দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: ইভ্যালিতে নতুন চারজন পরিচালকের সঙ্গে ফিরতে যাচ্ছেন এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন। প্রতিষ্ঠানের শেয়ারহোল্ডার হিসেবে শামীমার সঙ্গে যুক্ত হতে যাচ্ছেন তার মা ফরিদা তালুকদার এবং ভগ্নিপতি মামুনুর রশীদ।

 

এ ছাড়া ই-ক্যাব ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে একজন করে প্রতিনিধি স্বাধীন পরিচালক হিসেবে ইভ্যালির পর্ষদে যোগ দিচ্ছেন। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসায়িক কার্যক্রম এগিয়ে নিতে উচ্চ আদালতের নির্দেশনায় এমন পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটিতে।

আর এর মধ্য দিয়ে বিদায় নিতে যাচ্ছেন সাবেক বিচারপতি এইচ এম শামসুদ্দীন চৌধুরী মানিক এবং সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবীর মিলনের নেতৃত্বাধীন উচ্চ আদালত কর্তৃক গঠিত পাঁচ সদস্যের পরিচালনা পর্ষদ।

সংক্ষেপে
* নতুন পরিচালকরা হচ্ছেন—শামীমা নাসরিন, তার মা ফরিদা তালুকদার ও ভগ্নিপতি মামুনুর রশীদ, ই-ক্যাব থেকে শাহাব উদ্দিন এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে উপসচিব কামরুন নাহার

* আগামী ২২ সেপ্টেম্বর নতুন পরিচালকদের নিয়ে বোর্ড সভা করবে বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ

* এরপর চাইলে পদত্যাগ করতে পারেন বর্তমান পর্ষদের সদস্যরা

জানা যায়, বর্তমানে ইভ্যালির ২০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে ফরিদা তালুকদার ও মামুনুর রশীদের কাছে। উচ্চ আদালতে শামীমা নাসরিনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তিনিসহ তার মা ও ভগ্নিপতিকে ইভ্যালিতে পরিচালক হিসেবে নিয়োগের অনুমতি দেন আদালত। গত ২৪ আগস্ট একক বেঞ্চে এ বিষয়ে আদেশ জারি করেন বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম।

এ আদেশে চলতি ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নতুন শেয়ারহোল্ডারদের নাম প্রতিষ্ঠানে নিবন্ধন করার প্রক্রিয়া শেষ করতে বর্তমান পরিচালনা পর্ষদকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। পাশাপাশি জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মসসের রেজিস্ট্রারকে নতুন শেয়ারহোল্ডারদের নাম নিবন্ধনেও সর্বাত্মক সহযোগিতা করার আদেশ দেওয়া হয়। গত ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ইভ্যালির অডিট রিপোর্টও প্রতিষ্ঠানটির কাছে জমা দেওয়ার আদেশ দেন বিচারপতি খুরশীদ আলম।

এরই মধ্যে অডিট ফার্মের পক্ষ থেকে সেই রিপোর্ট ইভ্যালির কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ই-ক্যাব মনোনীত একজন প্রতিনিধি এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক মনোনীত কমপক্ষে উপসচিব পদমর্যাদার একজন সরকারি কর্মকর্তা স্বাধীন পরিচালক হিসেবে পর্ষদে যোগ দেবেন। গত ১৫ সেপ্টেম্বর মনোনীত প্রতিনিধির নাম জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল। উভয় সংস্থা নিজেদের মনোনীত প্রতিনিধির নাম জমা দিয়েছে।

তবে প্রতিনিধিদের নাম এখনো প্রকাশ করেনি কোনো পক্ষ। এ বিষয়ে ই-ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াহেদ তমাল বলেন, আনুষ্ঠানিক ঘোষণার আগে আমরা নাম প্রকাশ করতে চাচ্ছি না। ঘোষণা হলেই নাম প্রকাশ করা হবে।

