দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: ফ্রান্সের বিশ্বকাপ জয়ী তারকা। কদিন আগেও রিয়াল মাদ্রিদের কোচ ছিলেন। ফুটবল প্রেমিরা নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন জিনেদিন জিদানের কথা বলা হচ্ছে। হ্যাঁ ঠিক তাই। আজ সাবেক এ ফরোয়ার্ডের ৪৯তম জন্মদিন। শুভ জন্মদিন জিদান।

১৯৭২ সালের ২৩ জুন সামান্য মুদি দোকানি ইসমাঈলের ঘর আলোকিত করে সবার অগোচরে জন্মগ্রহণ করেন ফুটবল নক্ষত্র জিনেদিন ইয়াজিদ জিদান। সংক্ষেপে তাকে জিনেদিন জিদান বা ‘জিজু’ নামে ডাকা হয়।

ছোটবেলা থেকেই জিদানকে দারিদ্রের সাথে যুদ্ধ করতে হয়েছে। শৈশবে বেড়ে উঠেছেন এমন একটি শহরের আলো বাতাস গায়ে মেখে যেখানে বেকারত্ব এবং আত্নহত্যার হার ছিলো আশংকাজনক ভাবে বেশি। খেলা শুরু করার আগে ছোট্ট সাইকেল নিয়ে শহর দাপিয়ে বেড়াত। জিদানের পাঠশালা বলতে ছিল শহরের রাস্তাঘাট।

১৪ বছর বয়সে জিদান নাম লেখান কান ক্লাব এর জুনিয়র লেভের ফুটবল টিমে। সে সময় ইউরোপিয়ান কাপের ফ্রান্স বনাম পর্তুগাল ম্যাচে বলবয়ের কাজ করেছেন। মূল দলে সুযোগ পেতে তাকে অপেক্ষা করতে হয় ১৭ বছর পর্যন্ত। আর গোলের দেখা পেতে আরও প্রায় দুই বছর কেটে যায় (১৮ মে ১৯৮৯ সাল)। চার নাম্বার পজিশনে থেলে লীগ শেষ করে তার দল। উয়েফা ক্লাবে জায়গা করে নেয়। এমন সময় ক্লাবের বেশ কিছু ভালো প্লেয়ার অন্য দলে চলে যায়। খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি উয়েফা কাপে। এমনকি লীগে রেলিগেশনেও পড়ে অবনমন হয় দ্বিতীয় বিভাগে।

১৯৯২-৯৩ সালে জিদান “কান” ছেড়ে চলে এলেন ফ্রান্সের ক্লাব বোরডক্সে। পরের চার বছর এই ক্লাবেই খেলেছেন।

বোরডক্সে জিদানের চমৎকার নৈপুন্য চোখে পড়ে ইতালিয়ান ক্লাব জুভেন্টাসের। ১৯৯৬ সালে জুভেন্টাসে এসে প্রথম পরিচয় ঘটলো বিজেন্তে লিজারাজু আর ক্রিস্টোফার ডুগারির সাথে। পরবর্তীতে এই ত্রয়ী মিলেই ১৯৯৮ সালে ইতিহাস গড়েছিলেন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে। জুভেন্টাসে খেলাকালীন সময়ে জুভেন্টাস দুইবার সিরিএ শিরোপা এবং ১৯৯৭ ও ১৯৯৮ সালে পরপর দুইবার উয়েফা লীগের ফাইনালে উঠলেও দুর্ভাগ্যজনকবশত দুবারই রিয়াল মাদ্রিদের কাছে হেরে যায়।

২০০১ সালে জুভেন্টাস ছেড়ে যোগ দেন স্পেনের রিয়াল মাদ্রিদে। জিনেদিন জিদান যখন জুভেন্টাস ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দেন তখন রিয়াল মাদ্রিদকে রেকর্ড পরিমাণ ট্রান্সফার ফি পরিশোধ করতে হয়েছিল। যার পরিমাণ ছিল ৭০.৫ মিলিয়ন ডলার। এত বেশি পরিমাণ আর্থিক লেনদেন ফুটবল বিশ্বে এর আগে কখনো ঘটেনি।

