁরা ওই মাপের ব্যক্তিত্ব হয়েও বাদ যান না, সেখানে আমি তো কিছুই না। সেটা আশ্চর্যের কিছু না। আমার লড়াইটা শুরু হয়েছিল আরও আগে। আমি স্বাধীন শিল্পী হিসেবে আমার সংগীতযাত্রা শুরু করেছিলাম। “দ্য ফোক ডায়রিজ” নামে আমাদের একটা ব্যান্ড আছে। আমাদের একটা মিউজিক ভিডিও জাতীয় পুরস্কার পেয়েছে। “খ্যাপা শিপ” নামে একটা ভিডিও ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে ২০১৮ সালে। প্রতিষ্ঠিত মিউজিশিয়ানদের খবর সবাই জানে, কিন্তু যারা স্বাধীন মিউজিশিয়ান, তাদের কথা কেউ জানে না। আমি সারেগামাপায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছি, সেটা তো আমার হাতে ছিল না। যাঁরা এতে অখুশি হয়েছেন তাঁদের বলি, খেতাব বা পুরস্কার বা আমাকে সেটা দেওয়ার সিদ্ধান্তটা আমার হাতে ছিল না। আমার পরিবার, গুরু বা গ্রুমারদের হাতে ছিল না। তবে আপনাদের মন্তব্য দেখে এখন আমারও মনে হচ্ছে, আমাকে চ্যাম্পিয়ন না করলেই হতো। তাহলে এত অশান্ত পরিবেশ তৈরি হতো না। আমি ব্যক্তিগতভাবে অশান্তিতে নেই। কিন্তু (বিচারক) মিকা সিং, আকৃতি কক্কর, শ্রীকান্ত আচার্য, জয় সরকার, ইমন চক্রবর্তীদের গালমন্দ করা হচ্ছে। কোনো জাজকে যেখানে ছাড় দেওয়া হচ্ছে না, সেখানে আমাকে দেওয়া হবে কেন। শেষ ছয় প্রতিযোগীকেও ছাড়া হচ্ছে না। অনুষ্কার মতো বাচ্চা মেয়েকে ছাড়া হচ্ছে না, আমি তো বকা খাবই।`

সমালোচকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, `আপনাদের বলার অধিকার আছে, কারণ আপনাদের হাতে স্মার্টফোন আছে, বলতেই পারেন। কিন্তু আমার পরিবার আমার মা-বাবাসহ বাদবাকি মানুষদের কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করে ছোট করতে পারেন না। আপনারা নিজেদের ছোট করছেন। এটুকু বিবেচনা করা উচিত যে যাকে-তাকে, যখন-তখন যা খুশি তাই বলা যায় না। পৃথিবীতে এত রকম আইন রয়েছে, এসব ব্যাপার ফেস করার জন্য আইন হওয়া জরুরি। আজ আমার সঙ্গে এ রকম হয়েছে বলে বলছি না। আরও অনেক শিল্পী রয়েছেন, যাঁরা প্রতিনিয়ত অনেক কুরুচিকর মন্তব্যের শিকার হচ্ছেন। এ রকম একটা আইন হওয়া উচিত, যাতে হাতে ইন্টারনেট আর স্মার্টফোন থাকলেই একটা মানুষ অন্যকে যা খুশি তাই বলতে না পারে।`

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/২১ এপ্রিল, ২০২১)