তবে অনুসন্ধানে স্বাধীন দুই পরিচালক হতে যাওয়া ব্যক্তিদের পরিচয় জানতে পেরেছে। ই-ক্যাব থেকে মনোনীত হয়েছেন সংগঠনটির ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ শাহাব উদ্দিন। আর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে মনোনীত হয়েছেন উপসচিব কামরুন নাহার।

এদিকে ২২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নতুন নিয়োগ পাওয়া পরিচালকদের নিয়ে বোর্ড সভার আয়োজন করতে বর্তমান পরিচালনা পর্ষদকে আদেশ দেওয়া হয়েছে আদালতের রায়ে।

এই সভার পর বর্তমান পর্ষদের সদস্যরা চাইলে পদত্যাগ করতে পারেন। আদালতের রায় বাস্তবায়নে কী কী পদক্ষেপ নিয়েছেন, সে বিষয়ে বর্তমান পর্ষদকে ২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করার আদেশও দেওয়া হয়েছে ওই রায়ে।

এ বিষয়ে বর্তমান পর্ষদের চেয়ারম্যান বিচারপতি শামসুদ্দীন চৌধুরী মানিক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুব কবীর মিলন গণমাধ্যমের সঙ্গে কোনো কথা বলতে রাজি হননি। ইভ্যালির বিষয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে বলে তারা জানান।

তবে নতুন পরিচালকরা এলে বর্তমান পর্ষদ পদত্যাগ করবে বলে জানান মাহবুব কবীর। আর ২২ সেপ্টেম্বরেই নতুন পরিচালকদের নিয়ে বোর্ড সভা হতে যাচ্ছে বলে নিশ্চিত করে একটি সূত্র।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা যায়, ব্যবসা শুরু করার জন্য আদালতে শামীমা নাসরিনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এমন আদেশ দেন উচ্চ আদালত। প্রতিষ্ঠানটি যেন বিনিয়োগ আনতে পারে এবং স্বাভাবিক ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে, সে জন্যই নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠনের অনুমতি দেন আদালত। এর মধ্য দিয়ে ইভ্যালির পরিচালনা পর্ষদের শেয়ারহোল্ডাররা ফিরে এলো।

ইভ্যালির মূল শেয়ারহোল্ডাররা যখন পরিচালনা পর্ষদে আসছেন, তার মানে এখন তারা স্বাভাবিকভাবে ব্যবসা করতে পারবেন। এতে ইভ্যালির ওপর সবার আস্থা ও বিশ্বাস আর ফিরে আসবে, যেটিকে পুঁজি করে নতুন পরিচালনা পর্ষদ নতুন বিনিয়োগকারী নিয়ে আসতে পারবে।


আদালতের এমন রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করছেন প্রতিষ্ঠানটির পাওনাদার ব্যবসায়ী ও গ্রাহকরা। এতে করে ইভ্যালি নতুন করে ব্যবসা করার সুযোগ পাচ্ছে বলে মনে করছেন তারা।

বাংলাদেশ ই-কমার্স মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের (বেকমা) প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন বলেন, ইভ্যালির মূল শেয়ারহোল্ডাররা যখন পরিচালনা পর্ষদে আসছেন তার মানে হচ্ছে, এখন তারা স্বাভাবিকভাবে ব্যবসা করতে পারবেন। এতে ইভ্যালির ওপর সবার আস্থা ও বিশ্বাস আরও ফিরে আসবে, যেটিকে পুঁজি করে নতুন পরিচালনা পর্ষদ নতুন বিনিয়োগকারী নিয়ে আসতে পারবেন। সেই সঙ্গে সরকার ও ই-ক্যাবের প্রতিনিধি থাকায় পর্ষদে স্বচ্ছতা থাকবে। ইভ্যালি ব্যবসায় ফিরে এলে আমাদের পুরোনো টাকা পাওয়ার পাশাপাশি নতুন করে আরও ব্যবসা করতে পারব।