দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: পুঁজিবাজারে তারল্য সংকট দূর করতে বিভিন্ন কোম্পানি ও মিউচুয়্যাল ফান্ডের রক্ষিত অবণ্টিত বা অদাবিকৃত লভ্যাংশের (নগদ ও বোনাস) সমন্বয়ে ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড (সিএমএসএফ) গঠন করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এ ফান্ড গঠনের পর থেকে এখন পর্যন্ত তাদের কার্যক্রম পরিদর্শন করেনি কমিশন। তাই সিএমএসএফের কার্যক্রম কেমন চলছে তা দেখভালের লক্ষ্যে কমিশন দুই সদস্যের পরিদর্শন কমিটি গঠন করেছে। গঠিত কমিটিকে আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে এ সংক্রান্ত পরিদর্শন প্রতিবেদন কমিশনে দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে।

রোববার (২ অক্টোবর) সিএমএসএফের কার্যক্রম পরিদর্শন সংক্রান্ত আদেশ জারি করা হয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে। এ বিষয়টি সিএমএসফের চেয়ারম্যান এবং চিফ অফ অপারেশনকে (সিওও) অবহিত করা হয়েছে।

গঠিত পরিদর্শন কমিটির সদস্যরা হলেন— বিএসইসির উপপরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম ও সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ মিনহাজ বিন সেলিম।

বিএসইসির আদেশে উল্লেখ রয়েছে, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন মনে করে যে, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (ক্যাপিটাল মার্কেট স্টেবিলাইজেশন ফান্ড) বিধিমালা, ২০২১ এর বিধি ১৩ এর অধীনে ক্যাপিটাল মার্কেট স্টেবিলাইজেশন ফান্ড (সিএমএসএফ) এর কার্যাবলী পরিদর্শন করা প্রয়োজন। উল্লিখিত পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কমিশনের কর্মকর্তা উপপরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম ও সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ মিনহাজ বিন সেলিমকে দায়িত্ব দেওয়া হলো। পরিদর্শন কর্মকর্তারা এই আদেশ প্রাপ্তির ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে পরিদর্শন সম্পন্ন করবেন এবং কমিশনে প্রতিবেদন জমা দেবেন।

২০২১ সালের ২২ আগস্ট পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও তারল্য সংকট দূর করতে ২০ হাজার কোটি টাকার ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড গঠন করে বিএসইসি। এরই ধারাবাহিকতায় ফান্ডটি পরিচালনার জন্য ১১ সদস্যের বোর্ড অব গভর্নস অনুমোদন দেয় কমিশন। এ বোর্ড অব গভর্নসের মধ্যে ৪টি পদ বিএসইসি কর্তৃক নিয়োগ নিয়োগ দেওয়া হবে। এর মধ্যে একটি চেয়ারম্যান পদ ও বাকি ৩টি সদস্য পদ।

এ ফান্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান নজিবুর রহমানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আরও তিন জন সদস্য হলেন- বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মো. সাইফুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শেখ তানজিলা দীপ্তি ও ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত। এছাড়া সিএমএসএফের বোর্ড অব গভর্নসের অন্যান্য সদস্যরা হলেন- ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জর (ডিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. তারিক আমিন ভুঁইয়া, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম, সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) স্বতন্ত্র পরিচালক এ কে এম নুরুল ফজলে বাবুল, সেন্ট্রাল কাউন্টারপার্টি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিসিবিএল) পরিচালক ড. মোহাম্মদ তারেক, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজের (বিএপিএলসি) সভাপতি আজম জে চৌধুরী, দি ইন্সটিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টেন্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএমএবি) সদস্য এ কে এম দেলোয়ার হোসেন। এছাড়া চিফ অব অপারেশন (সিওও) হিসেবে অগ্রণী ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মো. মনোয়ার হোসেনকে মনোনয় দেয় বিএসইসি।

পরবর্তীতে ২০২১ সালের ২৯ ডিসেম্বর এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সিএমএসএফের যাত্রা শুরু করে। বিএসইসির আইন অনুযায়ী ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড গঠিত হয়েছে।

বিধিমালা অনুসারে, সিএমএসএফ তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজ ইস্যুকারীর কাছ থেকে অদাবীকৃত এবং অবন্টিত নগদ বা স্টক ডিভিডেন্ড, অফেরত পাবলিক সাবস্ক্রিপশনের অর্থ এবং অ-বরাদ্দকৃত রাইট শেয়ার স্থানান্তর করার মাধ্যমে প্রাপ্ত বিনিয়োগকারীদের পক্ষে নগদ এবং স্টকের অভিভাবক হিসাবে কাজ করে। তহবিলে জমা করা নগদ বা স্টক যে কোনো সময়ে শেয়ারহোল্ডার বা বিনিয়োগকারীদের দ্বারা যথাযথ দাবির উপর ভিত্তি করে পরিশোধ বা নিষ্পত্তি করা হবে। সিএমএসএফ তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজ ক্রয়-বিক্রয়, অন্যান্য সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করা, বাজারের মধ্যস্থতাকারীদের ঋণ প্রদান, তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজ ধার দেওয়া এবং ধার নেওয়া এবং বিনিয়োগকারীদের দাবির নিষ্পত্তির মাধ্যমে বাজারে তারল্য নিশ্চিত করা এবং পুঁজিবাজারকে স্থিতিশীল করতে সাহায্য করা।

বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের দেওয়া নির্দশনা অনুযায়ী চলতি বছরের গত ৩১ জুলাই কোম্পানি ও মিউচুয়্যাল ফান্ডগুলোর অবণ্টিত লভ্যাংশ প্রদানের সর্বশেষ সময়সীমা শেষ হয়েছে। কঠোর শাস্তির হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও সিএমএসএফে নগদ অর্থ ও শেয়ার জমাদানে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো থেকে উল্লেখযোগ্য সাড়া পাওয়া যায়নি। ফলে সিএমএসএফের অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস ম্যানেজমেন্ট কমিটি (এএএমসি) ও বিএসইসি কোম্পানিগুলোর প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। পরবর্তীতে যেসব কোম্পানি নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে সিএমএসএফে লভ্যাংশ স্থানান্তর করেনি তাদের কাছে এর কারণ ব্যাখ্যা চেয়েছে বিএসইসি। ইতোমধ্যে অবণ্টিত বা অদাবিকৃত নগদ ও বোনাস লভ্যাংশ সিএমএসএফে স্থানান্তর না করার বিষয়ে অসম্মতিকারী কোম্পানিগুলোর ব্যাখ্যা সংগ্রহ করে কমিশনের দাখিল করেছে সিএমএসএফ।

গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সিএমএসএফে নগদ ও বোনাস লভ্যাংশ বাবদ সর্বমোট ১ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা জমা হয়েছে। এর মধ্যে নগদ লভ্যাংশ বাবদ এসেছে ৪৮৩ কোটি টাকা। আর বোনাস লভ্যাংশ বাবদ এসেছে ৭১০ কোটি টাকা। এদিকে গত ২০ সেপ্টেম্বর এক অনুষ্ঠানে সিএমএসএফের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এখন পর্যন্ত তারা ৭০ লাখ ৫১ হাজার ৭০২ টাকান সমমূল্যের বিনিয়োগকারীদের অমীমাংসিত দাবি নিষ্পত্তি করেছে। সুত্র- রাইজিংবিডি