নবীন হাসান, ঠাকুরগাঁও : বয়সের গাছ-পাথর নেই যেন তহমিনা খাতুনের। মুখের বলিরেখায় স্পষ্ট দীর্ঘ জীবনের ঘাত-প্রতিঘাতের ছাপ। সে মুখচ্ছবি দীর্ণ-বিষণ্ন-ম্লান। একাত্তরের দুঃসহ স্মৃতি আজও তাকে তাড়া করে। জীবনের পড়ন্তবেলায় তার চাওয়া একটিই- রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি।

ঠাকুরগাঁওয়ের সীমান্তবর্তী উপজেলা বালিয়াডাঙ্গীর লালাপুর গ্রামে তহমিনার বাড়ি। স্বামী তৈয়ব আলী বেঁচে নেই। আছে ২ ছেলে জয়নাল ও মুজিবুর। দুজনেই পেশায় রিকশা শ্রমিক। কিন্তু মায়ের ভার নেননি তারা। গ্রামে-গ্রামে ঘুরে ভিক্ষা করে খাবার যোগাড় করতে হচ্ছে জনমদুঃখী তহমিনাকে।

১৯৭১ সালে তার বিয়ে তৈয়ব আলীর সঙ্গে। যুদ্ধকালে প্রতিবেশী জংলুর (মৃত) সহায়তায় সেনাদের পাশবিক নির্যাতনের স্বীকার হন তহমিনা। বাংলার আকাশে যখন স্বাধীনতার পতাকা উড়ছিল ঠিক তখন তহমিনা একটি পুত্র সন্তানের জম্ম দেন। তার নাম রাখেন মুজিবুর রহমান।

গত ৪৩ বছরেও স্বাধীনতার সূর্যের আলো এসে পৌঁছায়নি তমিনার জীর্ণ কুটিরে। অনেকের ভাগ্যের চাকা ঘুরে গেলেও এ বীরাঙ্গনা পড়ে আছেন অতল গহ্বরে। পাননি কোনো সরকারি সহায়তা। জোটেনি রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি বা সম্মান। দুঃখ করে বলেন, ‘শেখ সাহেব নেই, তবে আছে তো তার কন্যা শেখ হাসিনা। তিনি তো আমার খোঁজ রাখতে পারেন।’

জেলা প্রশাসক মূকেশ চন্দ্র বিশ্বাস জানান, ‘বীরাঙ্গনাদের যথার্থ সম্মান ও পুনর্বাসনে সরকার কাজ করছে। তহমিনার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে খোঁজখবর নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

(দ্য রিপোর্ট/এনএইচ/ডব্লিউএস/মার্চ ২৬, ২০১৪)