দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক:  সম্প্রতি দেশের অর্থনীতি পার করছে কঠিন এক ক্রান্তিকাল। এসময় ডলার সংকট মুল্যস্ফীতি,রিজার্ভ কমে যাওয়া এরুপ বেশ কিছু আর্থিক সমস্যার কথা শোনা যাচ্ছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সংকট আরো তীব্র হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশও এর উত্তাপ পড়েছে বেশ ভালো ভাবেই। অনেক প্রতিষ্ঠান মৃতপ্রায়। কোভিডের সমস্যা পার করে দেশের কোম্পানিগুলো যখন একটু কোমর সোজা করে দাড়াচ্ছিলো তখনই যুদ্ধের থাবা। দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির পাশাপাশি পুঁজিবাজারে চলছে চরম বেহাল অবস্থা। লেনদেন নেমে এসেছে একদম তলানিতে।

অবস্থা এমন ঠেকেছে যে কোনো রকমে ৩০০ কোটি লেনদেন হলেই খুশি। এমন অবস্থা বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি বাজারসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকেও বিপাকে ফেলেছে। কয়েক মাস ধরে অনেক ব্রোকারেজ হাউসে কোনো লেনদেন নেই। কিছু কিছু ব্রোকারেজ হাউসের পরিচলন খরচ উঠার মতো অবস্থাও নেই হলে জানান রাজধানীর মতিঝিল এলাকায় অবস্থিত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্রোকারেজ হাউসের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা।

একটি ব্রোকারেজ হাউসগুলার প্রধান ইনকাম সোর্স লেনদেনের কমিশন। কিন্তু মাসখানেক ধরে লেনদেনের অবস্থা এমন করুণ যে কমিশন থেকে আয় একদমই নেই। একাধিক ব্রোকারেজ হাউস ঘুরে জানা যায়, বেশ কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউজগুলো কর্মী ছাটাই করতে বাধ্য হচ্ছে। একাধিক ব্রোকারেজ হাউস সকাল ১১-১২টা যখন পুঁজিবাজারের অন্যতম "পিক টাইম" সেসময়ে অনেক ব্রোকারেজ হাউস ফাঁকা। অর্থাৎ বিনিয়োগকারী উপস্থিতি একদমই নেই। এব্যাপারে সেই ব্রোকারেজ হাউজের স্বতাধিকারী বলেন, "আমাদের এখানে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বিনিয়োগকারী ভরপুর থাকতো। কিন্তু এখন বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকায় বিনিয়োগকারীদের শেয়ার লেনদেন আটকে আছে। চাইলেও বিনিয়োগ করতে পারছেন না অনেকে। ফলে বিনিয়োগকারীরা আসেন না এখন "।

একাধিক ব্রোকারেজ হাউসের প্রধান নির্বাহী বলেন, যেসব ব্রোকারেজ হাউস ঋণ দেয়, তারা কিছু সুদ পাচ্ছে। কিন্তু যারা ঋণ দেয় না, তাদের কয়েক মাস ধরে কোনো আয় নেই। ফলে মারাত্মক হুমকির মুখে প্রতিষ্ঠানগুলো।

অন্যদিকে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ আন্ড একচেঞ্জ কমিশন চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত- উল ইসলাম দু'দিন আগেও রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন ফ্লোর প্রাইস উঠানোর আপাতত কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। প্রতিষ্ঠানটি মনে করছে, এ মুহূর্তে ফ্লোর প্রাইস তুলে নিলে শেয়ারের দামে ধস নেমে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। যার ফলে এই সমস্যা খুব শীঘ্রই সমাধান হবে বলে মনে করছেন না ব্রোকারেজ হাউজগুলো।

দেশের শীর্ষস্থানীয় এক ব্যাংকের ব্রোকারেজ হাউজের শীর্ষ নির্বাহী জানান, গত অক্টোবর মাস থেকে লসে আছে তার প্রতিষ্ঠান। বছরের মাঝের কিছুদিন ব্যবসায় ভালো থাকায় এখন পর্যন্ত টিকে থাকতে পারছে। এভাবে চললে আরো দুমাসের মধ্যে প্রতিষ্ঠান শাট ডাউন করার পরিস্থিতি তৈরি হবে জানান তিনি।

মতিঝিল এলাকা ঘুরে ৭টি ব্রোকারেজ হাউজের প্রধান নির্বাহীদের সাথে কথা হয়। প্রায় প্রত্যেকেই একই সুরে বললেন, বর্তমানে টিকে থাকা বড় টার্গেট।দেশের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে তাদের অনুরোধ শুধু বিনিয়োগকারীদের জন্য় নয়, সমস্ত পুঁজিবাজারের অভিভাবক হিসেবে বিএসইসি এরুপ পদক্ষেপ নিবে যাতে পুঁজিবাজারে প্রাণ ফিরে আসে। ব্রোকারেজ হাউজগুলো সহ অন্যান্য পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানও যথাযথ ব্যবসায় করতে পারে।

প্রসঙ্গত, আজ সপ্তাহের শেষদিন বৃহস্পতিবার এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (বেলা ১২টা) মাত্র ১০৭ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে । গতকাল লেনদেন হয়েছিলো মাত্র ৩১১ কোটি ৩২ লক্ষ টাকা। এর আগে মঙ্গলবার লেনদেন হয়েছিলো তিনশো কোটির নিচে, মাত্র প্রায় ২৭১ কোটি টাকার।