দ্য রিপোর্ট প্রতিনিধি, খুলনা: নিখোঁজের ২৯ দিন পর ফরিদপুরের বোয়ালমারী থেকে উদ্ধার খুলনার রহিমা বেগম পুলিশের কোনো প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন না। গ্রেপ্তারের পর থেকে তিনি ‘নির্বাক’ রয়েছেন বলে জানিয়েছেন পুলিশ। গতকাল শনিবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে রহিমা বেগমকে দৌলতপুর থানায় নিয়ে আসা হয়। বর্তমানে তাঁকে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রাখা হয়েছে।

পুলিশ সেখানে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও রহিমা বেগম কোনো প্রশ্নের উত্তর দেননি বলে জানান জাহাঙ্গীর হোসেন। তবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কুদ্দুসের ছেলে আলামিন, কুদ্দুসের স্ত্রী ও ভাইয়ের স্ত্রীকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

মোল্লা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে ওই বাড়ির লোকজন পুলিশকে জানিয়েছেন, প্রথমে রহিমা বেগমকে তাঁরা চিনতে পারেননি। পরে চিনতে পারলে সাবেক বাড়িওয়ালা হিসেবে তাঁরা সেবাযত্ন করেছেন। রহিমা তাঁদের জানিয়েছেন, তিনি বেশ কয়েক দিন চট্টগ্রাম ও গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে ছিলেন। এরপর ১৭ সেপ্টেম্বর বোয়ালমারীতে কুদ্দুসের বাড়িতে যান। তখন তাঁর একটি ব্যাগে দুই প্যাকেট বিস্কুট, কিছু কাগজপত্র ও পরনের কিছু কাপড়চোপড় ছিল।

উপপুলিশ কমিশনার জানান, ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে তাঁরা রহিমা বেগমকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন। রহিমা বেগম কোনো মুঠোফোন ব্যবহার করেননি। সে কারণে ট্র্যাকিং করা সম্ভব হচ্ছিল না। রহিমা অপহরণ মামলাটির তদন্ত দৌলতপুর থানা-পুলিশের কাছ থেকে পিবিআইতে গেছে। তারপরও খুলনা মহানগর পুলিশ মামলাটির ছায়া তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছিল। পিবিআই তদন্ত করে পুরো রহস্য উন্মোচন করবে।


নিখোঁজ মাকে ফিরে পাওয়ার দাবিতে গত ১০ সেপ্টেম্বর ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত মানববন্ধনে কান্নায় ভেঙে পড়েন মরিয়ম মান্নানফাইল ছবি: প্রথম আলো

রহিমা আসলেই অপহরণ হয়েছিলেন নাকি স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে ছিলেন—এমন প্রশ্নের উত্তরে উপপুলিশ কমিশনার বলেন, উনি কোনো জবাবই দিচ্ছেন না। খাবারদাবারও খেতে চাইছেন না। তবে ইশারা–ইঙ্গিতে কথা বলছেন। জবাব না দিলে এখনই তো কিছু বলা যাচ্ছে না। মামলাটি যেহেতু পিবিআই (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) তদন্ত করছে, তারাই বিস্তারিত উদ্‌ঘাটন করবে।

মোল্লা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, রহিমা বেগম যেহেতু অপহরণ মামলার ভিকটিম, সে জন্য আপাতত তাঁকে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারেই রাখা হচ্ছে। সেখানে খাওয়াদাওয়া, সেবাশুশ্রূষার ব্যবস্থাপনা আছে। পরে হয়তো পিবিআই চাইলে তাঁকে হস্তান্তর করা হবে।

ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার বওলা গ্রামের ঝোপ থেকে উদ্ধার হওয়া এক নারীর লাশ নিজের মায়ের বলে দাবি করেছিলেন রহিমার মেয়ে মরিয়ম মান্নান। ‘লাশ শনাক্তে’ গত শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে তিনি ফুলপুর থানায় যান। এ সময় মরিয়ম লাশটি তাঁর মায়ের দাবি করে নিয়ে যেতে চান। সেখানে লাশের পরিহিত কাপড় দেখেন। এরপর মরিয়ম দাবি করেন, লাশটি তাঁর মায়ের। পরে মরিয়ম মান্নান ফুলপুর থানায় ডিএনএ পরীক্ষার আবেদন করেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পুলিশ কর্মকর্তার দাবি, রহিমা মূলত স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে ছিলেন।

রহিমাকে উদ্ধারের খবর পেয়ে রাতে দৌলতপুর থানায় আসেন অপহরণ মামলায় গ্রেপ্তার রফিকুল আলম ও নুরুল আলমের বাবা আনসার উদ্দিন আহমেদ। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, তাঁদের সঙ্গে জমির সীমানা নিয়ে মতবিরোধ থাকায় তাঁর দুই ছেলের নামে মামলা দিয়ে হয়রানি ও সম্মানহানি করা হয়েছে। রহিমা ও তাঁর সন্তানেরা অপহরণের নাটক সাজিয়েছে দাবি করে তিনি তাঁদের ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।

একই মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া মহিউদ্দিন ও গোলাম কিবরিয়ার বড় ভাই নজরুল ইসলাম বলেন, পুরো বিষয়টা একটা সাজানো নাটক। রহিমা বেগমের সন্তানেরা পুলিশ ও সাংবাদিকদের মিথ্যা কথা বলে প্রায় এক মাস বিভ্রান্ত করেছে।

থানায় উপস্থিত থাকা রহিমা বেগমের বড় ছেলে মোহাম্মদ সাদী বলেন, মা উদ্ধার হওয়ায় তাঁরা খুশি। তাঁর পরিবারের কেউ অপহরণ নাটক সাজিয়েছে বলে তাঁর কাছে মনে হয় না। তবে কাউকে হয়রানির উদ্দেশ্যে তাঁর পরিবারের কেউ যদি কোনো অন্যায় করেছে—এমনটা প্রমাণিত হলে তাঁদেরও আইনের আওতায় আনা হোক।