সাতক্ষীরা সংবাদদাতা : ‘ছোট মেয়ে তানিয়ার চারদিন ধরে জ্বর। ২৬ অক্টোবর থেকে ১৮ দলের দেশব্যাপী অবরোধ ও হরতালের ফলে বন্দরের আমদানি-রফতানি বন্ধ ছিল। যেকোনো সময়ে ভারতীয় গাড়ি ঢুকতে পারে- এ আশায় প্রতিদিন বন্দরে এসেছি। কাজ না হওয়ায় টাকার অভাবে দুবেলা ঠিকমতো খেতে পারিনি। ফলে মেয়ের ওষুধ কিনতে পারিনি। নিরূপায় হয়ে পাশের এক বৃদ্ধার কাছ থেকে ঝাড়ফুঁক দিয়ে নিয়েছি। তাতেও কোনো লাভ হয়নি। শুক্রবার হলেও বন্দরে আমদানি-রফতানি হওয়ায় কাজ শেষে সন্ধ্যায় ওষুধ কিনে বাড়ি ফিরব।’

সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরে শুক্রবার সকালে শুকনা মরিচের বস্তা মাথায় নিয়ে এভাবেই বলেন ১১৫৯ হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়নের শ্রমিক আনিসুর রহমান।

ভোমরা স্থলবন্দরের শ্রমিক আব্দুল হামিদ, আব্দুল মাজেদ ও সাঈদুর রহমান জানান, এ বন্দরের ওপর নির্ভরশীল চারটি শ্রমিক ইউনিয়নের পাঁচ হাজারের বেশি হ্যান্ডলিং শ্রমিক রয়েছেন। যেভাবে আমদানি-রফতানি হয় তাতে একদিন পরপর কাজ পাওয়া যায়। ফলে এখানকার শ্রমিকদের অভাব নিত্যদিনের সঙ্গী।

অবরোধ ও হরতালের কারণে ২৬ অক্টোবর থেকে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত (একটি শুক্রবার ব্যতীত) টানা ১১ দিন কাজ না চলায় তারা বেকার হয়ে পড়েছেন। অনেকেই পরিবারের সদস্যদের মুখে আহার তুলে দিতে মাঠে ধানকাটার কাজ করেছেন।

ভোমরা বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি পরিতোষ কুমার ঘোষ জানান, শুধু চারটি হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়ন নয়, তাদের সংগঠন ছাড়াও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, ভোমরা ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনসহ কয়েকটি সংগঠনের ১০ হাজরের বেশি শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তা অবরোধের কারণে বেকার হয়ে পড়েছেন। ফলে অভাব সবার দোরগোড়ায় কড়া নাড়ছে। দেশ ও জাতির স্বার্থে অবরোধ বা হরতাল চলাকালে ভোমরা বন্দরের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড ব্যাঘাত না ঘটানোর জন্য সব রাজনৈতিক দলের নেতাদের কাছে আবেদন জানান তিনি।

ভোমরা সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহীন মোল্লা অবরোধের প্রভাবে ভোমরা বন্দর কার্যত অচল হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন। দীর্ঘ ১১ দিন অবরোধ চলার পর শুক্রবার ছুটির দিনে আমদানি-রফতানি শুরু হওয়ায় শ্রমিকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে ভোমরা বন্দর।

ভোমরা বন্দরের সহকারী কমিশনার উত্তম কুমার বিশ্বাস জানান, অবরোধের কারণে সরকার গত ১০ দিনে কমপক্ষে ৫ কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে। ভারতের ঘোজাডাঙ্গায় দাঁড়িয়ে থাকা ২ হাজারের বেশি ট্রাক ভোমরা বন্দরে ঢোকার সুবিধার্থে শুক্রবার ছুটির দিন থাকার পরও সকাল ৯টা থেকে আমদানি রফতানি শুরু হয়েছে। নির্দিষ্ট সময় ছাড়াও অতিরিক্ত সময়ে আমদানি-রফতানির কাজ চালানো হবে বলে তিনি জানান। সেক্ষেত্রে অন্যদিনের তুলনায় রাজস্ব দুই থেকে তিনগুণ উপার্জন হবে বলে তিনি দাবি করেন।

(দ্য রিপোর্ট/আরকে/এস/এএস/ডিসেম্বর ০৬, ২০১৩)