দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে সারা বিশ্বের মানুষকে গৃহহীনতার অভিশাপমুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, প্রকৃতপক্ষে গৃহহীনতা একটা অভিশাপ। এটি উন্নয়নশীল এবং উন্নত দেশের মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায় মানুষকে এই অভিশাপ থেকে মুক্ত করতে কিছু করার বিষয়টি আমাদের সক্ষমতার মধ্যেই রয়েছে।

 

বুধবার (সেপ্টেম্বর ২১) স্থানীয় সময় সকালে নিউইয়র্কে হোটেল লোটে প্যালেসে ‘টেকসই গৃহায়ণ’ শীর্ষক একটি উচ্চ পর্যায়ের সাইড ইভেন্টে তিনি এ আহ্বান জানান।

এক্ষেত্রে একটি শক্তিশালী অংশদারত্ব গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেন শেখ হাসিনা বলেন, এটি করতে (গৃহহীনতার অভিশাপ দূর করতে) এখানে জড়ো হওয়া আমাদের সকল বন্ধু এবং অংশীজনরা একটি শক্তিশালী অংশদারত্ব গড়ে তুলতে পারে।

তিনি বলেন, আসুন আমরা সারা বিশ্বের জন্য এক সঙ্গে কাজ করি, যেখানে গৃহহীনতা অতীতের কোনো বিষয়ে পরিণত হবে।

গৃহহীনদের প্রতি নিজের মমত্ববোধের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটি এমন একটি ইস্যু যা আমি আমার হৃদয়ের গভীরে ধরে রেখেছি। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, একটি নিরাপদ ও উপযুক্ত আশ্রয় প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার।

শেখ হাসিনা বলেন, সারা বিশ্বের মানুষকে গৃহহীনতার অভিশাপ থেকে মুক্ত করার পথে এগিয়ে যেতে ‘নিউ আর এজেন্ডা’ একটি দরকারি ‘ব্লু প্রিন্ট’ হিসেবে আমাদের সহায়তা করতে পারে। এজেন্ডা বাস্তবায়নে সহায়তাকারী দেশগুলোতে আমাদের অবশ্যই ইউএন-এইচএবিআইটিএটি এর কাজকে সমর্থন করতে হবে। এই ইস্যুটিকে সামনে নিউইয়র্কের বন্ধুদের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকবে বাংলাদেশ।

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ঘর দেশের প্রতিটি নাগরিকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক চাহিদা, এটি অন্যান্য চাহিদা পূরণের সুযোগ সৃষ্টি করে। বাংলাদেশে আমরা একটি বাড়িতে শুধু থাকার জায়গা মনে করি না। আবাসনের নিরাপত্তা ব্যক্তির মর্যাদার সঙ্গে বসবাসের সঙ্গে অর্থনৈতিক মুক্তিকে ত্বরান্বিত করে।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশে ভূমিহীন-গৃহহীনদের বিনামূল্যে জমি ও ঘর দেওয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৬৫ মিলিয়ন জনসংখ্যার একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ সফলভাবে গৃহহীনতার সমস্যাটি সামলাতে পারে।

তিনি বলেন, আমরা গৃহহীন-ভূমিহীনদের বিনামূল্যে জমির সঙ্গে বাড়ি তৈরি করে দিচ্ছি। সারা দেশে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য টেকসই ঘর নির্মাণে আমাদের সাফল্যের অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে আমি এখানে এসেছি।

শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার পর আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে প্রথম ভূমিহীন, গৃহহীন এবং ছিন্নমূল মানুষদের পুর্নবাসনের উদ্যোগ নেন। জাতির পিতার লক্ষ্যকে ধারণ করে ১৯৯৭ সালে আমরা ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষের পুর্নবাসনে আশ্রায়ণ প্রকল্প চালু করি। গত দুই দশকে আমাদের সরকার সবার জন্য বিনামূল্যে আবাসন নিশ্চিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আন্তরিক প্রচেষ্টা চালিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু গত ২ বছরে আমরা ২ লাখ বাড়ি নির্মাণ করেছি, যেখানে ১ মিলিয়নের বেশি মানুষের আবাসন নিশ্চিত হয়েছে। আমার প্রধানমন্ত্রিত্বের ১৮ বছরে ৫ লাখেরও বেশি বাড়ি নির্মাণের মাধ্যমে আমরা সাড়ে তিন মিলিয়নেরও বেশি মানুষের আবাসনের ব্যবস্থা করেছি। বর্তমানে আরও ৪০ হাজার বাড়ি নির্মাণের কাজ চলছে।

প্রধানমন্ত্রী জানান, এসব বাড়ির সুবিধাভোগীরা হলেন—ভূমিহীন-গৃহহীন, ভিক্ষুক, দিনমজুর, নিঃস্ব নারী, বিধবা, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, বয়স্ক-জন, পারিবারিক সহিংসতার শিকার, জাতিগত সংখ্যালঘু, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ, কুষ্ঠ রোগী, ঝাড়ুদার এবং হরিজন সম্প্রদায়।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকেও একই ভাবে পুর্নবাসন করছি। ইতোমধ্যে কক্সবাজারে ১৩৯টি বহুতল ভবনে ৫ হাজার জলবায়ু-শরণার্থী পরিবারকে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের কারণে গৃহহীনদের শহরমুখী হওয়ার প্রবণতা কমেছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গৃহহীন মানুষ কর্মসংস্থান এবং বাসস্থানের সন্ধানে শহরে ছুটে আসতো, আগে বাংলাদেশে এটি সাধারণ দৃশ্য ছিল। কিন্তু আশ্রয়ণ প্রকল্প চালু হওয়ার পর থেকে এই প্রবণতা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।