দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: নির্বাচন কেন্দ্রীক সহিংসতায় সারাদেশে নিহত হয়েছেন মোট ছয়জন। এর মধ্যে মুন্সিগঞ্জে দুজন, নরসিংদী, লক্ষ্মীপুর, খুলনা, যশোরে একজন করে মোট ছয়জন প্রাণ হারান।

সারাদেশ থেকে প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

মুন্সিগঞ্জ: নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার চরাঞ্চলের বাংলাবাজার ও পঞ্চসারে শাকিল ও রিয়াজুল নামে দুজন নিহত হয়েছেন।

আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১০ জন।

রোববার সন্ধ্যার পর এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবু বক্কর সিদ্দিক।

তিনি বলেন, নিহতরা হলেন- বাংলাবাজারের কাচিকাটা গ্রামের হারুন মোল্লার ছেলে শাকিল এবং পঞ্চসারের গোসাইবাগ এলাকার মৃত আলতাফ উদ্দিন শেখের ছেলে রিয়াজুল শেখ।

স্থানীয়রা জানান, সদর উপজেলার বাংলাবাজারের কাইজ্জার চর এলাকায় নির্বাচনের ফলাফল পক্ষে না যাওয়ায় সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার (বই প্রতীকের) প্রার্থী আরাফ বেগমের কর্মী সমর্থকদের হামলায় জয়ী হওয়া (কলম প্রতীকের) মহিলা মেম্বার রাবেয়া বেগমের ভাগনা শাকিলকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ সময় কমপক্ষে আরও ১০ জন আহত হন।

এদিকে একই সময় শহরের উপকণ্ঠ পঞ্চসারের গোসাইবাগ এলাকায় জয়ী হওয়া আনারস প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলম মোস্তফার কর্মী সমর্থকদের হামলায় অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী টেলিফোন প্রতীকের মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকীর চাচাতো ভাই রিয়াজুল শেখ নিহত হন।

ওসি মো. আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, কেন আর কীভাবে এসব ঘটনা ঘটেছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

নরসিংদী: নরসিংদীর রায়পুরার চান্দেরকান্দীতে নির্বাচনী সহিংসতায় আরিফ (২৪) নামে এক সিএনজি চালক গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন।

আজ রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টার দিকে চান্দেরকান্দী এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় পুলিশসহ আহত হয়েছেন কমপক্ষে আরো ৫ জন।

গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ফরিদ নামে আরো একজনকে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে।

স্থানীয়রা জানায়, ভোট গণনা শেষে পুলিশ সদস্যরা যাওয়ার পথে চান্দেরকান্দি এলাকায় এ হামলার ঘটনা ঘটে। পরে দুর্বৃত্তরা এলোপাতাড়ি গুলি করলে সিএনজি চালক আরিফ মারা যায়। বর্তমানে নিহতের লাশ রায়পুরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রয়েছে।

লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে নির্বাচনী সহিংসতায় সাজ্জাদুর রহমান সজিব নামে এক ছাত্রলীগ নেতা নিহত হয়েছে। রোববার (২৮নভেম্বর) বিকেল ৫টার দিকে চাঁদপুর হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।

এর আগে বিকেলে রামগঞ্জ উপজেলার ইছাপুর ইউনিয়নের নয়নপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রের বাইরে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সমর্থকদের সংঘর্ষের ঘটনায় গুরুতর আহত হয় সজিব।

নিহত সজিব রামগঞ্জ উপজেলার ইছাপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি ও একই ইউনিয়নের নয়নপুর গ্রামের মৃত- আব্দুস সাত্তারের ছেলে।

স্থানীয় এলাকাবাসী ও পুলিশ জানয়, রামগঞ্জ উপজেলার ইছাপুর ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতিকের পক্ষে সিলমারা নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে ছাত্রলীগ নেতা সজিবের মাথায় চাপাতি ও লাঠির আঘাতে গুরুতর আহত হয়। পরে এলাকাবাসী আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে চাঁদপুর হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রায়হান মাহমুদ রুপক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

সজিবেরে মাথায় গুরুতর আঘাত লাগায় প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে লক্ষ্মীপুরের পুলিশ সুপার ড. এ এইচ কামরুজ্জামান জানান, বিষয়টি তদন্ত চলছে।

এদিকে, একই উপজেলার নির্বাচনী এলাকা পৃথক স্থান থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্রসহ ৪০ জনকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী। এসয় এলজি, পিস্তল সহ বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।

অপরদিকে, তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে লক্ষ্মীপুর রামগঞ্জে বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে একটি বিশেষ দল ও প্রতিকের পক্ষে প্রকাশ্য ভোট প্রদানের অভিযোগ ও এক স্বতন্ত্র প্রার্থীর গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। একই সঙ্গে ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালানোর অভিযোগও পাওয়া গেছে একাধিক কেন্দ্রে। এসব কেন্দ্রের বাইরে কিছুক্ষণ পর পর ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয়েছে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের তৎপরতায় কোনো ভোট কেন্দ্র দখলের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। এসব ঘটনায় অন্তত ২০ জনকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

অপরদিকে, এজেন্টদের বের করে দেওয়া সহ নানা অভিযোগ এনে লক্ষ্মীপুর পৌরসভার হাতপাখা প্রতিকের মেয়র প্রার্থী মো. জহির উদ্দিন ২টার দিকে ভোট বর্জন করেন।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/২৯ নভেম্বর, ২০২১)