দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, জনগণের ধারণা ইভিএম ফল উল্টে দেওয়ার মতো একটা মেশিন। ইভিএমে নির্বাচনের বিষয়ে সব সময় আমাদের আপত্তি, আমরা ইভিএমে নির্বাচন চাই না।

বৃহস্পতিবার (০৬ অক্টোবর) প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সঙ্গে সাক্ষাতের পর তিনি এসব কথা বলেন।

মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, জনগণের ধারণা হলো ইভিএম ফল উল্টে দেওয়ার মতো একটা মেশিন। ফলে যারা মেশিন চালায় তাদের দোষ। ইভিএমে নির্বাচনের ওপর সব সময় আমাদের আপত্তি, আমরা ইভিএমে নির্বাচন চাই না। তারপরও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সচল রাখতে আমরা নির্বাচনে গেলাম, পরবর্তীতে আমরা কী করব দল সেই সিদ্ধান্ত নেবে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির মধ্যে কোনো ভাঙন নাই। দলের দুই-একজন বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল, আমরা তাদের অব্যাহতি দিয়েছি। আমাদের কোনো কাউন্সিল নাই, কে কোথা থেকে কাউন্সিল ডাকলো এতে কিছু আসে যায় না। জাতীয় পার্টি কোনো দালালির রাজনীতি করে না।

তিনি বলেন, আমরা আজ এসেছিলাম সিইসির সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য। আপনারা জানেন, গাইবান্ধার একজন সংসদ সদস্য সাবেক ডেপুটি স্পিকার মারা যাওয়াতে তার আসনটি শূন্য হয়। সেখানে নির্বাচন হচ্ছে, সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী দিয়েছে, জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকেও আমরা সেখানে প্রার্থী দিয়েছি। যদিও আমরা ইভিএমে নির্বাচনের পক্ষে না। সেই নির্বাচনটি ইভিএমে হবে। জাতীয় পার্টির একটা কালচার আছে যে, আমরা কখনো নির্বাচন বর্জন করি না। কারণ নির্বাচন বর্জন করাটা মনে করি গণতন্ত্রকে ব্যাহত করবে। আমরা প্রতিবাদ হিসেবেও পার্লামেন্টের উপনির্বাচনে অংশগ্রহণ করছি।

চুন্নু আরও বলেন, সেই নির্বাচনের বিষয়ে আমরা প্রধান নির্বাচন কমিশনের কাছে এসেছিলাম; আপনি যে ইভিএমএ করছেন, এক নম্বর সিসিটিভি থাকবে কিনা, দুই নম্বর ইভিএমে নির্বাচনটা আপনারা করছেন, আমরা অংশগ্রহণ করছি দলীয় সিদ্ধান্ত নিয়ে। যদিও আমারা নীতিগতভাবে ইভিএমে নির্বাচনের বিরুদ্ধে। তারপরও আমরা বলছি, যদি এই নির্বাচনটা সুষ্ঠু করতে পারেন। মানুষের হয়তো কিছুটা আস্থা আসতে পারে। নির্বাচনটা যদি বিশ্বাসযোগ্য হয় এবং বিশ্বাসযোগ্য হওয়ার মতো কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে মানুষের যাতে এই ধারণা জন্মে যে, নির্বাচন ফেয়ার হয়েছে। এই বিষয়ে পদক্ষেপ নেবেন, সেইগুলি আমরা তাদের বলেছি।

