দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক :ভারতীয় ১০০ কোটি ডলার ঋণ (২০ কোটি ডলার অনুদান) পর্যালোচনা করতে বাংলাদেশ-ভারত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

এতে ভারতের পক্ষে আট সদস্যের প্রতিনিধি দলে নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব অলক কে সিনহা এবং বাংলাদেশের পক্ষে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) যুগ্ম সচিব এশিয়া শাখার প্রধান আসিফ উজ জামান।

পঞ্চমবারের মতো এ দ্বি-পাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো। বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং প্রকল্প পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে আসিফ উজ জামান দ্য রিপোর্টকে জানান, প্রকল্প বাস্তবায়নের অগ্রগতিতে ভারতীয় প্রতিনিধি দল সন্তোষ প্রকাশ করেছে। এখন পর্যন্ত ১১ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলার ছাড় হয়েছে। অনুদান থেকে ১৫ কোটি মার্কিন ডলারের চেক বাংলাদেশকে দিয়েছে ভারত। তিনি জানান, আগামী এপ্রিল মাসে ভারতে অনুষ্ঠিত হবে পরবর্তী পর্যালোচনা বৈঠক। ইতোমধ্যেই ৪টি প্রকল্প শেষ হয়েছে এবং ততদিনে আরো ৪টি প্রকল্পের বাস্তবায়ন শেষ হবে বলে আশা করছি।

ভারতীয় ঋণের অর্থে হাতে নেওয়া প্রকল্পগুলোর ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে। ইতোমধ্যে শেষও হয়েছে ৪টি প্রকল্প। বাকিগুলো বাস্তবায়নের বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। অর্থনেতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে বাস্তবায়ন অগ্রগতি ও অর্থব্যয় পর্যালোচনা করতে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ সুত্র জানায়, প্রধানত তিনটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে, প্রকল্প বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনা, বাণিজ্যিক চুক্তি হয়েছে এমন প্রকল্পের পণ্য সরবরাহের সময়সীমা (সিডিউল) ও বর্তমান অগ্রগতি এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে যদি কোনো সমস্যা থাকে তা নিয়ে আলোচনা করা।

সুত্র জানায়, ২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরের সময় ১১ জানুয়ারি ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরদিন ১২ জানুয়ারি ঘোষণা দেওয়া হয় ৫০ দফা ইশতেহার। সেখানে বাংলাদেশকে ১০০ কোটি মার্কিন ডলার প্রতিশ্রুতি দেয় ভারত সরকার। ওই বছরের ৭ আগস্ট ভারতের এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। পরবর্তীতে এই ১০০ কোটি ডলারের মধ্যে ২০ কোটি ডলার অনুদান দেওয়ার ঘোষণা দেন ভারতের তখনকার অর্থমন্ত্রী বর্তমানে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জী।

ভারতীয় ঋণের প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি সম্পর্কে ভারতীয় প্রতিনিধি দলকে জানানো হযেছে যে, মোট ১৬টি প্রকল্পের মধ্যে ইতোমধ্যেই বাস্তবায়ন কাজ শেষ হয়েছে ৪টির। এগুলো হচ্ছে, ডেকার, ডাবল ডেকার ও এসি-নন এসি বাস সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় সবগুলো বাস সরবরাহ করেছে ভারত। ১৬৫ ব্রডগেজ (বিজি) ট্যাংক ওয়াগন সংক্রান্ত প্রকল্পটির আওতায় সবগুলো ওয়াগন সরবরাহ করেছে ভারত। ১০ লোকোমোটিভ সংক্রান্ত প্রকল্পের আওতায় সবগুলো লোকোমোটিভ এসেছে বাংলাদেশে এবং ৮১টি বগিট্যাংক ওয়াগন সংক্রান্ত প্রকল্পটিও শেষ হয়েছে।

এছাড়া প্রকিউরমেন্ট অব ১৬ লোকোমোটিভ প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যেই ৬টি লোকোমোটিভ এসেছে। বাকি দশটি প্রতিমাসে দুটি করে সরবরাহ করবে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। সে হিসেবে ৫ মাসের মধ্যেই এটিও শেষ হবে।

অন্যান্য প্রকল্পগুলোর অগ্রগতির অবস্থা হচ্ছে, ১৭০ ফ্লাট ওয়াগন সংক্রান্ত প্রকল্পটি ২০১৪ সালের এপ্রিল মাসের মধ্যেই সবগুলো চলে আসবে বাংলাদেশে। বিএসটিআই শক্তিশালীকরণ প্রকল্পটিতে শীঘ্র্ই বাণিজ্যিক চুক্তি হবে। এরপরই টেন্ডার প্রক্রিয়ায় যাবে। খুলনা-মংলা পোর্ট সংক্রান্ত প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ চলছে। দ্বিতীয় ভৈরব ও তিতাস সেতু নির্মাণ সংক্রান্ত প্রকল্পটির জন্য দুটি আলাদা বাণিজ্যিক চুক্তি হয়েছে এবং থার্ড-ফোর্থ লাইন ডুয়েল গেজ সংক্রান্ত প্রকল্পটির জন্য পরামর্শক নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে।

(দ্য রিপোর্ট/জেজে/এইচএসএম/ডিসেম্বর ০২, ২০১৩)