২০০২-০৩ সালে রিয়ালের লা-লীগা জেতার পেছনে বড় অবদান জিদানেরই ছিল। একই বছরে তিনি ফিফার বর্ষসেরা ফুটবলার হন। কিন্তু মাদ্রিদ ছাড়ার সময়টা মোটেই ভালো ছিল না এই কিংবদন্তীর। দলীয় সাফল্য ঢাকা পরে তার ব্যক্তিগত সাফল্য। দল ব্যর্থ হলেও উজ্জ্বল ছিলেন জিদান। ২০০৬ সালে তিনি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলস্কোরার নির্বাচিত হন।

জিনেদিন জিদানের ফ্রান্সের হয়ে অভিষেক ঘটে চেক রিপাবলিকানের বিপক্ষে এক প্রীতি ম্যাচে। ম্যাচে জিদান মূল একাদশে ছিলেন না। ম্যাচে ফ্রান্স ২-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে। সবাই ধরে নিয়েছিলেন ফ্রান্স ম্যাচটি হারছে। বদলি খেলোয়াড় হিসেবে ৬৬ মিনিটে জিদান মাঠে নামেন। ম্যাচ শেষে ফলাফল ২-২, এই দুটি গোলই করেন জিদান। ৩০ গজ দূর থেকে দূর্বল বাম পায়ে শট এবং গোল।

তার কিছুক্ষণ পর কর্নার থেকে উড়ে আসা বলে পেনাল্টি বক্সের মাঝামাঝি মাথা ছুঁয়ে গোল করলেন!

১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপে ফ্রান্স অংশগ্রহণ করতে পারে নি। অনেকটা বিতর্কিতভাবেই ১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপ ফুটবল দলে জায়গা পান জিদান। সে সময় ফ্রান্সের অন্যতম প্লে মেকার ছিলেন “এরিক ক্যান্টোনা”। ক্যান্টোনার নিষেধাজ্ঞার কারণে দলে সুযোগ পান জিদান। কিন্তু সে সময় বিভিন্ন মহল থেকে তীব্র সমালোচনার ঝড় ওঠে। সেই সমালোচনা মাথায় নিয়ে জিদান বিশ্বকাপ খেলতে নামেন জিদান।

জিদান ১৯৯৮ সালের ফিফা বিশ্বকাপজয়ী ফ্রান্স জাতীয় দলের সদস্য ছিলেন। সৌদি আরবের বিপক্ষে বিশ্বকাপে ফ্রান্সের দ্বিতীয় ম্যাচে সৌদি অধিনায়ক ফুয়াদ আমিনকে থুথু মারার অপরাধে জিদানকে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হয় এবং পরবর্তী দুই ম্যাচের জন্য তিনি নিষিদ্ধ হন।এ সময়ে যারা তার পাশে ছিলেন তাদের ভাষ্যমতে আমিন জিদানকে উদ্দেশ্য করে গালিগালাজ করেছিলেন। এই ঘটনাটি ২০০৬ বিশ্বকাপের ফাইনালে ইতালীর বিপক্ষে পাওয়া লাল কার্ড এর ঘটনার সাথে যথেষ্ট সাদৃশ্যপূর্ণ। কোয়ার্টার ফাইনালে ইতালির বিপক্ষে পেনাল্টি থেকে একটি গোল করার পর জিদান টুর্নামেন্ট ফাইনালে ব্রাজিলের বিপক্ষে তার অপর দুইটি গোল করেন।দুটি গোলই তিনি প্রথমার্ধে কর্নার থেকে পাওয়া বল হেড করার মাধ্যমে করেন।এই ম্যাচটিতে ফ্রান্স ৩-০ গোলে ব্রাজিলকে পরাজিত করে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জয়ের গৌরব অর্জন করে। জিদান ম্যান অব দা ম্যাচ নির্বাচিত হন।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/ ২৩ জুন, ২০২১)