দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: না ফেরার দেশে চলে গেলেন চলচ্চিত্রকার ও সাহিত্যিক বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত। গুণী এই সৃজনকর্মীর প্রয়াণে বাংলা চলচ্চিত্র ও সাহিত্য জগতে এক সোনালি অধ্যায়ের অবসান হলো। বৃহস্পতিবার (১০ জুন) সকাল ৬টার দিকে ঘুমের মধ্যেই দক্ষিণ কলকাতায় নিজ বাসভবনে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৭।

দীর্ঘদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত অসুখে ভুগছিলেন বুদ্ধদেব। কিডনির সমস্যাও ছিল তার। পারিবারিক সূত্রে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবর, দীর্ঘদিন ধরেই তার ডায়ালাইসিস চলছিল। বৃহস্পতিবার আরও এক দফায় ডায়ালাইসিস হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সকালে বুদ্ধদেবের স্ত্রী সকালে ডাকতে গিয়ে দেখেন, সাড়া মিলছে না প্রখ্যাত এই পরিচালকের। পরে তাকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।

১৯৪৪ সালে ১১ ফেব্রুয়ারি পুরুলিয়ার আনাড়ায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত। তার বাবা রেলে চাকরি করতেন। ১২ বছরে হাওড়ার স্কুলজীবন শুরু করেন। তারপর অর্থনীতি নিয়ে পড়াশোনা করেছিলেন স্কটিশ চার্চ কলেজ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। অর্থনীতির অধ্যাপক হিসেবেই কর্মজীবন শুরু করেছিলেন। এরই মধ্যে চার্লি চ্যাপলিন, আকিরা কুরোয়াওয়া, রবার্তো রোসেল্লিনির মতো চলচ্চিত্র দুনিয়ার মহীরুহদের কাজের প্রতি ভালোবাসা গড়ে ওঠে। ১৯৭৮ সালে মুক্তি পায় তার প্রথম ফিচার ফিল্ম ‘দূরত্ব’।

সেই থেকে শুরু। তারপর থেকে ছক ভেঙে একাধিক সিনেমা করে গেছেন বুদ্ধদেব। ‘তাহাদের কথা’, ‘উত্তরা’, ‘চরাচর’, ‘মন্দ মেয়ের উপাখ্যান’, ‘বাঘ বাহাদুর', ‘গৃহযুদ্ধ’র মতো অসামান্য সিনেমার কারিগর তিনি। ‘উত্তরা’, ও ‘তাহাদের কথা’র জন্য পেয়েছিলেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন ও ঋত্বিক ঘটক উত্তর যুগে বাংলা সিনেমাকে তুলে ধরেছেন বিশ্বে দরবারে। চলচ্চিত্র সমালোচকদের মতে, সিনেমার মাধ্যমে বিভিন্ন প্রশ্ন তুলে ধরেছেন তিনি। নির্দিষ্ট, ধরাবাধা ছকে এগিয়ে যাননি, বরং ছক ভেঙে এগিয়ে যাওয়াই ছিল বুদ্ধদেবের স্বকীয়তা।

বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের প্রয়াণে চলচ্চিত্র জগতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। পরিচালক তরুণ মজুমদার বলেন, ‘আমি হতবাক। সৃষ্টিশীলতার ময়দানের এক বিরাট ক্ষতি।’ পরিচালক গৌতম ঘোষ বলেন, ‘এই ভয়ংকর সময় এই খবরটা আরও মর্মান্তিক। শরীর খারাপ ছিল। তবে কবিতা লিখছিলেন। ফোনে কথা বলছিলেন। একসঙ্গে স্বপ্ন দেখছিলাম। তার চলচ্চিত্র যাতে সংরক্ষিত হয়, সেই আর্জি জানাবো।’

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/ ১০ জুন, ২০২১)