দ্য ‍রিপোর্ট প্রতিবেদক: ফেসবুকে ফলোয়ার প্রায় তিন হাজার। ফলোয়ার আরও বাড়াতে ও ব্যক্তিগত ইমেজকে প্রচার করতেই ‘এ মুহূর্তে গ্রাম পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া সংবাদ, হিন্দুদের আক্রমণে এক মুসলিমকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে’ মর্মে উসকানিমূলক পোস্ট দেয় সৈকত মন্ডল। সেই পোস্টের সূত্র ধরে হামলার ঠিক কাছাকাছি একটি মসজিদ থেকে মাইকিং করে রবিউল ইসলাম। সে তৌহিদী জনতাসহ ধর্মপ্রাণ মানুষকে প্রতিরোধের ডাক দেয়। এরপর নিজে একটি ঢিবির ওপর দাঁড়িয়ে উত্তেজনাকর বক্তব্য দিয়ে হামলায় অংশ নেয়।

সম্প্রতি রংপুরের পীরগঞ্জে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার উদ্দেশ্যে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ওই ঘটনায় অন্যতম হোতা সৈকত মন্ডল ও সহযোগী রবিউল ইসলামকে টঙ্গী থেকে গ্রেফতারের পর এতথ্য জানিয়েছে র‍্যাব।

শনিবার (২৩ অক্টোবর) দুপুরে কারওয়ান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সদর দফতরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের চেষ্টায় কুমিল্লা, নোয়াখালী, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, ফেনী এবং রংপুরসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় স্বার্থন্বেষী মহলের অপতৎপরতা লক্ষ্য করা গেছে। এছাড়া সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের লক্ষ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উসকানিমূলক, বিভ্রান্তিকর ও মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির অপচেষ্টা করছে চক্রান্তকারীরা।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে র‍্যাবের গোয়েন্দা শাখা ও বিভিন্ন ব্যাটালিয়নের অভিযানে প্রায় ৩০ জনকে গ্রেফতার করে ইতোমধ্যে আইনের আওতায় নিয়ে এসেছে।

তিনি বলেন, গত ১৭ অক্টোবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্মীয় অবমাননাকর পোস্টকে কেন্দ্র করে রংপুরে পীরগঞ্জের বড় করিমপুর গ্রামে দুর্বত্তরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার উদ্দেশ্যে বেশ কয়েকটি বাড়িঘর, দোকানপাট ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে।

ওই ঘটনায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচারের অভিযোগে রংপুরে পীরগঞ্জ থানায় ৩টি মামলা দায়ের হয়।

মামলার পরিপ্রেক্ষিতে র‍্যাব-১৩ বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসে। গ্রেফতাদের তথ্যে হামলায় নেতৃত্ব তেওয়া ও ঘটনা সংগঠিত করার সংশ্লিষ্টতা সম্পর্কে জানা যায়। ওই ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারে র‍্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায়।

এরই ধারাবাহিকতায়, র‍্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখা ও র‍্যাব-১৩ এর একটি আভিযানিক দল শুক্রবার (২২ অক্টোবর) রাতে টঙ্গী এলাকা থেকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার উদ্দেশ্যে রংপুরের পীরগঞ্জে হামলা ও অগ্নিসংযোগের অন্যতম হোতা সৈকত মন্ডল (২৪) ও রবিউল ইসলামকে (৩৬) গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পীরগঞ্জে ঘটনায় তাদের সংশ্লিষ্টতা সম্পর্কে তথ্য দিয়েছে।

গ্রেফতারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের বরাতে কমান্ডার মঈন বলেন, গ্রেফতর ব্যক্তিরা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অরাজকতা সৃষ্টি এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের লক্ষ্যে হামলা-অগ্নিসংযোগসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার ও মাইকিং করে হামলাকারীদের জড়ো করে বলে জানায়।

গ্রেফতার সৈকত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উসকানিমূলক, বিভ্রান্তিকর ও মিথ্যাচারের মাধ্যমে স্থানীয় জনসাধারণকে উত্তেজিত করে তোলে। সে হামলা ও অগ্নিসংযোগে অংশগ্রহণে জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধ করে। তার নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন হামলায় সরাসরি অংশগ্রহণ করে বাড়িঘর, দোকানপাট ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। সে গ্রেফতার রবিউলকে মাইকিং করে লোকজন জড়ো করতে নির্দেশনা দিয়েছিল বলে জানায়। ঘটনার পর পর সে আত্মগোপনে চলে যায়।

গ্রেফতার সৈকত মন্ডল রংপুরের একটি কলেজের স্নাতকে অধ্যয়নরত। সে বিভিন্ন সময়ে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন উসকানিমূলক এবং বিভ্রান্তিকর পোস্ট প্রদান ও শেয়ার করতো।

এক প্রশ্নের জবাবে কমান্ডার মঈন বলেন, এর আগে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছে পরিতোষ ও উজ্জ্বল। ফেসবুকে উসকানিমূলক মূল পোস্টটি দিয়েছিল পরিতোষ। পরিতোষ আর উজ্জ্বলের মধ্যে বৈরি সম্পর্ক ছিল। পরিতোষ পোস্ট দিয়ে উজ্জ্বলকে বলে ধর্মীয় উসকানিমূলক পোস্ট দিলে তোর কেমন লাগে! এরপর পোস্টটি সে ডিলেট করলেও উজ্জ্বল তা কপি ও সেভ করে। এরপর সেটিই উজ্জ্বল নিজের ফেসবুক পেইজ থেকে প্রচার করে। এরপর সেই পোস্টটি পিক করে সৈকত। সৈকতের মাধ্যমে সেটি জেনেই রবিউল মসজিদে মাইকিং করে ও হামলার নেতৃত্ব দেয় এবং নিজেও অংশ নেয়।

ঠিক কি উদ্দেশ্যে উসকানিমূলক পোস্ট দিয়েছিল সৈকত? জানতে চাইলে কমান্ডার মঈন বলেন, তার (সৈকত) ফেসবুক পেজে ২৭০০/২৮০০ ফলোআপ রয়েছে। সেটিকে সে কাজে লাগিয়েছে ফলোয়ার বাড়ানোর জন্য। পাশাপাশি তার ব্যক্তিগত ইমেজ বাড়বে বলেও মনে করেছিল।

গ্রেফতার রবিউল রংপুরের পীরগঞ্জের হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় অন্যতম উসকানিদাতা। সে স্থানীয় একটি মসজিদের মুয়াজ্জিন। হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার পূর্বে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে মাইকিং এর মাধ্যমে বিভিন্ন উসকানিমূলক ও মিথ্যাচার করে গ্রামবাসীকে উত্তেজিত করে তোলে ও ওই হামলায় অংশগ্রহণের জন্য জড়ো হতে বলে। অতঃপর সে মাইকিংয়ের দায়িত্ব তার আস্থাভাজনকে দিয়ে নিজে সশরীরে অংশগ্রহণ ও নির্দেশনা দেয়।

সে জানায় গ্রেফতার সৈকতের নির্দেশনায় ও প্ররোচনায় সে মাইকিং করাসহ হামলায় অংশগ্রহণ করে। ঘটনা পর সেও আত্মগোপনে চলে যায়। গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/২৩ অক্টোবর, ২০২১)