দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, বাংলাদেশে এখনো এমন কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি যে মার্কিন নাগরিকদের জন্য সতর্কতা জারি করতে হবে। বাংলাদেশকে নিয়ে এবং সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক হারে মিথ্যাচার করা হয়।

বৃহস্পতিবার দুপুরে কক্সবাজারের ইনানীতে আন্তর্জাতিক ফ্লিট রিভিউ (আইএফআর) ২০২২-এর অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কিছুটা উত্তপ্ত হওয়ার প্রেক্ষাপটে বুধবার অবস্থানরত মার্কিন নাগরিকদের চলাচলে সতর্কতা অবলম্বন করার নোটিশ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আগে দিয়েছিল (নাগরিকদের চলাচলে সতর্কতা) যুক্তরাজ্য, আপনিই বলেন, দেশের অবস্থা কি খারাপ? দেশের অবস্থা মোটেই খারাপ না। এটা আতঙ্ক ছড়ানোর জন্য কেউ কেউ দিয়ে থাকেন। যারা দিয়ে থাকেন তারা কোনো আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য কোনো কাজকর্ম করছেন কি না, আমরা জানি না। আমাদের ইনফরমেশন অনুযায়ী দেশে কোনো আতঙ্কের শঙ্কা নেই।

তিনি বলেন, ঢাকায় কোনো ঘটনা ঘটার আগেই তা ওয়াশিংটন খবর পেয়ে যায়। হোয়াইট হাউজে জানানো হয়। এ কাজে বাংলাদেশি ‘একজন সাংবাদিক’ নিযুক্ত আছেন। হোয়াইট হাউজ ও ইউএন দুই জায়গাতেই ওনার এক্সেস আছে। বাংলাদেশে কিছু হলেই তিনি সঙ্গে সঙ্গে প্রশ্ন করেন। অনেক ক্ষেত্রেই ওই সাংবাদিক কূটনৈতিকদের প্রশ্ন এবং উত্তরও লিখে মেসেজ দেন। তবে তারা যেটা চায়, সংঘাত না হওয়া, সেটা আমরাও চাই। আমরা সর্বোচ্চ ধৈর্য ধারণ করি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কোনো রাস্তায় তারা বিনা অনুমতিতে সমাবেশ করতে দেয় না। হোয়াইট হাউজের সামনে বড় জনসভায় তারা রাজি হবে না। নিউইয়র্কের ম্যানহাটনের রাস্তায় সভা করার ক্ষেত্রে দে উইল নট অ্যালাউ। একশজনের বেশি লোক সমবেত হলেই অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক। তাদের (যুক্তরাষ্ট্রের) আইন আরও বেশি কঠোর। নিরাপত্তা নিতে হয়, ইন্সুরেন্স করতে হয়।

মোমেন বলেন, আমরা আমাদের পথচারীদের বাধা দিতে চাই না, বিঘ্ন দিতে চাই না। তারা (বিএনপি) আন্দোলন করতে চান, সম্মেলন করতে চান, নিশ্চয়ই হলের ভেতরে করতে পারেন, মাঠের মধ্যেও করতে পারেন। সরকার রাজি, কারণ বাংলাদেশের সব লোকের কথা বলার অধিকার আছে। সরকারের বিরুদ্ধে যে যেমন পারে, ইচ্ছামতো মিথ্যাচার করে যাচ্ছে। ফেসবুক, ইউটিউব খুললেই তা দেখা যায়। এসব ক্ষেত্রে সরকার কখনোই কাউকে আক্রমণ করেনি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা শান্তি চাই। কোনো ধরনের সংঘাত চাই না। কিন্তু আমাদের সরকারের বিরোধী পক্ষ সব সময়ই একটা উসকানি দিয়ে সংঘাত সৃষ্টিতে লিপ্ত। তারা চায় লাশ পড়ুক। লাশ পড়লে তাদের সুবিধা হয়। ‘পাবলিকের সেন্টিমেন্ট’ পায়।

মন্ত্রী বলেন, সেদিন যখন যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারি অব স্টেট ব্লিংকেন আসেন, তাকে আমি জিজ্ঞাসা করি, আপনাদের তো অনেক বড় দেশ, নানাভাবে বিভিন্ন মানুষকে সহায়তা করেন, আপনারা এখানকার ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে, এসব নির্যাতিত লোককে, যাদেরকে তাদের দেশ বিতাড়িত করেছে, তাদের নিয়ে যাচ্ছেন না কেন।

তিনি সেদিন বিষয়টি দেখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। পরে তিনি জানিয়েছেন, শুধু তারাই কিছু নেবেন না। তাদের বন্ধু বড় দেশগুলোকেও কিছু নিয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করবেন। মিয়ানমার বলেছে, ২০১৬-১৭-এর পরে যারা এসেছে, তাদের শুধু নিয়ে যাবে, আগের কাউকে নিয়ে যাবে না। এগুলো প্রায় ৩৩ হাজার। আমরা (যুক্তরাষ্ট্রকে) বলেছি যে, সেগুলোকে আপনারা নিয়ে যান।

তিনি বলেন, ফলোআপ হিসাবে যে ভদ্রমহিলা এসেছেন, উনি নিজেও একজন অভিবাসী। তিনি বললেন, আমি নিয়ে যাব। এর মধ্যে ৬২ জনের একটি লিস্ট হয়েছিল। ২৪ জনকে প্রথম কিস্তিতে নেওয়া হচ্ছে। তারা আশা করেন যে তারা এ বছরে (আমেরিকা) সারা পৃথিবী থেকে ১ লাখ ২৫ হাজার লোক নেবেন।

কতজন বাংলাদেশ থেকে নেবেন বলেননি। এশিয়া মহাদেশ থেকে তারা ৩০/৩৫ হাজার নিতে পারে। কানাডায়ও কিছু নেবে। কিন্তু এটা কোনো সমাধান নয়। আসল সলিউশন হচ্ছে, রোহিঙ্গাদের তার নিজের দেশে ফেরত নেওয়া। আমরা সেই লক্ষ্যেই কাজ করছি। আমরা যুক্তরাজ্যকেও বলেছি, তোমরা এক লাখ লোক নিয়ে যাও।