জাতীয় পার্টির এই নেতা বলেন, আরেকটা বিষয় হলো, সারা বাংলাদেশে এখন জেলা পরিষদের নির্বাচন হচ্ছে। গত জেলা পরিষদ নির্বাচনে গাইবান্ধা থেকে আমাদের প্রার্থী আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে পরাজিত করে নির্বাচিত হয়েছিলেন। এ বছরও তাকে প্রার্থী করা হয়েছে। আমরা দেখলাম আমাদের হুইপ সেই গাইবান্ধা গিয়ে তাদের পক্ষে নির্বাচন আচরণবিধি লঙ্ঘন করে সেখানে নির্বাচন করছেন। আমাদের কাছে প্রমাণ আছে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের লোকজন আমাদের প্রার্থীর গাড়ি ভাঙচুর করেছে, অপমান-অপদস্ত করেছে, সঙ্গে যারা ছিল তাদেরও আহত করেছে। সেটার মামলা দিতে গিয়েছিল কিন্তু থানায় শুধু জিডি নিয়েছে, মামলা নেয়নি। ওখানকার রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে তিনি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের পক্ষের জনপ্রতিনিধিরা সরকারের দেওয়া গাড়ি নিয়ে প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। আচরণবিধি অনুযায়ী তারা সেটা করতে পারেন না। এগুলো নিরসন করার জন্য এবং জেলা পরিষদ নির্বাচনে সকল কেন্দ্রে যাতে সিসিটিভির ব্যবস্থা করা হয়। সেখানে আমাদের প্রার্থীকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে, তারা সেখানে জোর করে ভোট নিয়ে নেবেন। যারা জাতীয় পার্টির এজেন্ট হবে তাদের এলাকায় থাকতে দেবে না বলেও হুমকি দিয়েছে। এ সমস্ত বিষয়গুলি লিখিতভাবে আমরা প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে দিয়েছি।

চুন্নু আরও বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশনারদের একটি ভালো সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন করার সু-ইচ্ছা আছে। আমরা জেলা পরিষদের নির্বাচন ও উপনির্বাচনে তার প্রতিফলন দেখতে চাই। আমরা নির্বাচনের সরাসরি কোনো পদক্ষেপ এখনো দেখিনি। হুইপ সেখানে ৭ দিনের রাজনৈতিক কর্মসূচি দিয়েছেন। একটা নির্বাচন চলাকালে এরকম কর্মসূচি, এটা পরোক্ষভাবে ভোট চাওয়ার জন্যই করা হয়েছে। এ সকল সমস্যাগুলোর বিষয়ে নির্বাচন কমিশন ব্যবস্থা নেবে বলে আমাদের আশ্বাস দিয়েছে। আমরা তাদের ওপর আস্থা রাখতে চাই। দেখতে চাই তারা কী করে।

জাতীয়র পার্টির মহাসচিব বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত কেউ বলতে পারবে না কোনো নির্বাচন ১০০ ভাগ সঠিক হয়েছে। যে দল নির্বাচনে যায় তারা বলে নির্বাচন ফেয়ার হয়েছে, যারা যায় না তারা বলে খারাপ হয়েছে। বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ প্রমাণ করেছে যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেও ফেয়ার নির্বাচন হয় না। আমরা বলতে চাই, বর্তমান অবস্থায় নির্বাচন ফেয়ার করা সম্ভব নয়, একমাত্র যদি নির্বাচন ব্যবস্থার পরিবর্তন না করা হয়। আমরা যেহেতু নির্বাচনের মুখে তাই প্রার্থী দিয়েছি। আমরা দেখতে চাই ইভিএম কতটুকু ফেয়ার করতে পারেন। আমরা দেখতে চাই, ‘ম্যান বিহাইন্ড দ্য গান’ থাকে কিনা।

রওশন এরশাদ জাতীয় পার্টির কাউন্সিল আহ্বান করেছেন, বিষয়টি সম্পর্কে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে চুন্নু বলেন, আমি জাতীয় পার্টির মহাসচিব, আমার জানা মতে কোনো কাউন্সিল নাই। কে কোন কাউন্সিল করলো, এটা নিয়ে আমার কোনো বক্তব্যও নাই, সম্পর্কও নাই। আমাদের বর্তমান চেয়ারম্যান বা কো-চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে একটি লোকও কোথাও যায়নি। আমাদের বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামো অনুযায়ী এখনও কেউ দল ছেড়ে যায়নি। কারণ জাতীয় পার্টি এখন কারো দালালির রাজনীতি করে না। জাতীয় পার্টি এখন নিজস্ব রাজনীতি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।

মহাসচিব বলেন, দলের দুই-একজন বিশৃঙ্খলা করেছিল। সেজন্য তাদের আমরা অব্যাহতি দিয়েছি। সম্প্রতি আওয়ামী লীগও তাদের দলের একজন সংসদ সদস্যকে অব্যাহতি দিয়েছে। তারাও কিন্তু দলের বিশৃঙ্খলার জন্য তাকে অব্যাহতি দিয়েছে। দলের সাংগঠনিক নিয়ম মেনেই আমরা তাদের অব্যাহতি দিয়েছি।