মুহম্মদ আকবর, দ্য রিপোর্ট : নানা অসঙ্গতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে গাওয়া হলো না তিন লাখ মানুষের কণ্ঠে সোনার বাংলা। স্বাধীনতা দিবসে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে ‘লাখো কণ্ঠে সোনার বাংলা’ শিরোনামের আয়োজনে অংশ নিয়েছেন ২ লাখ ৫৪ হাজার ৬৮১ জন। তবে এটি আনুষ্ঠানিক হিসাব হলেও অনুষ্ঠানস্থলের আশপাশ থেকে অংশ নেন আরও অর্ধলক্ষাধিক মানুষ। সেই সঙ্গে প্যারেড গ্রাউন্ডে প্রবেশের জন্য সামনের সড়কে অপেক্ষমাণ ছিলেন আরও ৫০ হাজারের মতো মানুষ।

ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ও প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনার জন্যই চার লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হওয়া সত্ত্বেও কাউন্টিং মেশিনে তার হিসাব ধরা পড়েনি। এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রসংলগ্ন ১১ নম্বর গেটে দায়িত্বরত সেনা সদস্য আহমেদ সবুর বলেন, ‘অনুষ্ঠান শুরুর ৩-৪ ঘণ্টা আগেই সুশৃঙ্খলভাবে এ মহাযজ্ঞ সম্পাদনে তৎপর হই আমরা। কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত লোকসমাগম হওয়ায় এক সময় সব ফটক খুলে দিতে বাধ্য হই।’

বিশ্বরেকর্ড গড়ার মতো এমন কাজে প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্ত অদক্ষতার পরিচয় কিনা- এ ব্যাপারে আয়োজনের ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান এশিয়াটিকের মিডিয়া ম্যানেজার মোহাম্মদ ইসতিহাক বলেন, ‘আমরা এ আয়োজনকে সফল করার স্বার্থে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। এখন আপনাদের চোখে যদি কোনোরকম অসঙ্গতি ধরা পড়ে থাকে, তাহলে নির্বিঘ্নে লিখতে পারেন।’

২০১৩ সালের ৬ মে সাহারা-ইন্ডিয়া পরিবার (ভারত) ১ লাখ ২১ হাজার ৬৫৩ জন অংশ নিয়ে যে বিশ্বরেকর্ডটি গড়েছিল তা ভেঙে সেই গর্বিত স্থানে বাংলাদেশের নামটি লেখা হবে। এমন স্বপ্ন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘদিনের। সেই স্বপ্নপূরণের মাহেন্দ্রক্ষণ ছিল বুধবার। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় আয়োজিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় অনুষ্ঠিত এ আনন্দযজ্ঞে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে অনুষ্ঠান শুরুর পরপরই তা চলে যায় আয়োজকদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে।
পূর্ব নির্ধারিত ৬ ঘণ্টার এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত মানুষের যেন কোনো অসুবিধা না হয়, সে জন্য প্রতিটি প্রবেশপথেই কাউন্টিংয়ের পাশাপাশি খাবারের প্যাকেট ও প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে আগতদের অর্ধেকের বেশিই সে সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এ নিয়ে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির একঝাঁক শিক্ষার্থী কথা বলতে গেলে ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে যারা ছিলেন তারা সাফ জানিয়ে দেন, তাদের কিছুই করার নেই।

প্রসাধনী প্রতিষ্ঠান এ্যারোমা ফ্যাশনের ব্যানারে আগত কয়েকজন পানি পানি বলে চিৎকার করলেও কর্ণপাত করেননি দায়িত্বরতরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মিরপুর মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক বলেন, ‘এ আয়োজনে উপস্থিত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রীসহ মুক্তিযোদ্ধা, স্কুল পড়ুয়া কিশোর-কিশোরী, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণ-তরুণী, পোশাকশ্রমিক, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য, বিজিবি, পুলিশ, র‌্যাব, আনসার-ভিডিপি, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠক, পোশাক, পরিবহন ও বিভিন্ন খাতের কর্মী। প্রবেশদ্বার উন্মুক্ত করা এবং ভেতরে নানা অনিয়মের জন্য এখানে যদি কোনোরকম নাশকতা সৃষ্টি হতো, তাহলে গতানুগতিক শোক প্রকাশ করলেই কী এর দায় শেষ হয়ে যেত?’


(দ্য রিপোর্ট/এমএ/এইচএসএম/এজেড/মার্চ ২৭, ২০১৪)