দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: রহিমা ফুডের ৩০ জুন ২০১৩ সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদনের ওপর নিরীক্ষক শাহ আলম মনসুর অ্যান্ড কোং নিম্নলিখিত পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন।

১. টার্নওভার এবং অ্যাকাউন্টস রিসিভ্যাবল : কোম্পানি তার মোট বিক্রয়ের ৯৫ শতাংশ বিলম্বে মূল্য পরিশোধ হওয়ার ভিত্তিতে মেসার্স মোহাম্মদ ইলিয়াস ব্রাদার্স (প্রাইভেট) লিমিটেডের কাছে বিক্রি করেছে। শুধুমাত্র এ কারণে ওই কোম্পানির কাছে পাওনার (রিসিভ্যাবল) পরিমাণ ৯৭ কোটি ৭৪ লাখ ৫৯ হাজার ৯২৬ টাকা দাঁড়িয়েছে। কর্তৃপক্ষের মতামত অনুযায়ী, সম্ভাব্য ক্ষতি এড়িয়ে বাজার মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্য পাওয়ার জন্য বিলম্বে পরিশোধ করার শর্তে পণ্য বিক্রি করা হয়েছে।

লেনদেনটি চুক্তিপত্র এবং ৮৯ কোটি টাকার তারিখবিহীন নিশ্চয়তাযুক্ত চেকের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়েছে। তালিকাভুক্ত কোম্পানি হিসেবে বিক্রয়ের জন্য শুধুমাত্র একটি কোম্পানির ওপর নির্ভরতা খুব ঝুঁকিপূর্ণ এবং অস্তিত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ।

আমাদের মতামত হলো, বিষয়টি সম্পর্কে কর্তৃপক্ষের সতর্ক হওয়া এবং পরিস্থিতি প্রশমনের জন্য পথ খোঁজা উচিত।

২. উৎপাদন ক্ষমতা কাজে লাগানো : উৎপাদন ক্ষমতা ব্যবহার করার দিক থেকে কোম্পানি মানসম্মত অবস্থার তুলনায় শোচনীয় পর্যায়ে রয়েছে। কোম্পানির মোট ব্যবহার ক্ষমতা কাজে লাগানোর হার ১৯.২৪ শতাংশ, যা বিগত বছরে ছিল ১৩.০৪ শতাংশ। কোম্পানি কর্তৃপক্ষ মনে করছেন, স্থানীয় বাজারে পরিশোধিত ভোজ্যতেলের মূল্যের তুলনায় আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের মূল্য প্রতিকূল অবস্থায় থাকার কারণে ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে।

আমাদের মতামত হলো, কোম্পানির আর্থিক ভিত্তিকে মজবুত করার জন্য উৎপাদন ক্ষমতা সর্বোচ্চ মাত্রায় ব্যবহার করতে হবে।

আরও উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ৩০ জুন তারিখে পুঞ্জীভূত নেগেটিভ রিটেইন্ড আর্নিংসের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১১ কোটি ২১ লাখ ৩২ হাজার ৭৭৭ টাকা এবং স্বল্পমেয়াদী ব্যাংক ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৪ কোটি ২৮ লাখ ৮৩ হাজার ২৬১ টাকা। এসব বিষয় দায় পরিশোধ করার ক্ষেত্রে কোম্পানির অর্থবহ অনিশ্চয়তার ইঙ্গিত দেয়।

৩. বিক্রয়কৃত পণ্যের খরচ : বিক্রয়কৃত পণ্যের খরচ মোট টার্নওভারের ৯৮.১৪ শতাংশ। যা খুব বেশি এবং বিগত বছরে তার পরিমাণ ছিল ৯৭.৫৩ শতাংশ। বিক্রয়কৃত পণ্যের খরচ বেশি হওয়ার বিষয়ে কর্তৃপক্ষের ব্যাখ্যা হলো কাঁচামালের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি।

আমাদের মতামত হলো, মুনাফার ধারাবাহিকতা রক্ষা করার জন্য বাজার মূল্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ইউনিটপ্রতি দাম বাড়ানো উচিত।

৪. কর্মচারীদের মুনাফা অংশগ্রহণ তহবিল : বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬ অনুযায়ী কোম্পানির মুনাফা কর্মচারীদের মধ্যে বণ্টন করা হয়নি এবং তহবিলটি আইন অনুযায়ী গঠন করা হয়নি।

৫. আর্থিক খরচ : দেনাদারের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী ১ জুলাই ২০১২ থেকে ৩০ জুন ২০১৩ সময়ে স্বল্পমেয়াদী ঋণের ওপর ১৪ কোটি ৮৪ লাখ ৯৭ হাজার ৪৮৬ টাকা পরিমাণ সুদ আর্থিক খরচের পরিবর্তে দেনাদারের বিপরীতে চার্জ করা হয়েছে।

৬. ক্যাশ ফ্লো স্টেটমেন্ট : পরিচালন কার্যক্রম থেকে নগদ প্রবাহের অধীনে সরবরাহকারী, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও অন্যদেরকে পরিশোধ, ক্যাশ ক্রেডিট এবং পিএডির বিপরীতে আমদানি ঋণের সুদ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। একই সময়ে শেয়ারপ্রতি নেতিবাচক প্রকৃত পরিচালন নগদ প্রবাহ (১.২৯) টাকা। এই বিষয়টিও কোম্পানির 'গোইং কনসার্ন কনসেপ্ট' এর হুমকিস্বরূপ।

(দ্য রিপোর্ট/শাহ/এইচকে/ডিসেম্বর ৯, ২০১৩)