দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: গণ-অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুর ওরফে ভিপি নুরের সাম্প্রতিক একটি বক্তব্য নিয়ে বিএনপি ও গণতন্ত্র মঞ্চের বৈঠকে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে। মাঠের আন্দোলন ক্ষতিগ্রস্ত হয়- এমন বক্তব্য পরিহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বৈঠক থেকে। সরকার যাতে যুগপৎ আন্দোলনে বিভক্তির সৃষ্টি করে ফায়দা লুটতে না পারে সেদিকে সতর্ক থাকার কথা বলেছেন নেতারা। 

 

বৈঠকে আগামীর কর্মসূচি নিয়ে বিশদ আলোচনা হলেও গণমাধ্যমে আগেভাগে জানাতে নিষেধ করা হয়েছে। কারণ হিসেবে নেতারা জানান, সরকার আগে কর্মসূচি জেনে গেলে ১০ ডিসেম্বরের মতো ভুল করে দেবে। এ ছাড়া কর্মসূচিতে জমায়েত বাড়ানোয় জোর দেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার বিকালে গুলশানে গণতন্ত্র মঞ্চের লিয়াজোঁ কমিটির সঙ্গে বিএনপির ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক সূত্রে এসব খবর জানা গেছে। বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সমমনা ৫৪ দল ও সংগঠনের অনেকেই সরকারের কাছ থেকে টাকা-পয়সা নিচ্ছে বলে সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশ্যে বক্তব্য দেন গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা নুরুল হক নুর। তখন তিনি বলেন, বিরোধী জোটের শরিকদের কেউ কেউ সরকারের সঙ্গেও লিয়াজোঁ করছেন এবং আসন ভাগাভাগি করে ঐকমত্যে পৌঁছে যাচ্ছেন।

নুরুল হকের ওই বক্তব্যের পর তাকে উদ্দেশ করে মঞ্চের সমন্বয়ক মাহমুদুর রহমান মান্না গণমাধ্যমে বলেন, এমন অপরিপক্ক বক্তব্য না দিয়ে কে বা কারা টাকা নিচ্ছে; তা প্রকাশ করুন। এ নিয়ে গণতন্ত্র মঞ্চসহ শরিকদের মধ্যে অস্বস্তি-সন্দেহ তৈরি হয়। এ নিয়ে মঞ্চের বৈঠকেও নেতারা বিষোদ্গার করেন। ব্যাখ্যা হিসেবে নুরুল হক নুর দুঃখ প্রকাশ করে জানান, তার বক্তব্য সঠিকভাবে গণমাধ্যমে উপস্থাপন হয়নি। এমনকি তিনি যে প্রসঙ্গে বলতে চেয়েছেন, তা সেভাবে উঠে আসেনি।
জানা গেছে, বৈঠকে নুরুল হক নুরের ওই বক্তব্য নিয়ে বিএনপি ও মঞ্চের একাধিক নেতা কথা বলেছেন। তারা নুরকে পরোক্ষভাবে সতর্ক করেছেন। তবে নুর তার পূর্বের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দেননি। শুক্রবার সন্ধ্যায় বৈঠক থেকে বেরিয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক সময়ের আলোকে বলেন, পার্টিকুলার কোনো ব্যক্তি নুরের বক্তব্য নিয়ে আলোচনা বা সমালোচনা করেননি। সবাই কমবেশি এ নিয়ে কথা বলেছেন। এমন বক্তব্যে আন্দোলন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই এসব ব্যাপারে আরও দায়িত্বশীল ও কৌশলী আচরণ করতে হবে। কারণ সরকার আন্দোলন নিয়ে নানাভাবে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।
সমালোচনা হলেও নুরুল হক নুর বৈঠকে তার বক্তব্যের কোনো ব্যাখ্যা দেননি বলে জানান রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম। তিনি সময়ের আলোকে বলেন, বিএনপি নেতারা নুরের বক্তব্য নিয়ে কথা বলেছেন। একই সঙ্গে সতর্ক করেছেন সবাইকে।
পরে গণ-অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক সময়ের আলোকে বলেন, মতবিরোধ থাকলে যাতে নিজেদের মধ্যে মিটিয়ে ফেলি, গণমাধ্যমে না জানাই। কারণ সরকার এতে ফায়দা লোটে। তার বিতর্কিত বক্তব্য নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়নি বলে দাবি করেন তিনি। নুর বলেন, বিএনপির ১০ দফা ও গণতন্ত্র মঞ্চের ১৪ দফাকে একটি কমন পর্যায়ে আনার কাজ চলছে। আগামীর কর্মসূচি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। তবে গণমাধ্যমে আগে জানিয়ে দিলে সরকার ১০ ডিসেম্বরের মতো ভ-ুল করে দেবে।
আর গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি সময়ের আলোকে বলেন, সরকার আন্দোলনে বিভক্তি তৈরি করতে চায়। ভবিষ্যতে আমাদের আরও সতর্ক থাকার কথা বলা হয়েছে বৈঠকে। তিনি বলেন, নব্বইয়ের গণ-আন্দোলনের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে ছাত্র ও যুবকদের রাজপথে সম্পৃক্ততা বাড়ানোর প্রতি জোর দেওয়া হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় রোডমার্চ নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে।
সাকি জানান, বিএনপি এবং গণতন্ত্র মঞ্চের দাবি, দফা এবং রাষ্ট্র মেরামতের প্রস্তাব নিয়ে একটি যৌথ ঘোষণাপত্র তৈরি হচ্ছে। শিগগিরই সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক কর্মসূচিভিত্তিক ঘোষণাপত্র তৈরি করা হচ্ছে এবং এটিই হবে তাদের যুগপৎ আন্দোলনের ভিত্তি।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়াও দলটির লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, বরকত উল্লাহ বুলু ও মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম রবসহ শীর্ষ নেতারা।
পরে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকমের গল্প তৈরি করবে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি যে জোটের খেলা শুরু করেছে, তা বেশিদিন টিকবে না। তিনি বলেন, কী করবে, কী বলবে, কী কর্মসূচি দেবে- এ নিয়ে ৫৪ দল, ৫৪ পদ, ৫৪ মত। এ দল ছোট হয়ে আসবে, বেশি দেরি নেই। বামে-ডানে একাকার। অতি বাম, অতি ডান। এ দৃশ্যপট থাকবে না। গতবারও দেখেছি। ২১ দলীয় জোট। শেষ পর্যন্ত জোটের নেতা কামাল হোসেনই আউট।