দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, অবৈধ ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার জন্য বর্তমান সরকার নৃশংসতার সব সীমা অতিক্রম করেছে। পুলিশ এবং দলীয় ক্যাডারদের দিয়ে তারা বিরোধী দলের নিরীহ নেতাকর্মীদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালাচ্ছে।

 

 

বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর তোপখানা রোডে বাংলাদেশ শিশু কল্যাণ পরিষদ মিলনায়তনে ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশকে কেন্দ্র করে সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে গণতন্ত্র মঞ্চ আয়োজিত জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

লিখিত বক্তব্যে গণতন্ত্র মঞ্চের এই নেতা বলেন, বাংলাদেশ আজ এক ভয়াবহ ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা, গুলি করে হত্যা, নৃশংস হামলা, গণহারে নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে সরকার দেশকে একটি ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ইতোমধ্যে দখলদার সরকারের বিরুদ্ধে সারা দেশের মানুষ জেগে উঠেছে।

তিনি বলেন, আগামী ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশকে কেন্দ্র করে গতকাল বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর নৃশংস হামলা চালিয়ে সরকার ভয়াবহ, ভীতিকর ও উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি করেছে। হামলায় মকবুল হোসেন নামে একজন কর্মী নিহত এবং কয়েকশ জন আহত হয়েছেন। পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে সরকারের আজ্ঞাবহ পুলিশ বাহিনী।

তিনি আরও বলেন, গণসংহতি আন্দোলন ঢাকা মহানগর উত্তরের হাতিরঝিল থানার ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের সংগঠক হাসু মিয়াকে কাল মধ্যরাতে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কর্মীদের গণহারে গ্রেফতারের পাশাপাশি তারা শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতার শুরু করেছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গত কয়েকদিনে সিদ্ধিরগঞ্জে নাগরিক ঐক্য এবং গণঅধিকার পরিষদের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এটি সরকারের চূড়ান্ত ফ্যাসিবাদী আচরণের বহিঃপ্রকাশ।

মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, অবৈধ ক্ষমতা হারানোর ভয়ে দিশেহারা হয়ে সরকার গণআন্দোলন দমনের জন্য সর্বশক্তি প্রয়োগ করছে। গুলি করে মানুষ মেরে কোন স্বৈরাচার টিকতে পারেনি। ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে যে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে, হত্যা-হামলা-গ্রেফতার করেও তা ঠেকানো যাবে না।

বিএনপি ইতোমধ্যে ৯টি শান্তিপূর্ণ বিভাগীয় সমাবেশ করেছে। বিএনপির নেতাকর্মীদের পাশাপাশি হাজার হাজার বিক্ষুব্ধ জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সেই সমাবেশগুলোতে অংশ নিয়েছে। ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধী রাজনৈতিক দলের যেকোনো কর্মসূচি এখন কোনো একটি দলের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই।

তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানের ভয়ে বিএনপির আগামী ১০ ডিসেম্বরের ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশ বানচাল করার লক্ষ্যে সরকার পরিকল্পিতভাবে গণতন্ত্রকামী মানুষের ওপর হামলা করেছে, নির্বিচারে গুলি চালিয়ে মানুষ হত্যা করেছে। নেতাকর্মীদের গণগ্রেফতার, বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় লুট, সংবাদ সংগ্রহে সাংবাদিকদের বাধা দিয়ে এক নারকীয় পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল। আমরা গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে অবিলম্বে গ্রেফতারকৃত সব নেতাকর্মীদের মুক্তি দাবি করছি। উস্কানিমূলক আচরণের মধ্য দিয়ে সরকার শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে সংঘাতের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে সরকারকে নিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, আমরা আগামী ১০ ডিসেম্বর বিএনপির গণসমাবেশের প্রতি সমর্থন জানাচ্ছি। আগামীতে দখলদার, খুনি, ভোট ডাকাত সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধী রাজনৈতিক শক্তির সাথে যুগপৎ বৃহত্তর গণ আন্দোলন গড়ে তুলবে গণতন্ত্র মঞ্চ।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ূম, গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুর, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের সভাপতি শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলুসহ অন্যান্যরা।