আব্দুল্লাহ শুভ,দ্য রিপোর্ট: সবচেয়ে নিরাপদ, সবচেয়ে বেশি কার্যকর এবং প্রতি মাসে এক কোটি ডোজ তৈরীর সক্ষমতা থাকা সত্বেও দেশীয় ঔষধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেকের উদ্ভাবিত  টিকা ’বঙ্গভ্যাক্স' তৈরীর অনুমোদন দিতে গড়িমসি করছে ‘বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদ’ (বিএমআরসি)। বারবার অনুমোদন দেওয়ার কথা চূড়ান্ত করেও শেষ পর্যন্ত অনুমোদনের চিঠিটি এখনো হাতে পায়নি গ্লোব বায়োটেক কর্তৃপক্ষ। অথচ, দেশে করোনার টিকা সংকট তৈরী হয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে করোনার ভয়াবহতা এবং দেশে টিকার সংকটকে অগাহ্য করে, ‘বঙ্গভ্যাক্স’ টিকা তৈরীর অনুমোদন দিতে সময়ক্ষেপণের সুযোগ নেই বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

 

 

 

এদিকে, বার বার অনুমোদন দেওয়ার কথা বলে অনুমোদন না দেওয়াকে ’বিএমআরসি‘র চূড়ান্ত দায়িত্বহীনতা বলে মনে করছে গ্লোব কর্তৃপক্ষ। তারা বলছে, অভ্যন্তরীণ কোন চাপেই তারা অনুমোদন দিতে গড়িমসি করছে।

বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা উৎপাদন করছে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট। সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে টিকা কিনছে বাংলাদেশ সরকার।এই টিকা সরবরাহ করছে বেক্সিমকো ফার্মা। টিকা সরবরাহে বেক্সিমকোর একচেটিয়া আধিপত্য ধরে রাখতে, বেক্সিমকোর প্ররোচনাতেই সরকার বঙ্গভ্যাক্সকে অনুমোদন দিচ্ছেনা বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দেশের শীর্ষস্থানীয় এক মহামারী বিশেষজ্ঞ দ্য রিপোর্টকে বলেন - ‘সরকার আসলে বঙ্গভ্যাক্সকে অনুমোদন দিতে পারছে না বেক্সিমকোর চাপের কারণেই। বঙ্গভ্যাক্সকে অনুমোদন দিলে বাজারে বেক্সিকোর আধিপত্য বলতে গেলে থাকে না। কারণ গ্লোব মাসে কোটিখানেক ডোজ উৎপাদন করতে সক্ষম । এবং এ টিকা অধিক কার্যকরী বিধায় বাইরে থেকে টিকা আনার প্রয়োজন পড়বে না। ব্যবসায়িক স্বার্থই এখানে বড় হয়ে দাড়িয়েছে’ ।

২০১৯ সালে চীনের উহান থেকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসের তান্ডবে সারা বিশ্বের মানুষের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থায় একমাত্র আশার আলো হয়ে আবির্ভাব হয় করোনার টিকার।বিশ্বখ্যাত দুই ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানি এষ্ট্রেজেনেকা ও ফাইজারের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি দেশের টিকার আবিস্কারের খবরে ভরসা পায় পৃথিবীর মানুষ।

২০২০ সালের মার্চে বাংলাদেশেও আঘাত হানে করোনা ভাইরাস। এতে দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে। অর্থনৈতিক ধসের শঙ্কা তৈরী হয়। এরই মধ্যে দেশের অন্যতম ঔষধ তৈরী প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেক ২০২০ সালের ২জুলাই কোভিড-১৯ এর টিকা আবিস্কার ঘোষণা দেয় । গ্লোব বায়োটেক লিমিটেডের রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ডিপার্টমেন্টের প্রধান ডা. আসিফ মাহমুদ ভ্যাকসিনটি সম্পর্কে বিস্তারিত বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে করোনার ভ্যাকসিনে সফল হয়েছি। প্রাণী পর্যায়ে এটা সফল।মানবদেহেও সফলভাবে কাজ করবে এই ভ্যাকসিন ‘। এতে দেশের মানুষের মধ্যে আশার সঞ্চার হয় এবং দেশে বিদেশে দেশের সুনাম বৃদ্ধি ঘটে। গ্লোব বায়োটেক এ টিকার নামকরণ করে ‘বঙ্গভ্যাক্স’ ।

পরবর্তীতে টিকা আবিস্কারের ঘোষণা দেওয়ার পর বেশে কয়েক মাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত মানবদেহে প্রয়োগের (ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল) নৈতিক অনুমোদন দেয়নি বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদ (বিএমআরসি)। অথচ গ্লোবের পক্ষ থেকে প্রথমেই বলা হয়েছিল, সব ধাপ পার হতে পারলে আগামী ৬ থেকে ৭ মাসের মধ্যে টিকা বাজারে আনা সম্ভব হবে।

কয়েক মাস আগে আবেদন করলেও এখন পর্যন্ত বঙ্গভ্যাক্স মানবদেহে প্রয়োগের (ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল) নৈতিক অনুমোদন দেয়নি বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদ (বিএমআরসি)। এ বছেরের গত ২৫ এপ্রিল বিএমআরসির চেয়ারম্যান চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী জানিয়েছিলেন, এক সপ্তাহের মধ্যে অনুমোদন দেয়া হবে। সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এখনো সে অনুমোদন পায়নি গ্লোব বায়োটেক।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তালিকায় যে ১৫৬টি টিকা পরীক্ষামূলক প্রয়োগের পূর্বাবস্থায় আছে, তার মধ্যে গ্লোবের তিনটি টিকা আছে। গ্লোব কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, তারা তিনটি টিকা উদ্ভাবন করেছে। এগুলো হলো ডি ৬১৪ ভেরিয়েন্ট এমআরএনএ, ডিএনএ প্লাজমিড ও এডিনোভাইরাস টাইপ-৫ ভেক্টর।

এ বিষয়ে গ্লোব ফার্মা গ্রুপের চেয়ারম্যান মো.হারুনুর রশিদ দ্য রিপোর্টকে বলেন, সরকার আমাদের পক্ষে থাকলেও বিএমআরসি কেন অনুমোদন দিচ্ছেনা সেটা বুঝতে পারছি না । এ টিকার এক ডোজই যথেষ্ট । আমাদের প্রতিষ্ঠানের সব প্রস্তুতি আছে এবং কি মাসে এক কোটি ডোজ টিকা উৎপাদনের ক্ষমতা আছে অথচ অনুমোদন কেন পাওয়া যাচ্ছেনা সেটা একটি রহস্য’।

এ বিষয়ে বিএমআরসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী দ্য রিপোর্টকে বলেন, সরকারের নির্দেশনাতেই আমরা গ্লোবের টিকার অনুমোদন দিচ্ছিনা। নিজেকে চুনোপুটি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ক্যাবিনেট থেকেই এ বিষয়ে নির্দেশনা রয়েছে। এখানে বিএআরসির কিছু করণীয় নেই বলে জানান তিনি। গ্লোব বেক্সিমকোর কোন চাপ অনুভব করেছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন –’এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবোনা’।

দ্য রিপোর্ট/এএস/৩০ এপ্রিল ২০২১