দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা জানানোর পর প্রবীণ সাংবাদিক এ বি এম মূসার মৃতদেহ তার গ্রামের বাড়ি ফেনী জেলার ফুলগাজীর কুতুবপুরে নেওয়া হবে। সেখানে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে বলে জানিয়েছেন তার ছেলে ড. নাসিম মূসা। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় এ বি এম মূসার মৃতদেহ ল্যাবএইড হাসপাতালের হিমঘর থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবে নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

ড. নাসিম মূসা সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার বাবা প্রেস ক্লাবকে তার দ্বিতীয় বাড়ি মনে করতেন। আমাদের পারিবারিক অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ ফেলে তিনি প্রেস ক্লাবে বসে থাকতেন। তিনি প্রেস ক্লাবে না গিয়ে থাকতে পারতেন না।’

প্রথমা প্রকাশনা থেকে প্রকাশিতব্য নিজের আত্মজীবনীতেও এ বি এম মূসা তার এই দ্বিতীয় বাড়ির কথা উল্লেখ করে লিখেছেন, ‘ঢাকা শহরে ভাড়া বাড়িতে থাকতাম, তারপর নিজের বাড়ি হলো। বাড়ির নাম রিমঝিম। সেই বাড়ির বয়স ৪১ বছর। আমার একটি দ্বিতীয় বাড়ি আছে। তারও একটি নাম আছে। নামটি হচ্ছে প্রেস ক্লাব।’

এই দ্বিতীয় বাড়িতে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা জানানোর পর দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর বাংলাদেশের সাংবাদিকতার পথিকৃৎ এ বি এম মূসাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করার জন্য নিয়ে যাওয়া হবে তার গ্রামের বাড়িতে। ফেনীর মিজান ময়দানে বাদ মাগরিব তৃতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর তার মৃতদেহ গ্রামের বাড়ি ফুলগাজীর কুতুবপুরে নেওয়া হবে এবং পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে। বুধবার বাদ মাগরিব ইকবাল রোড মাঠে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

বুধবার দুপুর ১টা ১৫ মিনিটে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন ৮৩ বছর বয়সী দেশবরেণ্য সাংবাদিক এ বি এম মূসা। ল্যাবএইড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, এ বি এম মূসা অনেক দিন ধরেই নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। সর্বশেষ ২৯ মার্চ তিনি এই হাসপাতালে অধ্যাপক ডা. বরেন চক্রবর্তীর তত্ত্বাবধানে ভর্তি হয়ে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন ছিলেন। স্বাস্থ্যের অবনতি হলে সোমবার মধ্যরাতে হাসপাতালের সিসিইউতে (হৃদরোগের জন্য বিশেষ পরিচর্যা কেন্দ্র) তাকে লাইফ সাপোর্টে (কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস ব্যবস্থা) রাখা হয়।

বয়স আর শারীরিক দুর্বলতা সঙ্কটময় পরিস্থিতির অন্যতম কারণ। তার শরীরে রক্ত স্বাভাবিক কাজ করছিল না। বারবার রক্ত দিলেও তার দেহে রক্তকণিকা ভেঙে যাচ্ছিল। মাইলো ডিসপ্লাস্টিক ডিনড্রম রোগের কারণে তার রক্ত জমাট বাঁধছিল না। বেশি রক্ত দিয়েও কাজ হয়নি। সেপটিসেনিয়ার কারণে তার শরীরে দ্রুত রোগ ছড়িয়ে পড়েছিল। হৃদস্পন্দন ছিল থেমে থেমে, যা মাত্র ১৫ থেকে ২০ শতাংশ। কিডনিও কাজ করছিল না। ফুসফুসে সংক্রমণ ছিল। এ ছাড়া হার্টে বাইপাস করা এবং পেসমেকার বসানো ছিল।

এ বি এম মূসার শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি না হওয়ায় বুধবার দুপুর ১টা ১৫ মিনিটে লাইফ সাপোর্ট খুলে নেওয়া হয় বলে জানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

তিনি স্ত্রী-সন্তানসহ অসংখ্য আত্মীয়স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। পারিবারিক জীবনে এ বি এম মূসার তিন মেয়ে মরিয়ম সুলতানা, পারভীন সুলতানা ও শারমীন মূসা এবং এক ছেলে নাসিম মূসা। স্ত্রী সেতারা মূসা এ দেশের নারী সাংবাদিকতার অন্যতম পথিকৃৎ।

সাংবাদিকতায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় এ বি এম মূসা বিভিন্ন পুরস্কার অর্জন করেছেন। এর মধ্যে একুশে পদক (১৯৯৯), জেফারসন ফেলোশিপ (১৯৭০), কমনওয়েলথ প্রেস ইউনিয়ন ফেলোশিপ (১৯৬১) উল্লেখযোগ্য।

এ বি এম মূসার মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া শোক জানিয়েছেন। শোক জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন।

(দ্য রিপোর্ট/এসআর/এএস/এইচএসএম/এজেড/এপ্রিল ১০, ২০১৪)