দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: কোলের শিশু রাফিকে নিয়ে টিকিট কাটতে আজ শুক্রবার কমলাপুর স্টেশনে ঈদ উপলক্ষে ট্রেনের টিকিট কাটতে এসেছেন পূর্ণিমা বেগম। একদিকে দাঁড়িয়ে থাকার কষ্ট, অন্যদিকে ছেলেকে কোলে রাখতে হচ্ছে। অঝরে ঘামতে থাকা পূর্ণিমা বেগম বললেন, ‘বাসায় কেউ নেই যে ছেলেকে রেখে আসব। আর এখানে লাইনে কোনো শৃঙ্খলা নেই। পেছনে ৫টি লাইন, কিন্তু সামনে গিয়ে সব একাকার হয়ে গেছে।’

এভাবে ঈদ উপলক্ষে ট্রেনের টিকিট বিক্রির প্রথম দিনে ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে চরম ভোগান্তির শিকার হয়েছেন নারীরা। আজ সকাল ৮টায় ঈদ উপলক্ষে ট্রেনের টিকিট বিক্রি শুরু হয়। আজকে ৫ জুলাইয়ের টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে।

কমলাপুর রেলস্টেশনে পুরো উত্তরাঞ্চলগামী আন্তনগর ও বী. মু. সি. ই (পঞ্চগড়) ঈদ স্পেশাল ট্রেনের টিকিট দেওয়া হচ্ছে। এখানে ৯ থেকে ১৮ নম্বর পর্যন্ত মোট ১০টি কাউন্টারে টিকিট বিক্রি হচ্ছে। তার মধ্যে মাত্র একটি কাউন্টার থেকে দেওয়া হচ্ছে নারীদের টিকিট।

নারীদের ১৮ নম্বর থেকে টিকিট দেওয়া হলেও ১৯ ও ২০ নম্বর কাউন্টার বন্ধ ছিল। নারীরা বলছেন, ১৯ ও ২০ নম্বর কাউন্টার থেকেও তাঁদের টিকিট দেওয়া হলে তাঁরা ভোগান্তিতে পরতেন না।

দেখা যায়, কমলাপুর রেলস্টেশনে পুরুষদের জন্য নয়টি কাউন্টার থাকলেও নারীদের জন্য ছিল একটি। কাউন্টার একটি হলেও নারীদের সংখ্যা বেশি থাকায় লাইন ছিল পাঁচটি। কিন্তু একদম কাউন্টারের সামনে সেসব লাইন অনেকটাই একাকার হয়ে যেতে দেখা যায়। তাতে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়।

দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে এবং পর্যাপ্ত বৈদ্যুতিক পাখার ব্যবস্থা না থাকায় বেশ কয়েক নারী অসুস্থ হয়ে পড়েন। অনেকে হাতপাখা দিয়ে বাতাস করেন। বসার ব্যবস্থা না থাকায় অনেকেই ফ্লোরে বসে পড়েন। গরমে তারা অঝরে ঘামেন এবং অনেকের পোশাক অর্ধেক ভিজে যায়।

টিকিট কাটতে আসা নাসিমা আক্তার বলেন, ‘শুধু একটা কাউন্টার থেকে নারীদের টিকিট দেওয়া হচ্ছে। দুটি কাউন্টারে টিকিট দিলে ভিড় কম হতো, ভোগান্তিও কম হতো।’

নারীদের কাউন্টারে টিকিট বিক্রি ছিল অনেকটাই ধীরগতির। নওগাঁর শান্তাহারে যাওয়ার জন্য টিকিট কাটতে আসা সাজেদা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সকাল সাতটায় এসেছি। তিন ঘণ্টায় তিন হাতও এগোতে পারিনি।’

নারীদের লাইনে কোনো শৃঙ্খলা নেই এবং তাঁরা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন—সাংবাদিকদের এমন এক প্রশ্নের জবাবে কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার বলেন, ‘নারীদের লাইনে শৃঙ্খলা রাখার জন্য আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছেন। এখন তাঁরা নিজেরা যদি না মানেন...। পুরুষেরা সাতটি কাউন্টারে দাঁড়িয়েছেন।

প্রত্যেক কাউন্টারে আলাদা এলাকার টিকিট দেওয়া হচ্ছে। নারীরা সাতটি কাউন্টারের টিকিট একটি কাউন্টারে পাচ্ছেন। দুই কাউন্টার হলে সাত কাউন্টারের টিকিট এক জায়গায় পাবেন না নারীরা।’

আজ থেকে ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। আজকে ৫ জুলাইয়ের টিকিট বিক্রি করা হয়। কাল ২ জুলাই হবে ৬ জুলাইয়ের, ৩ জুলাই হবে ৭ জুলাইয়ের, ৪ জুলাই হবে ৮ জুলাইয়ের এবং ৫ জুলাই হবে ৯ জুলাইয়ের টিকিট বিক্রি।

এবার মোট সাতটি স্টেশন থেকে ট্রেনের টিকিট বিক্রি হচ্ছে। কমলাপুর রেলওয়ের মূল স্টেশন থেকে পুরো উত্তরাঞ্চলগামী আন্তনগর ও বীর মু. সি. ই (পঞ্চগড়) ঈদ স্পেশাল ট্রেনের; কমলাপুরের শহরতলি প্ল্যাটফর্ম থেকে রাজশাহী ও খুলনাগামী সব আন্তনগর ট্রেনের; ঢাকা বিমানবন্দরে চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীগামী সব আন্তনগর ট্রেনের; তেজগাঁওয়ে ময়মনসিংহ, জামালপুর, দেওয়ানগঞ্জগামী সব আন্তনগর ট্রেন ও দেওয়ানগঞ্জ ঈদ স্পেশাল ট্রেনের; ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে মোহনগঞ্জগামী মোহনগঞ্জ ও হাওর এক্সপ্রেস ট্রেনের; ফুলবাড়িয়ায় (পুরাতন রেলওয়ে স্টেশন) সিলেট ও কিশোরগঞ্জগামী সব আন্তনগর ট্রেনের এবং জয়দেবপুরে বীর মু. সি. ই (পঞ্চগড়) ঈদ স্পেশাল ট্রেনের টিকিট বিক্রি হচ্ছে।

(দ্য রিপোর্ট/মাহা/ ০১ জুলাই, ২০২২)