ফারুক আহমেদ পিনু, কুষ্টিয়া : ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ। রাত তখন সাড়ে ১১টা। যশোর ক্যান্টনমেন্ট থেকে সড়ক পথে ১৪৪ জন পাকসেনা সাঁজোয়া বহর নিয়ে কুষ্টিয়ায় এসে পৌঁছে। তারা তিনটি দলে ভাগ হয়ে কুষ্টিয়া শহরের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেয়।

অবস্থান নেওয়া স্থানগুলো হলো জিলা স্কুল, পুলিশ লাইন ও ছোট ওয়ারলেস। ওই রাতেই শহরে জারি হয় লাগাতার সান্ধ্য আইন। পরদিন দুপুর ১২টায় মুক্তিকামী জনতা রাস্তায় বের হলে ব্যাপক ধর-পাকড় শুরু হয়। ওইদিন সেনাদের গুলিতে আমলাপাড়া মোড়ে অজ্ঞাত ৩ জন আর কোর্টপাড়ায় গ্যানা সেন নামে অপর এক ব্যক্তি শহীদ হন।

এ হত্যাকাণ্ডের পর জনতা আরও বিক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠে। পাড়ায় পাড়ায় শুরু হয় আন্দোলন। আন্দোলনে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ পাকিস্তান বাহিনীর উপর হামলার পরিকল্পনা করে। কুমারখালীর কয়া ব্রীজের কাছে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের এক গোপন বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সে সময়ের ছাত্রনেতা রনি রেহমানসহ কয়েকজন মুক্তিকামী যুবক রাতে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের বিজ্ঞান গবেষণাগার থেকে এসিডসহ বোমা তৈরির কিছু সরঞ্জাম নিয়ে আসে। শহরের এনএস রোডে রনি রেহমানের বোনের বাড়ির দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে রাতভর রনিসহ বেশ কয়েকজন ছাত্রনেতা বোমা তৈরি করেন।

এর মধ্যে খবর আসে ২৭ মার্চ সকালে জিলা স্কুল থেকে পাকবাহিনীর একটি বহর শহরের এনএস রোড়ে প্রবেশ করবে। বর্তমান কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন অফিসের সামনে তৎকালীন নেজামতউল্লাহ ভবনের ছাদে আশ্রয় নেন রনি রেহমান।

সকাল সাড়ে ৮টায় পাকবাহিনীর বহরটি ঠিক সিভিল সার্জন অফিসের গেটের সামনে এসে হঠাৎ থেমে যায়। ২ জন সেনা সিভিল সার্জন অফিসের পুরাতন ভবনের ছাদ থেকে তাকে দেখে ফেলে। পাকবাহিনীকে দেখামাত্র রনি হাতবোমা নিক্ষেপের চেষ্টা করেন। কিন্তু তার আগে হানাদাররা তার কপাল লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে। ঘটনাস্থলেই তিনি শহীদ হন।

এরপর আন্দোলন আরও গতিশীল হয়। ৩১ মার্চ মুক্তিবাহিনী বনাম পাক বাহিনীর তুমুল যুদ্ধ শেষে কুষ্টিয়া প্রথমবারের মতো মুক্ত হয়।

(দ্য রিপোর্ট/এফএপি/ডব্লিউএম/মার্চ ২৬, ২০১৪)