দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়ার সঙ্গে সোমবার দেখা করতে পারেননি ব্যবসায়ী নেতারা। এ সময় তারা বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবিহ উদ্দিন আহমেদের কাছে একটি স্মারকলিপি দেন।

ব্যবসায়ী নেতারা হরতাল-অবরোধের আওতামুক্ত রেখে এক্সপোর্ট ইমপোর্টের সুযোগ চান। তাই সোমবার রাত ৯টা ৫০ মিনিটে বিএনপির গুলশান কার্যালয়ে পোশাক মালিকদের একটি প্রতিনিধিদল খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে আসেন। দুই পৃষ্ঠার স্মারকলিপিতে পোশাকশিল্পের বিদ্যমান সমস্যার কথা তুলে ধরা হয়েছে। এর আগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সন্ধ্যায় গণভবনে সাক্ষাৎ করার পর ব্যবসায়ীরা নেতারা গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আসেন।

নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক সহিংসতা বন্ধের দাবি জানিয়ে তৈরি পোশাক ব্যবসায়ীরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধী দলীয় নেতাকে এই স্মারকলিপি দিলেন।

স্মারকলিপি গ্রহণ করে সাবিহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বিরোধী দলীয় নেতার কাছে স্মারকলিপিটি আমি আজই পৌঁছিয়ে দেবো। অবরোধ কর্মসূচির কারণে তিনি কার্যালয়ে আসতে পারেননি।’

তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘এই শিল্পে বিএনপির ব্যাপক অবদান রয়েছে। বিরোধী দলীয় নেতা বর্তমান পোশাকশিল্পের সমস্যা সম্পর্কে অবহিত আছেন। রাজনৈতিক চলমান সংকট সমাধান করা সরকারের জন্য এক মিনিটের ব্যাপার। আমরা একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। এর থেকে বেশি কিছু নয়। ’ বিএনপির পক্ষে সাবিহ উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে অর্থবিষয়ক উপসম্পাদক জি এম ফজলুল হক উপস্থিত ছিলেন।

চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ব্যবসায়ীদের স্বাগত জানিয়ে সভাকক্ষে বসানো হয়। সেখানে নেতৃবৃন্দ বিরোধী দলীয় নেতার সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য সাবিহ উদ্দিন আহমেদের প্রতি অনুরোধ জানান।

বিজেএমইএ’র সাবেক সভাপতি আনিসুর রহমান সিনহা বলেন, ‘আমরা অস্তিত্ব রক্ষার জন্য বিরোধী দলীয় নেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এসেছি। ত্রিশ বছরের প্রচেষ্টায় যে শিল্প পরিবার গড়ে উঠেছে, তা আজ ধ্বংসের মুখে। এটা আমাদের বাঁচা-মরার লড়াই। সাবিহ সাহেবকে বলব, আপনি স্মারকলিপিটি নিয়ে বিরোধী দলীয় নেতার কাছ থেকে জবাব নিয়ে আসুন। সেজন্য আমরা এখানে অপেক্ষা করতে চাই।’

বিজেএমইএ‘র সভাপতি আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা আজ নিঃস্ব হয়ে গেছি। বায়াররা আমাদের থ্রেট দিচ্ছে। আমরা ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করতে পারছি না। আগামীতে শ্রমিকদের বেতন দেওয়া সম্ভব হবে না। সার্বিকভাবে আমরা গোটা পোশাক পরিবার আজ রাস্তায় বসতে যাচ্ছি। আমরা পথের ফকির ও জীবন্ত লাশ হতে চলেছি। এ থেকে পরিত্রাণ চাই। অনেক আশা নিয়ে আমরা বিরোধী দলীয় নেতার কাছে এসেছি। তাকে আমাদের দুঃখের কথাগুলো বলতে চাই।’

জবাবে সাবিহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এই শিল্পের সঙ্গে বিএনপির অনেক সম্পর্ক ও অবদান রয়েছে। বিরোধী দলীয় নেতা আপনাদের আসার আগে একটি বিবৃতিতে এই পোশাকশিল্পের বিষয়টি তুলে ধরেছেন। তিনি আপনাদের সমস্যা সম্পর্কে সম্যক অবহিত রয়েছেন।’

এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন বলেন, ‘আমরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছি। বিরোধী দলীয় নেতার সঙ্গে দেখা করতে চাই। আমাদের সমস্যাগুলো তার সামনে তুলে ধরতে চাই।’

সাবেক সভাপতি আনিসুল হক বলেন, ‘আমরা রাজনৈতিক অবস্থা উপলব্ধি করি। পোশাকশিল্প হরতাল-অবরোধের আওতামুক্ত করা হবে- এই নিশ্চিয়তাটুকু আমরা বিরোধী দলীয় নেতার কাছ থেকে চাই। অতীতে বিএনপি গার্মেন্টস শিল্পকে হরতালের আওতামুক্ত রেখেছিলো। আমরা চাই গার্মেন্টস শিল্পের যানবাহন আসা-যাওয়ার নিশ্চয়তা।’

সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের গার্মেন্টস শিল্পের কাঁচামাল পোর্টে স্তুপ হয়ে আছে। এগুলো যাতে আসতে পারে এবং রফতানি মালামাল পোর্টে যেতে পারে তার নিশ্চয়তা চাই। আমরা চার মাস কারখানা চালানোর গ্যারান্টি চাই। প্রয়োজনে চার মাস পরে কারখানা বন্ধ করে দিবো।’

বিজেএমইএ’র সাবেক সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, ‘পোশাকশিল্পে যে নাশকতা চলছে, এটি একটি মহলবিশেষের পরিকল্পিত তৎপরতা। স্ট্যান্ডার্ড গার্মেন্টস পুড়ে গেছে। এরপর ডিবিএল গার্মেন্টসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। গত ১৪ দিন ধরে অবরোধ কর্মসূচি ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে এই শিল্প ব্যাপকভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছে। এর সমাধান আমরা চাই।’

জবাবে সাবিহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘স্ট্যান্ডার্ড গার্মেন্টসের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন। আমি গামের্ন্টসের মালিক মোশাররফ হোসেনকে সহানুভুতি জানাই। আমাদের নেত্রীও ঘটনার পর ব্যথিত হয়েছেন। কিন্তু এ ঘটনা কারা ঘটিয়েছে তা আপনারা সবাই জানেন।’

বিজিএমইএ‘র সভাপতি আতিকুল ইসলামের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলের অন্যান্যদের মধ্যে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ, সাবেক সভাপতি আনিসুল হক, এ কে আজাদ, বিজেএমইএ’র সাবেক সভাপতি আনিসুর রহমান সিনহা, আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী পারভেজ, আব্দুস সালাম মুশের্দী, শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, বিটিএমইএ’র সভাপতি জাহাঙ্গীর আল আমীন, বিকেএমইএ’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুল হাতিম, বিজেএমইএ’র সহসভাপতি শহীদুল্লাহ আজীম, এস এম মান্নান কচি, পরিচালক আজমত রহমান, সম্প্রতি অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত স্ট্যান্ডার্ড গার্মেন্টসের চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেনসহ ২০ জন নেতা উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি এগিয়ে নিলেও বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিরোধী দল তফসিল প্রত্যাখ্যান করে প্রথম দফায় ৭১ ঘণ্টার অবরোধের পর শনিবার সকাল থেকে ১৩১ ঘণ্টার একটি কর্মসূচি দিয়েছে।

টানা অবরোধে সারাদেশে ব্যাপক সহিংসতায় এ পর্যন্ত অন্তত ২৮ জন নিহত হয়েছেন। রফতানি পণ্য পরিবহন বাধাগ্রস্ত হওয়ায় মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়েছে তৈরি পোশাকখাতসহ দেশের অর্থনীতি।

এই পরিস্থিতিতে প্রধান দুই দলের সমঝোতার জন্য এর আগে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে দুই নেত্রীর সঙ্গে বৈঠক করা হলেও কোনো সমাধান আসেনি।

(দ্য রিপোর্ট/ ডব্লিউএস/ডিসেম্বর ০২, ২০১৩)