শরীফুল ইসলাম,দ্য রিপোর্ট : লকডাউনে বন্ধ থাকা প্রায় ৪ হাজার কমিউনিটি সেন্টারে প্রতিমাসে লোকসান হচ্ছে শতকোটি টাকা। তাই, স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক আসন খালি রেখে সেন্টারগুলো খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ কমিউনিটি সেন্টার কনভেনশন হল ও ক্যাটারিং অ্যাসোসিয়েশন (বিসিসিএ)। রবিবার (১৩ জুন) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির পক্ষ থেকে এ দাবি জানানো হয়।

 

 

 

সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সভাপতি আলহাজ শাহ জাকির হোসেন বলেন, ‘বর্তমানে করোনা পরিস্থিতিতে সামাজিক অনুষ্ঠান বন্ধ থাকায় চার হাজার প্রতিষ্ঠানের লোকসান হচ্ছে প্রতিমাসে প্রায় শত কোটি টাকা। এর সঙ্গে ডেকোরেটরের ক্ষতির পরিমাণ আরও প্রায় ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকা। কমিউনিটি সেন্টার, ডেকোরেটর, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টসহ অন্যান্য খাতের আয়হীন প্রায় ৫ লাখ মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করছে। তাদের পরিবারে নেমে এসেছে বিপর্যয়কর পরিস্থিতি। অনেকের খাবার কেনার মতো টাকাও নেই। সব মিলিয়ে এই খাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ২০ লাখের মতো মানুষ জড়িত রয়েছে। তিনি আরও বলেন, অনুষ্ঠানের আয়োজন না থাকায় জীবিকার অনিশ্চয়তায় আছে তারা। তাদের মধ্যে যারা ফটোগ্রাফি, সাজসজ্জা, লজিস্টিক সেবা দেয়, ফুল সরবরাহ করে, বোর্ড মিস্ত্রি, ডেকোরেশন ও ক্লিনিং কাজসহ বিভিন্ন কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন, তারা সবাই এখন বেকার হয়ে পড়েছেন। মহাবিপাকে পড়েছেন কমিউনিটি সেন্টার ব্যবসায়ীরা। বন্ধ হয়ে গেছে তাদের আয় রোজগার। ফলে মানবেতর জীবন যাপন করছেন তারা। বছর জুড়ে বুকিং দেওয়া সবধরনের অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে। বিপুল পরিমাণ এই ক্ষতির বোঝা সামলে ব্যবসায়ীদের ঘুরে দাঁড়ানোটা প্রায় অসম্ভব ও চ্যালেঞ্জিং।’

জাকির হোসেন বলেন, ‘যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ঢাকা শহরের প্রতিটি এলাকায় সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে উঠেছে কমিউনিটি সেন্টার। এসব কমিউনিটি সেন্টারে পানচিনি, বাগদান, গায়েহলুদ, বিবাহ, বিবাহোত্তর সংবর্ধনা, জন্মদিনসহ নানা অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। এ সব অনুষ্ঠানে অন্দর সজ্জাসহ অনেক কাজ কমিউনিটি সেন্টার কর্তৃপক্ষ বা তাদের মনোনীত লোক করে থাকে। রাজধানীতে সরকারি-বেসরকারি কমিউনিটি সেন্টার ও কনভেনশন সেন্টারের সংখ্যা ছোট-বড় মিলিয়ে প্রার চারশ’।

সারা দেশে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান রয়েছে প্রায় চার হাজার। গড়ে ৫০ জন করে স্থায়ী কর্মচারী ধরলে দেশে প্রায় ২ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা রয়েছে।

কমিউনিটি সেন্টার খোলার দাবি জানিয়ে জাকির হোসেন বলেন, ‘কমিউনিটি সেন্টারগুলো বন্ধ থাকার পরও ঘরভাড়া, ইনকাম ট্যাক্স, হোল্ডিং ট্যাক্স, ভ্যাট, কর্মচারীর বেতন, বিদ্যুৎ বিল, ওয়াসা বিল, গ্যাস বিল ইত্যাদি পরিশোধ করতে হচ্ছে। একেকটি কমিউনিটি সেন্টার কমপক্ষে পাঁচ হাজার থেকে ৩০ হাজার বর্গফুট জায়গা নিয়ে স্থাপিত। যেখানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে একশ’ বা দুইশ’ লোকের অনুষ্ঠান করা মোটেই অসম্ভব নয়। একটি হোটেলে এক হাজার/দুই হাজার বর্গফুট জায়গার মধ্যে যেখানে একশ’ বা দুইশ’ লোকের খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়, সেখানে একটি কমিউনিটি সেন্টারের বিশাল ও সু-পরিসর জায়গায় একশ’ বা দুইশ’ লোকের খাওয়ার ব্যবস্থা করা আরও সহজ ও স্বাস্থ্যসম্মত। তাই মানবিক কারণে সরকারি স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্বল্প পরিসরে অনুষ্ঠান করার সুযোগ দেওয়ার জন্য বিনীত অনুরোধ করছি।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কমিউনিটি সেন্টার কনভেনশন হল ও ক্যাটারিং অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন, চট্টগ্রাম কমিউনিটি সেন্টার মালিক সমিতির সভাপতি হাজী মো. সাহাব উদ্দিন প্রমুখ।

দ্য রিপোর্ট/এএস/১৩জুন ২০২১