দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: আগামী বছর থেকে বিদ্যুতের সংকট থাকবে না বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তিনি বলেছেন, আগামী বছর থেকে বিদ্যুতের সংকট আর আর থাকবে না।

 

নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হবে।

রোববার (৪ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে নর্দার্ন ইলেক্ট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) লিমিটেড আয়োজিত ‘নেসকো টুয়ার্ডস ২০৪১: চ্যালেঞ্জ অ্যান্ড ওয়ে ফরওয়ার্ড’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।

নসরুল হামিদ বলেন, দেশের প্রতিটি গ্রামের প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে। বিদ্যুতের চাহিদা আরও বাড়ছে। সেই চাহিদার যোগানে সামনের দিনে কী কী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে, সেই বিষয়ে নেসকো যে পরিকল্পনা করছে, তা নিয়ে আলোচনা করতেই আজকের এই আয়োজন। নেসকো ইতোমধ্যে উত্তরাঞ্চলে বিদ্যুৎ বিতরণে সুনাম অর্জন করেছে। এই কারণে তারা স্বাধীনতা পুরস্কার অর্জন করেছে। আমি বলব, গ্রাহকদের নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ব্যবহারে উন্নত প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার যেন নিশ্চিত করা হয়।

বিদ্যুৎ সরবরাহে নেসকোর ডিজিটাইজেশনের প্রশংসা করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, নেসকো গ্রাহকদের পেমেন্ট সিস্টেম শতভাগ ডিজিটালাইজড করেছে। প্রিপেইড মিটার স্থাপনের ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করছে। শিগগিরই পুরোপুরি প্রিপেইড মিটার সিস্টেমে চলে যাবে। এসব বিষয়ে নেসকো কিছুটা পিছিয়ে আছে। তাদের আগেই ডিজিটাইজেশনে যাওয়া উচিত ছিল। এ ছাড়া গ্রাহকসেবার জন্য তাদের কল সেন্টার সিস্টেম ও কাস্টমার কেয়ার সার্ভিসও প্রশংসনীয়। এখন সিস্টেম লস থেকে বের হতে পারলেই তাদের বড় সাফল্য অর্জিত হবে। নেসকোর সিস্টেম লস তুলনামূলক একটু বেশি।

নসরুল হামিদ বলেন, নেসকো যে পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে, এর সঙ্গে যদি রিনিউয়াল এনার্জির বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করত, তাহলে ভালো হতো। তারা উত্তরাঞ্চলে যেখানে কাজ করে। সেখানে ২৭ হাজার সেচ পাম্প ব্যবহার হচ্ছে, এগুলোকে যদি সোলারে কনভার্ট করা যায়, তাহলে আমাদের জন্য উপকার হবে। উত্তরাঞ্চলের প্রচুর কৃষিভূমি রয়েছে। সেগুলো কীভাবে ব্যবহার করা যায়, সেটিও আপনারা ভাবতে পারেন। প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে যত্রতত্র অপরিকল্পিত শিল্প কারখানা দেওয়ার বিষয়ে কঠোর অবস্থানে আছেন। এ ছাড়া আপনারা ক্লিন এনার্জির দিকে জোর দিতে পারেন। এসব বিষয়ে আপনাদের পরিকল্পনা থাকা উচিত।

সেমিনারে নেসকো চেয়ারম্যান মো. মোহসীন চৌধুরী বলেন, নেসকো রাজশাহী-রংপুরের মতো একটি এলাকায় তার কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এসব এলাকায় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড দেশের অন্যান্য এলাকা থেকে একটু কম। নেসকোর সফলতার ওপর নির্ভর করছে ওই এলাকার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের গতি-প্রকৃতি। তবে উত্তরাঞ্চল এখন আর মঙ্গা-পীড়িত জনপদ নয়। ক্যালিফোর্নিয়া ছিল আমেরিকার কৃষি জোন, যা এখন পৃথিবীর পঞ্চম অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়ার মতো বাংলাদেশে উত্তরাঞ্চলেও সমৃদ্ধি আসবে নেসকোর হাত ধরে।

বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব হাবিবুর রহমান বলেন, আগামী দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে গ্রাহক পর্যায়ে শতভাগ প্রিপেইড মিটারের আওতায় আসবে। ২০২৫ সালের মধ্যে নেসকো একটি স্মার্ট ডিস্ট্রিবিউশন গড়ে তুলতে চায়। আমি আশা করছি, তারা সবার আগে সেটি করতে সক্ষম হবে।

প্যানেল আলোচনায় অংশ নিয়ে পাওয়ার সেলের ডিজি মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, নেসকো সব দিক থেকেই অনেক এগিয়ে গেছে। তাদের মিটার সিস্টেম, টেকনিক্যালি অনেক এগিয়েছে। কিন্তু তাদের সিস্টেম লস এখনও কিছুটা বেশি। এখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এ ছাড়া তারা সফলতার পাশাপাশি কোন কোন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে, সেসব তুলে ধরলে আরও ধারণা পাওয়া যেত।

সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান। প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন প্ল্যানিং অ্যান্ড পাওয়ার ডিভিশনের অতিরিক্ত সচিব মো. নুরুল আলম, এনডিসি চেয়ারম্যান মুনিরা সুলতানা, মোহাম্দ আলাউদ্দিন, নেসকোর সাবেক চেয়ারম্যান রহমত উল্লাহ, ডিপিডিসির পরিচালক বিকাশ দেওয়ান প্রমুখ।