দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: চট্টগ্রামে পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, বেলা’র অন্যান্য কর্মকর্তা ও সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণ, তাদের বহনকারী গাড়ি আটকে রাখার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়েছেন দেশের ৫২ জন মানবাধিকার ও পরিবেশ অধিকার কর্মী। শনিবার (২৮ জানুয়ারি) গণমাধ্যমে পাঠানো এক যৌথ বিবৃতি তিন দফা দাবিসহ এই ক্ষোভ ও নিন্দা প্রকাশ করেন তারা।

বিবৃতিতে ঘটনা উল্লেখ করে জানানো হয়, গত ২৬ জানুয়ারি চট্টগ্রাম নগরে আকবরশাহ এলাকায় বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের গাড়ি লক্ষ্য করে ঢিল ছোঁড়া হয়। এ সময় তার সফরসঙ্গী বেলার কর্মকর্তা ও সাংবাদিকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়। বেলা দেড়টার দিকে আকবরশাহ থানাধীন লেকসিটি আবাসিক এলাকায় পাহাড় কেটে ভরাট করা ছড়া পরিদর্শনের সময় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জহুরুল আলম ওরফে জসিমের নেতৃত্বে তার অনুসারী দুর্বৃত্তরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। ঘটনার সময় তারা ছুরি কিরিচ, দা প্রভৃতি দেশীয় ধারালো অস্ত্র বহন করছিল। এর আগে কমিশনারের লোকজন প্রতিনিধি দলের গাড়িটি আটকে রেখেছিল। পরে পুলিশ এসে গাড়ি ছাড়িয়ে নেয়।

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, উত্তর পাহাড়তলীতে অবৈধ পাহাড় কাটার অভিযোগে অভিযুক্ত কাউন্সিলর জসিমের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদফতর ইতোমধ্যে একটি মামলাও দায়ের করেছে আকবর শাহ থানায়। এরআগেও ২০১৫ সালে তার বিরুদ্ধে আরো একটি মামলা করেছিল পরিবেশ অধিদফতর। এ আক্রমণের ঘটনার ব্যাপারেও আকবরশাহ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
পরিবেশ, মানবাধিকার ও অধিকার ভিত্তিক সংগঠনগুলো প্রায়শই এ ধরনের অভিযোগের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট এলাকা পরিদর্শন করে প্রকৃত ঘটনা সংবাদ মাধ্যম এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট তুলে ধরে তাদের নাগরিক দায়িত্ব পালন করে আসছে উল্লেখ করে যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, তাই অধিকার ভিত্তিক সংগঠনের উপর এ ধরনের ন্যক্কারজনক হামলার ঘটনা উদ্বেগজনক এবং আমরা এ ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানাচ্ছি। রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে নাগরিকদের চলাফেরা ও নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার। তাই রাষ্ট্রকে সকল নাগরিকের এই অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
যৌথ বিবৃতিতে তিন দফা দাবি জানিয়ে বিশিষ্টজনেরা বলেন, এ প্রেক্ষিতে আমাদের সুস্পষ্ট দাবি হচ্ছে- ক. এ ঘটনার নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে চিহ্নিত অপরাধীদের গ্রেফতার ও দ্রুত বিচারের মাধ্যমে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। খ. এ ঘটনার অন্তরালে যারা আছে তাদেরও চিহ্নিত করে গ্রেফতার ও কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। গ. ভবিষ্যতে কোন দখলদার, পাহাড়খেকো, নদীখেকো ও ভূমি দস্যু যেন এ ধরণের ঘটনা ঘটাতে সাহস না দেখায় তার জন্য সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী বিশিষ্টজনেরা হলেন- মানবাধিকারকর্মী ও মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন চেয়ারপার্সন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল, অর্থনীতিবিদ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ওয়াহেদউদ্দিন মাহমুদ, পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান, গণ স্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে. চৌধুরী, ’নিজেরা করি’র সমন্বয়কারী এবং এএলআরডির চেয়ারপার্সন খুশী কবির, মানবাধিকার কর্মী ড. হামিদা হোসেন, সাবেক মন্ত্রীপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সভাপতি এবং সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জেড আই খান পান্না, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাণা দাশগুপ্ত, অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (এএলআরডি) নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ, নারীপক্ষ সদস্য শিরিন হক, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং রিসার্স ফেলো ড. স্বপন আদনান, সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য
কাজল দেবনাথ, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সহ-সভাপতি ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তবারক হোসেইন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত, কবি ও লেখক রাহনুমা আহমেদ, ব্লাস্টের অনারারি নির্বাহী পরিচালক সারা হোসেন, সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, আলোকচিত্রী ও সমাজকর্মী ড. শহিদুল আলম প্রমুখ।